আগা গোড়া: এখনও উত্তর নেই অনেক প্রশ্নের, ২১ মার্চের অভিশপ্ত রাতের পর ঠিক কী কী হল বগটুইতে?

TV9 Bangla Digital | Edited By: তন্নিষ্ঠা ভাণ্ডারী

Apr 01, 2022 | 3:54 PM

Bagtui Massacre: তৃণমূলের উপপ্রধান খুন হওয়ার পরই বীরভূমের বগটুই গ্রামে আগুন জ্বলে। সকালে উদ্ধার হয় পুড়ে যাওয়া দেহের অংশ। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এই ঘটনায়। তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই।

আগা গোড়া: এখনও উত্তর নেই অনেক প্রশ্নের, ২১ মার্চের অভিশপ্ত রাতের পর ঠিক কী কী হল বগটুইতে?
বগটুই-হত্যাকাণ্ড

Follow Us

বগটুইয়ের এক অভিশপ্ত রাত অনেকগুলো প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হওয়ার পর রাতেই আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন সকালে পরপর পোড়া লাশ উদ্ধার হয়েছিল। কারা আগুন লাগাল? কেন এমন হত্যালীলা চালানো হল? পুলিশ কি সব জানত? জেনেশুনে রাতে কেন এল না পুলিশ? এই সব প্রশ্ন উত্তর এখনও স্পষ্ট নয়। হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। চলছে দফায় দফায় জেরা, তল্লাশি।

বগটুই-কাণ্ডে এখনও পর্যন্ত ঠিক কী কী হল- একনজরে 

ভাদু শেখ খুনে গ্রেফতার আরও দুই, পুলিশের জালে মোট ৬

ভাদু শেখ খুনে মোট ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত তিন জনের মধ্যে দুজনের নাম রয়েছে এফআইআর-এর তালিকায়, সঞ্জু শেখ আর সেরা শেখের নাম ছিল। আর সন্দেহভাজনভাবে রাজা শেখকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভাসান শেখ ও শেখ শফিক নামে দুজনকে পরে গ্রেফতার করা হয়। তাঁরা ভাদু খুনে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলে জানা গিয়েছে।

পুরোদমে তদন্ত করছে সিবিআই

বগটুইকাণ্ডে প্রথম দিন থেকেই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল বিভিন্ন মহল থেকে। রামপুরহাট থানার আইসি-কে সাসপেন্ডও করা হয়। পরে সেই সাসপেন্ড হওয়া আইসিকে তলব করে সিবিআই। রামপুরহাট হাসপাতাল, বগটুই মোড় ও হাইওয়ে সংলগ্ন এলাকায় সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে সিবিআই। রামপুরহাটের এসডিপিওকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তাঁকেও আগেই সাসপেন্ড করা হয়েছিল। দমকলের আধিকারিকদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

বগটুই-কাণ্ডে উঠে এল অনুব্রত মণ্ডলের নাম

আগুন লাগার পর বেঁচে গেলেও পরে হাসপাতালে মৃত্যু হয় নাজেমা বিবি নামে এক মহিলার। আর তাঁর মৃত্যুর পর সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁর স্বামী শেখলাল শেখ উল্লেখ করেন, মৃত উপপ্রধান ভাদু শেখের বেআইনি কয়লা ও বালির ব্যবসা ছিল। আর সেই বেআইনি ব্যবসার জন্য তোলার ভাগ দেওয়া হত অনেককেই। সেই বখরার ভাগ পেতেন ওসি, তৃণমূলের ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেন ও জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।

বগটুই-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ

রাজ্য পুলিশের ওপর আর ভরসা করা যাবে না। এ কথা জানিয়ে বগটুই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। দু দিন শুনানির পরই সেই মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিল আদালত। স্বতস্ফূর্তভাবে এই মামলা গ্রহণ করেছিল আদালত। আদালতের তরফে বলা হয়, বগটুই -এর হত্যাকান্ড যে ভাবে সমাজে প্রভাব ফেলেছে, তাতে রাজ্যের তদন্তকারীদের ওপর আর ভরসা করা যাবে না।

মমতার নির্দেশের পর গ্রেফতার আনারুল

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশকে বলেছিলেন, যেখান থেকে সম্ভব তুলে এনে গ্রেফতার করতে হবে আনারুলকে। সেই মতো পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁর বাড়িতে গেলেও পাওয়া যায়নি আনারুলকে। গেটে তালা লাগানো ছিল। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের পর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেন কোথায় গা ঢাকা দিয়েছেন সেই খোঁজ শুরু হয়। পরে তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে।

বগটুইতে মুখ্যমন্ত্রী

বগটুইতে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বজনহারা পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সেখানে দাঁড়িয়ে স্বজনহারাদের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেন তিনি। যাঁদের বাড়ি-ঘর পুড়ে গিয়েছে তাঁরা প্রত্যেকে ১ লক্ষ টাকা করে পান। দরকার পড়লে আরও ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। সঙ্গে আরও ৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয় ক্ষতিপূরণ হিসেবে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত আনারুল হোসেনকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন তিনি।

ঘটনার আঁচ ছড়ায় রাজ্য-রাজনীতিতে, পরিদর্শনে যান নেতা-নেত্রীরা

ঘটনার খবর পেয়েই বগটুই যান রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, যান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরে বিজেপি ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করতে একটি টিম তৈরি করে। মোট পাঁচজন রয়েছেন এই দলে। তার মধ্যে রয়েছেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ ব্রিজলাল (উত্তর প্রদেশের প্রাক্তন ডিজিপি), সাংসদ সত্যপাল সিং (মুম্বই পুলিশের প্রাক্তন কমিশনার), সাংসদ রামমূর্তি (প্রাক্তন আইপিএস, কর্নাটক), বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং বিজেপি সাংসদ তথা সর্বভারতীয় মুখপাত্র ভারতী ঘোষ (প্রাক্তন আইপিএস , পশ্চিমবঙ্গ)। সেই কমিটি জে পি নাড্ডার কাছে রিপোর্ট রেশ করেছে ইতিমধ্যেই।

দুর্ঘটনা নয়, রামপুরহাট ‘হত্যাকাণ্ডে’ জানিয়ে দেয় সিট

পরের দিন সকালে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তদন্তের জন্য সিট গঠন করে রাজ্য সরকার। জ্ঞানবন্ত সিং-এর নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়। ওই দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিট। তারা রিপোর্ট দিয়ে জানায়, দুর্ঘটনা নয়, আগুন লাগানো হয়েছিল। সিটও ৮ জনের মৃত্যুর কথা জানায়।

তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল তার আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির যোগ নেই। শর্ট সার্কিটের জেরে আগুন বলে দাবি করেছিলেমন তিনি। সেই তত্ত্ব প্রথমেই খারিজ করে দেয় সিট।

ভাদু শেখ খুন হওয়ার পরই বগটুই জুড়ে চলে তাণ্ডব

২১ মার্চ সন্ধ্যায় বীরভূমে খুন হন তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ। বীরভূমের রামপুরহাটে বোমা ছুঁড়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে এক দল দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে। বীরভূমের রামপুরহাট এক নম্বর ব্লকের বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ছিলেন তিনি। তাঁর বাড়ি বীরভূমের রামপুরহাট থানার বগটুই গ্রামে। এরপর বগটুই গ্রামে শুরু হয় বোমাবাজি। রাতভর তাণ্ডব চলে বগটুই জুড়ে। দুষ্কৃতীরা গ্রামের একাধিক বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। দমকলের তরফে প্রথমে জানানো হয়, এই ঘটনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর পুলিশ সাতজনের মৃত্যুর খবর জানায়। সরকারি সূত্রে মোট ৯ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: Attacked On Matua: ঠাকুর বাড়িতে যাওয়ার পথে মতুয়া পুণ্যার্থীদের ওপর ‘হামলা’, আজ মতুয়ামেলায় রাজ্যপাল

Next Article
Bagtui Massacre: ওই রাতে ১০.২২-এ পৌঁছেছিলেন, কিন্তু আগুন নেভাতে কি বাধা কেউ দিয়েছিলেন? ফের প্রশ্নের মুখে দমকলের ওসি
Bagtui Massacre: কী হয়েছিল অভিশপ্ত সেই রাতে? উত্তর খুঁজতে পুলিশ-দমকলকে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ