Bengali Marriage Rituals: ‘দান’ নয়, নিজ দায়িত্ব নিক ‘কন্যা’, প্রজাপতি-বিবাহে নতুন নজির গড়লেন অর্ক-অর্চিতা

TV9 Bangla Digital | Edited By: tista roychowdhury

Nov 25, 2021 | 7:57 PM

Birbhum: ব্যতিক্রম অর্কপ্রভ-অর্চিতা। তাঁরা দু'জনেই দু'জনের হাতে কাপড় ও খাবার তুলে দিয়ে উভয়ই উভয়ের দায়িত্ব নেওয়ার অঙ্গীকার করেন।

Bengali Marriage Rituals: দান নয়, নিজ দায়িত্ব নিক কন্যা, প্রজাপতি-বিবাহে নতুন নজির গড়লেন অর্ক-অর্চিতা
নবদম্পতি অর্কপ্রভ-অর্চিতা, নিজস্ব চিত্র

Follow Us

বীরভূম:  “অবঙ্গ পতিতং ক্লিবা দশ দোশ বিমর্জি তা,
               তুভ্যং কন্যা পদস্বামী দেবাগ্নি দ্বিজ সান্নিধ্যৌ” 
বিয়ের অনুষ্ঠানে, এই মন্ত্র বোধহয় অতটা খেয়াল করে শোনেন না কেউ। কিন্তু, এই মন্ত্রেই এক ঘর থেকে অন্যঘরে ‘চিরকালের মতো’ চলে যান এক মেয়ে। তাঁকে ‘সম্প্রদান’ করা হয় পাত্রপক্ষের হাতে। চিরাচরিত হিন্দুরীতিতে প্রজাপতি বিবাহে কার্যত এই নীতিই চলে আসছে। বছরের পর বছর ধরে। এ বার সেই নীতিতেই কষে আঘাত করলেন অর্কপ্রভ আর অর্চিতা। নিজেদের বিয়েতে কাটছাঁট করলেন একাধিক উপাচার। তারমধ্যে অন্যতম কন্যা সম্প্রদানের অনুষ্ঠান। সঙ্গে ‘ভাত-কাপড়ের’ অনুষ্ঠানেও নয়া নজির গড়লেন তাঁরা। ঘটনাটি সিউড়ির।

গত ২১ নভেম্বর সিউড়ির ইন্দিরাপল্লির বাসিন্দা অর্কপ্রভ সিংহের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন ডাঙ্গালপাড়ার অর্চিতা সিনহা। কিন্তু, বিয়ের নিয়ম থেকে কার্যত পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয় কন্যাসম্প্রদানের অনুষ্ঠান। পড়া হয়নি সম্প্রদানের মন্ত্রও। পাত্র ও পাত্রীর উভয় পরিবারেরই দাবি, কন্যা কোনও সম্প্রদানের বস্তু নয়। বাড়ির মেয়ে মানুষ। কোনও দানসামগ্রী নয়। তাঁকে কেন দান করা হবে? তাই বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে কার্যত বাদ দেওয়া হয় সম্প্রদানের অনুষ্ঠান।

এখানেই শেষ নয়, ভাতকাপড়ের অনুষ্ঠানের চিরাচরিত রীতি মেনে স্বামী তাঁর স্ত্রীয়ের হাতে তুলে দেন কাপড় ও থালা ভর্তি ভাত। মুখে বলেন, “আজীবন তোমার ভাতকাপড়ের দায়িত্ব নিলাম।” সেখানেও ব্যতিক্রম অর্কপ্রভ-অর্চিতা। তাঁরা দু’জনেই দু’জনের হাতে কাপড় ও খাবার তুলে দিয়ে উভয়ই উভয়ের দায়িত্ব নেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এখানেই শেষ নয়, শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার আগে ‘কনকাঞ্জলি’ও দেননি অর্চিতা।

কিন্তু কেন এমন সিদ্ধান্ত নবদম্পতির? পেশায় সমাজকর্মী অর্চিতার দাবি, ছেলেরাই কেবল কেন মেয়ের দায়িত্ব নেবে? মেয়েরাও নিজেদের দায়িত্ব নিতে শিখুক। ছোট ছোট প্রথাভাঙার মধ্যে দিয়েই বদল হোক। সমাজে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে উঠুক এমনটাই দাবি করেছেন অর্চিতা। অন্যদিকে, অর্কপ্রভ জানিয়েছেন, অর্চিতার সিদ্ধান্তে তিনি খুশি। এখনকার দিনে, একজনের আয়ে সংসার চলে না। আর দুজনেই একসঙ্গে তাঁরা পরিণয়সূ্ত্রে আবদ্ধ হয়েছেন। সেখানে উভয়েরই তাঁদের সমান দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব পালনের শুরু বৈবাহিক প্রথা থেকেই বলে মনে করছেন অর্ক।

তবে, নবদম্পতির এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে দুই পরিবারই। অর্কপ্রভর ৮২ বছরের ‘ঠাকুমা’ গীতারানি সিংহ জানিয়েছেন, এখন মেয়েরা ও ছেলেরা একইভাবে কাজ করে। কেউ কারোর থেকে কম নয়। তাই এই সিদ্ধান্ত। অন্যদিকে, অর্কর মা বলেছেন, “একজন তো আর কারোর ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিতে পারে না। আর এখনকার মেয়েরা কেন কারোর দায়িত্বে থাকবে? আবার মেয়েরা চাকরি করুক চায় না করুক তারাই কিন্তু রান্না করে এবং সংসারের দায়িত্ব নেয়। পাশাপাশি অর্থটাই কিন্তু সংসারের সব কিছু নয়। যে কারণে আমরা ভেবেছিলাম একটা সংসার শুরু হতে গেলে কোন ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের দায়িত্ব থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের পরিবারের সকলের সম্মতিক্রমে এই ভাত-কাপড় অনুষ্ঠানে আমার ছেলে যেমন আমার বৌমার হাতে ভাত, কাপড়, উপহার তুলে দিয়েছে, ঠিক তেমনি আমাদের বৌমাও একইভাবে আমার ছেলের হাতে ভাত, কাপড় এবং উপহারস্বরূপ একটি স্টেথোস্কোপ তুলে দিয়েছে।” নতুন ধরনের এমন বিয়ের নজিরকে কার্যত সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকাবাসীও।

আরও পড়ুন: Dilip Ghosh: ‘রেডিমেড প্রার্থী নয়’, আদি সংগঠনে ‘আস্থা’ খুঁজছেন দিলীপ

 

 

 

Next Article