বীরভূম: বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়েই মোবাইল হাতে ফির ছিলেন এক যুবক। কিছুক্ষণ আগেই তাঁর একটি ফোন এসেছিল। কথা বলার পর ফোন রেখেছিলেন হাতেই। সন্ধ্যার পর গ্রামের রাস্তা ফাঁকা। সে সময় জনা কয়েক যুবক তাঁকে অনুসরণ করছিলেন বলে মনে হয়েছিল বছর তিরিশের মহাদেবের। কিন্তু তেমনটা গুরুত্ব দেননি। আরও দূরে যেতেই হামলা পড়েন তাঁরা। মহাদেবের হাত থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু নাছোড় মহাদেবও। মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছিলেন তাঁরা। ধস্তাধস্তির মাঝেই আচমকা চলে যায় গুলি। মোবাইল ছিনতাইয়ে বাধা পেয়ে যুবককে গুলি করার অভিযোগ। ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য নানুরের বড় শিমুলিয়া গ্রামে। গুলিবিদ্ধ যুবক হাসপাতালে চিকিত্সাধীন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, রাতে আচমকাই একটা গুলির শব্দ শুনতে পান তাঁরা। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন কোনও দুষ্কৃতী তাণ্ডব হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর এই যুবকের আর্তনাদ শুনতে পান তাঁরা। বিপদ আঁচ করে ঘর থেকে গ্রামের রাস্তায় বেরিয়ে আসেন।
সে সময় মহাদেব নামে ওই যুবক রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে কাতরাচ্ছেন। আহত যুবকের কথায়, “আমি বুঝতে পারছিলাম ওরা আমাকে ফলো করছে। আরও তাড়াতাড়ি হাঁটতে শুরু করি। কিন্তু কিছুটা এগোতেই ওরা আমাকে ঘিরে ধরে। আমার হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। আমি মোবাইল দিতে রাজি হইনি। অনেকদিন টাকা জমিয়ে মোবাইলটা কিনেছিলাম। কিন্তু ভেবেছিলাম ধস্তাধস্তি করবে, তারপর না পেয়ে ছেড়ে পালাবে। কিন্তু তারই মাঝে কখন যে ওরা পকেট থেকে বন্দুক বার করে গুলি চালিয়ে দেবে বুঝিনি। পায়ে গুলি লাগতেই পড়ে যাই আমি।”
এক গ্রামবাসীর কথায়, “আমরা একটাই গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছিলাম। এলাকায় মাঝেমধ্যে অশান্তিতে এমনটা হয়। পরে আর্তনাদ শুনতে পাই। তখন ওই ছেলের পা রক্তে ভেসে যাচ্ছে।” ওই ব্যক্তির কথায়, “রাজনৈতিক কারণে এলাকায় অনেক সময়ই বোমা-গুলি পড়ে। কিন্তু গ্রামে এইভাবে ছিনতাইবাজদের দৌরাত্ন্য বেড়ে যাবে, সেটা ভাবিনি। ভরসন্ধ্যায় এই ঘটনা আরও ভয় ধরাচ্ছে।”
মহাদেবের পায়ে গুলি লেগেছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। সেখানেই চিকিত্সাধীন রয়েছেন তিনি। তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, একটা মোবাইল ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আর তাতে বাধা পেয়ে ছিনতাইবাজরা গুলি চালিয়েছে। যুবক কিছুটা সুস্থ হলে অভিযুক্তদের সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। তাদের খুব কাছ থেকে দেখেছেন ওই যুবক। বর্ণনা নিয়ে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করতে হবে। গ্রামে ছিনতাইয়ে বাধা পেয়ে গুলিচালনার অভিযোগ সচরাচর পাওয়া যায় নি। ওই এলাকায় এর আগে এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে প্রশাসনের তরফ থেকে কড়া পদক্ষেপ করা হবে।