সুজয় পাল: ‘আনারুলই গণহত্যার কারিগর।’ সূত্রের খবর, বগটুই কাণ্ডে চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। ভাদু শেখ খুনের পর আনারুলই রামপুরহাট হাসপাতালে গিয়ে ক্ষুব্ধ জনতাকে উস্কে দিয়েছিল। সেই উস্কানির পরেই বোমা-লাঠি, পেট্রোল নিয়ে গ্রামের দিকে যায় উন্মত্ত জনতা। চলে ভাঙচুর, আগুন লাগানো।
সূত্রের খবর, সিবিআই চার্জশিটে এও উল্লেখ করেছেন, গ্রামে যখন একের পর এক বাড়িতে আগুন জালানো হচ্ছে, বোমা মারছে তখন বগটুই গ্রাম থেকে একজন গ্রামবাসী আনারুলকে ফোন করেছিলেন। আনারুল তখন ফোনে জানায়, “আমরা ভাদু শেখ খুনের প্রতিশোধ নিচ্ছি। ওরা মেরেছে। কিছু করতে হবে না। পুলিশও যাবে না।” অর্থাৎ আনারুল পুলিশকে আটকে ছিল। এই কথা চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই। এই খবর TV9 বাংলা প্রথম দেখিয়েছিল।
ঘটনার সময় রামপুরহাট থানার সাব ইন্সপেক্টর রমেশ সাহাকে সোনা শেখের বাড়ি থেকে একাধিকবার ফোন করা হয়েছিল। একবার ফোন ধরেন রমেশ। ২৩ সেকেন্ড কথা হয়। সোনা শেখের বাড়ি থেকে রমেশকে জানানো হয় যে, “বাড়ির গ্রিল ভাঙছে, বোমা মারছে। বাঁচান।” সব শুনে রমেশ ফোন কেটে দেয়। কোনও ব্যবস্থা নেওয়া নি।
দমকলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সিবিআই সেই বিষয়টিও চার্জশিটে উল্লেখ করেছে। ফোন পেয়ে দমকল রাতে এসেছিল। কিন্তু আগুন না নিভিয়ে সাড়ে বারোটার সময়ে চলে যায়। পরদিন ভোরে আসে। এমনটাই চার্জশিটে উল্লেখ করেছে সিবিআই।
বগটুইকাণ্ডে আনারুল হোসেনের পাশাপাশি মোট ১২ জনের নাম জড়িয়েছিল। কিন্তু এই ১২ জনের বিরুদ্ধে কোনও তথ্য প্রমাণই দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। ফলে প্রত্যেকেরই জামিন মঞ্জুর হয়ে যায় আদালতে। বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ভাদু শেখের খুনের ঘটনাতেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ দিতে না পারায় ৯ জনের জামিন মঞ্জুর করেছে রামপুরহাট আদালত।
ঘটনার ৯০ দিনের মাথায় চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই। ঘটনাটি ২১ মার্চ রাতের। ওই সন্ধ্যায় বীরভূমের রামপুরহাটের ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে রামপুরহাট বগটুই মোড়ে বোমা মেরে খুন করা হয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান ভাদু শেখকে। তার দেড় ঘণ্টা পর থেকেই গ্রামে শুরু হয় তাণ্ডব। রাতেই বগটুই গ্রামে ১০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পর দিন সকালে আটজনের পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়। দিন কয়েক পর রামপুরহাট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও এক মহিলার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত অনেকেই অধরা। অভিযুক্ত চার জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে সিবিআই।