বাঁকুড়া: খাঁ-খাঁ করছে মুকুটমণিপুর। জনশূন্য গোটা এলাকা। রবিবারের বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুর দেখলে কে বলবে এখানে গত রবিবারেও তিল ধারণের জায়গা ছিল না? কে বলবে গত রবিবারেও নৌকাভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের ভিড়ে দম ফেলার ফুরসৎ পাননি মুকুটমণিপুরের নৌকাচালকরা? এক সপ্তাহের মধ্যে আমূল বদলে গেছে সেই চেনা ছবি। গোটা মুকুটমণিপুর জুড়ে আজ শুধুই শূন্যতা।
কথায় আছে বাঙালির পায়ের নিচে রয়েছে সর্ষে। শীত পড়তে না পড়তেই বেড়ানোর জন্য ভ্রমণবিলাসী বাঙালির মন কেমন করে ওঠে। গত কয়েকবছর ধরে ভ্রমণবিলাসী বাঙালির কাছে অন্যতম সেরা ‘ডেস্টিনেসন’ হয়ে উঠেছে মুকুটমণিপুর। বেড়ানোর জন্য হোক বা শীতের মিঠে রোদে পিঠ লাগিয়ে পিকনিক, জল- জঙ্গল -পাহাড়ের মুকুটমণিপুর যেন সব ক্ষেত্রেই সেরা।
তবে গত দু’বছরে বাধ সেধেছে করোনা। কিন্তু এরপরও বেরিয়েছে বাঙালি। করোনা কাঁটা সরিয়ে চলতি বছর পর্যটন মরসুম শুরু হতেই পর্যটকের ভিড়ে উপচে পড়েছিল মুকুটমণিপুরে। গত রবিবারেও এখানে ছিল ‘ঠাই নাই ,ঠাই নাই’ অবস্থা। কিন্তু সেই চেনা ছবি বদলে গিয়েছে এক লহমায়।
রাজ্য সরকার বিধিনিষেধ চালু করায় পর্যটকরা ফিরে গিয়েছেন। একের পর এক হোটেল বুকিং বাতিল হয়েছে। পিকনিকের অনুমতি না থাকায় জনপ্রাণিহীন মুকুটমণিপুর। খদ্দেরের অভাবে একের পর এক হস্তশিল্পের দোকানে ঝাঁপ নেমেছে। জলাধারের তীরে ভিড়িয়ে রাখা সজানো নৌকা ছেড়ে মাঝিরা ফিরে গিয়েছেন যে যার ঘরে। পর্যটনের ভরা মরসুমে সংসার চালানোর তাগিদে কাউকে খুঁজতে হয়েছে জনমজুরীর কাজ তো কাউকে আবার কর্মহীন দিন কাটাতে হচ্ছে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে।
এক নৌকা চালক বলেন, “আমরা অনেক সমস্যায় পড়ে গেছি। এর আগে যখন লকডাউন হয়েছে অতটাও কিছু মনে হয়নি। কিন্তু এই বছর ভেবেছিলাম সবটা ঠিক হয়ে যাবে। যেভাবে পর্যটক আসছিলেন তাতে একটু আস্বস্ত হয়েছিলাম। অনেক কষ্ট করে আমরা বোট,নৌকা কিনেছিলাম। ভেবেছিলাম এই নৌকা, বোট চালিয়ে আমরা সংসারও চালাব আবার যাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলাম তাদেরকে টাকা দিয়ে সেই ঋণ চুকিয়ে দেব। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনে আমাদের অবস্থা শোচনীয়। করোনা নয়, আমারা না খেয়েই মরে যাব। মুকুটমণিপুর পর্যন্ত পর্যটকের গাড়ি আসতেই পারছে না। প্রায় দুই থেকে আড়াইশো নৌকা চালক রয়েছে। আমাদের আর অন্য কোনও রোজগার নেই।”
স্থানীয়দের দাবি শীতের মরসুমে মুকুটমণিপুরে চলা আড়াই থেকে তিন মাসের পর্যটন ব্যবসায় প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছে এক থেকে দেড় হাজার মানুষ। তাঁদের ভিন্ন রোজগার না থাকায় এখন শুধুই হতাশার ছাপ।