অভিষেক বলেন,”শান্তিপূর্ণ অবাধ ভোট হবে। কোনও নেতার কথায় কেউ প্রার্থী হবে না। মানুষ যাঁকে চাইবে সেই প্রার্থী হবে। দরকার হলে আমি নিিজে যাব। আপনারা আমায় জানাবেন। কোন বুথে কাকে প্রার্থী হিসাবে দেখতে চান।মানুষের পঞ্চায়েত তৃণমূল করবে। যাকে মানুষ সার্টিফিকেট দেবে। সেই প্রার্থী। কারোর পা ধরে পার্থি হবে না।”
অভিষেক বলেন, “আবাস যোজনার টাকা আটকে রেখেছে। ১১ লক্ষ ৩৬ হাজারের লিস্ট যা রাজ্য কেন্দ্রকে পাঠিয়েছে, একটাও যদি দুর্নীতি হয় তাহলে তোমাদের টাকা দিতে হবে না। রাস্তার টাকা আটকে রেখেছে।”
অভিষেক বলেন, “সেচের সমস্যায় আমি সেচমন্ত্রী সঙ্গে কথা বলি। পাথ ভৌমিককে বলেছিলাম এত নদী থাকার পরেও চাাষের সমস্যা কেন হবে? আগামী দু’থেকে তিনমাসের মধ্যে সেচের জল পাবেন।”
অভিষেক বলেন, “বাচ্চা ক্রেসের কথা বলেছিলেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা বলেছিলাম। গত দুদিন আগে শ্রম মন্ত্রীর সঙ্গে কতা বলেছি। ইতিমধ্য ৭১টি ক্রেস ও ৪২ প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাজ চলছে। পুজোর মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে।”
অভিষেক বলেন, “এখানকার অনেকেই চা শ্রমিক। গত সেপ্টেম্বরে ট্রেড ইফনিয়নের সভা হয়। আমি বলে গেছিলাম ফাঁসিদেওয়া, নকশালবাড়ি, জলপাইগুড়িতে যে চা শ্রমিকেদের দৈনন্দিন মজুরি ২৩২ টাকা। আমি বলেছিলাম আন্দোলন। আমি শুনেছি শিলিগুড়িতে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। সেখানে চা বাগানের মালিকরা থাকবেন, শ্রমিক সংগঠন থাকবে, শ্রম মন্তরী থাকবে সেখােনে টাকা বাড়তে পারে। চা শ্রমিকদের পিএফ নিয়ে আন্দোলনে নেমেছি। এটা কেন্দ্রের এক্তিয়ার। রাজ্যের অধিকার নেই। আমরা তাও লড়াই করছি। এরপর ৫০ হাজার লোক নিয়ে পিএফ অফিস ঘেরাও করব।”
অভিষেক বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দু বার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ১০০ দিনের টাকার জন্য। আমরা ১ বছর ধরে অপেক্ষা করে যাচ্ছি। আর নয়, ১ মাসের মধ্যে ১ কোটি সই প্রয়োজন। একমাসের মধ্যে টাকা না ছাড়লে দিল্লি স্তব্ধ করে দেব।”
অভিষেক বলেন, “দরকার হলে ১০০ দিনের এই ভাইবোনদের দিল্লি নিয়ে যাব। তাদের থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা করব। তবে হকের টাকা ছিনিয়ে আনব।”
অভিষেক বলেন, “বাংলার বিরোধী দলনেতা কেন্দ্রকে চিঠি করে বলছে মানুষের অধিকারের টাকা বন্ধ করে দাও। অধিকারের টাকা তখন বন্ধ করে যখন আপনাকে দুর্বল ভাবে। আপনাদের ভাতে মারছে ওরা।এই জেলা থেকে ৪ লক্ষ সই আমার চাই।”
অভিষেক বলেন, “এখানে কেউ বলতে পারবেন তিনি অন্য রাজনৈতিক দল করেন বলে লক্ষ্মীর ভান্ডার পাইনি? এখন আলিপুরদুয়ার আলাদা জেলা। রাস্তা হয়েছে, হাসপাতাল, সব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন। রাজ্য সরকারের সব প্রকল্প আপনারা পাচ্ছে। ২০১৯ এ ২ লক্ষ ভোটে বিজেপি জিতেছে। তারপর এরা প্রাপ্য টাকা বন্ধ করে রেখেছে। খাইয়ে-পড়িয়ে, লালন-পালন করে যাঁকে বড় করলেন সে মানুষ নয় কাল সাপ। সুযোগ পেয়ে আপনাকে ছোবল মারছে।”
অভিষেক বলেন, “আমি কথা দিয়ে গিয়েছিলাম প্রতি দুমাস অন্তর আসব। আমি কথা রেখে এসেছি। ২০১৯ এ হয়ত আশানুরুপ ফল করতে পারিনি। তারপরও আপনি বলতে পারবেন রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধা আপনারা পান না?”
অভিষেক বলেন, “উত্তরবঙ্গ শব্দ পছন্দ নয়। একটাই বঙ্গ পশ্চিমবঙ্গ। আগ সভা করতে এলে খবরের কাগজে হেডলাইন হত উত্তরবঙ্গ সফরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। আজকের হেডলাইন দেখুন আলিপুরদুয়ারের সভায় অভিষেক। এই পরিবর্তন আমরা চাই।”
অভিষেক বলেন, “আমি তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে। ২০ লক্ষ পরিবারের মধ্যে যদি ২ হাজার লোক দুর্নীতি করে আপনি জেলে ঢোকান। তৃণমূল কংগ্রেস চোরদের বুক দিয়ে আটকে রাখে না। আমরা চাই ওই দু’হাজার লোককে শাস্তি দিয়ে বাকি ১৯ লক্ষ ৯৮ হাজারের টাকা আপনাকে ছাড়তে হবে।”
অভিষেক বলেন, “একমাস পর চিঠিগুলো আমার প্রতিনিধি গিয়ে আপনাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করবে। এরপর আমি ১ কোটি চিঠি নিয়ে দিল্লিতে যাব। দেখব কেন্দ্র সরকার এরপরও দরজা বন্ধ করে থাকতে পারে কি না।”
অভিষেক বলেন, “আমি আগে ১৭ লক্ষ পরিবারের কথা বলতাম। এখন খোঁজ নিয়ে দেখি ২০ লক্ষ পরিবারের টাকা আটকে রেখে দিয়েছে জোর করে। ১ কোটি ৩৮ লক্ষ পরিবার ১০০ দিনের কাজের জন্য নিজেদের নাম নথিভুক্ত করেছে। আগামী ১৭ তারিখ থেকে ১ মাস ধরে এই কর্মসূচি চলবে। গোটা বাংলাজুড়ে এই কর্মসূচি চলবে।”
অভিষেক বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেস কর্মীদের বলব, বিশেষ করে বুথ সভাপতি, অঞ্চল সভাপতি , গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রত্যেক বুথে ১০০ দিনের কারা নিপিড়িত, শোষিত আপনারা তালিকা তৈরি করুন। বুথে বুথে যান। নিপিড়িতদের দিয়ে চিঠি করুন কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন মন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে।”
অভিষেক বলেন, “আমি বিজেপি-র বন্ধুদের সঙ্গে। আপনারা রাজনৈতিকভাবে লড়ুন। তবে বাংলার মানুষকে ভাতে মারতে চাইলে আমরা ছেড়ে কথা বলব না। তার জন্য যা যা করণীয় করব।”
অভিষেক বলেন, “এই আলিপুর দুয়ারে ৪ লক্ষ পরিবার ১০০ দিনের কাজের সঙ্গে যুক্ত। এদের কী অন্যায়? এদের উপর অন্যায় কেন। তৃণমূলের কাছে হারার জন্য এরা বাংলার মানুষের কাছে প্রতিশোধ নিচ্ছে। হাত ধুয়ে প্রতিশোধ নিতে উঠে পড়ে লেগেছে দিল্লির বাবুরা।তার কারণ ২০২১ সালে বাংলার মানুষ এদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিয়েছিল।”
অভিষেক বলেন, “কেন্দ্র কথায় কথায় ইডি সিবিআই এনআইএ দেখায়। আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অনুরোধ করব ক্ষমতা থাকলে ১০০ দিনের কাজের দুর্নীতির সিবিআই তদন্ত করুন। যাঁরা এর সঙ্গে তাঁধের গলা ধরে জেলে ঢোকান। তবে সাধারণ মানুষের টাকা ছাড়ুন”
অভিষেক বলেন,”এমন রাজনৈতিক দলকে আপনারা জিতিয়েছেন যাঁর সাংসদ, বিধায়ককে ভোটের পর দেখা যায়নি। এমন রাজনৈতিক দলের মানুষকে দলের প্রতিনিধিকে আপনারা জিতিয়েছেন সে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হোক বা বিরোধী দলনেতা হোক কথায়-কথায় চিঠি লিখে বলছে বাংলার মানুষের টাকা বন্ধ করুন।”
অভিষেক বলেন, “কয়েকদিন আগে আমি নিজে গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা তার দেখা পাইনি। যদিও তিনি দিল্লিতে ছিলেন। তৃণমূলের সাংসদদের সঙ্গে বসে আলোচনা করার সৎ সাহস হয়নি। তার কারণ আমাদের প্রশ্নের জবাব হয়ত তাঁর কাছে ছিল না। একমাত্র বাংলার ১০০ দিনের টাকা গায়ের জোরে বন্ধ করে রেখেছে কারণ নির্বাচনে হেরে গিয়েছে ওরা।”
অভিষেক বলেন, “কয়েকদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডে ধরনায় বসেন। মানুষের হকের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার আটকে রেখেছে। এর বিরুদ্ধে যতদূর আমাদের যাওয়ার যাব। কিন্তু মানুষের হকের টাকা, খেটে খাওয়া মানুষের টাকা দিল্লির বুক থেকে ছিনিয়ে আনব।”
বক্তব্যের শুরুতেই বিজেপিকে আক্রমণ করে অভিষেক বলেন, “আমি আগেও ভোট চাইনি। এখনও চাইব না। কিন্তু সাধারণ মানুষকে অত্যাচারিত করে রাখা হচ্ছে। গায়ের জোরে মানুষকে ভাতে মারছে বিজেপি। সেই মানুষের রুজি রুটির পক্ষে সওয়াল করতে হবে।”