মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
বীরভূম: চলতি আর্থিক বছরের বাজেট পেশ করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু এই বাজেট একেবারেই মধ্যবিত্তের জন্য নয়, তীব্র কটাক্ষ করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বীরভূমের সভা থেকে তিনি বলেন, “সব বিক্রি করে দিচ্ছে কেন্দ্র। বেকার জন্য কি একটাও কথা বলেছে?” কী কী বললেন মমতা, দেখুন এক নজরে…
Key Highlights
- একটা কথাও বেকারদের জন্য বলা নেই। চাকরি যা ছিল, তাও প্রায় উঠিয়ে দিয়েছে। সব বিক্রি করে দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সেক্টরগুলো বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে।
- ১০০ দিনের কাজের টাকা, আগের বছর কমিয়ে দিয়েছিল। এবার ‘ড্রাস্টিক কাট’ করে দিয়েছে। তার মানে ১০০ দিনের কাজ আর আপনারা ওদের কাছ থেকে পাবেন না। যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁদের মাইনি পর্যন্ত এখনও দেননি।
- আমাদের টাকা তোমরা আটকে রাখো কী করে? ইজ় ইট নট অ্যা ক্রিমিন্যাল অফেন্স? সংবিধানে বলা আছে, ১০০ দিনের কাজ করলে, সময় মতো টাকা দিতে হবে। এটা কম্পালসারি। এটা অপশন্যাল নয়। এটা সাংবিধানিক। দেয়নি।
- ওঁরা নাকি অনেক গ্যাসের দাম কমিয়ে দিয়েছেন। গ্যাস বেলুন জানেন? গ্যাস বেলুনের মতো গ্যাসের দাম কমিয়েছেন। ধরুন, ছিল ৭০ টাকা, এখন ১ হাজার ১১০। ১১২০ টাকা!
- এই বাজেটে আশার আলো নেই, অন্ধকার রয়েছে। টোটাল অ্যান্টি পুওর বাজেট। ওরা বলছে, সারা ভারতে ৮১ লক্ষ সেলফ হেল্প গ্রুপ করবে। কিন্তু এটা তো রাজ্য করে। আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন সেল্ফ হেল্প গ্রুপ ছিল ১ লক্ষ। এখন ১১ লক্ষ। সেটাকেই যুক্ত করে বলছে। রাজ্য যা করে, তাকেই যুক্ত করে বলছে। তোমার ক্রেডিট কোথায়? কী করেছে আইসিডিএস, আশাকর্মী, কৃষক, বেকারদের জন্য? গরিব ও সাধারণ মানুষের জন্য বাজেট আধ ঘণ্টায় করে দিতাম।
- নিত্য জিনিসের দাম বাড়ছে, কী করেছো? বাজেটে দরিদ্ররা বঞ্চিত। একাংশ বঞ্চিত হয়েছে। তবে স্ল্যাবের নামে …যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে, কোনও লাভ নেই, টোটালটাই লোকসান।
- আজ পর্যন্ত কোনও কথা রাখতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। প্রথমবার বলেছিল, প্রত্যেককে ১৫ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে, কেউ পেয়েছেন? বলেছিল ২ কোটি লোকের চাকরি দেওয়া হবে, ৪০ শতাংশ চাকরি কমে গিয়েছে… গরিবদের দিকে ফিরে তাকায়নি।
- আমি এরকম সরকার আগে দেখিনি। কথায় কথায় পুলিশ সুপার, ডিএমদের ডেকে বৈঠক করছেন। বিজেপির চুনোপুটিগুলো মিটিং করছে। তাদের মুখেও বড় বড় কথা। সবাইকে ইনকাম ট্যাক্স ধরাচ্ছে, সবাইকে ইডি ধরাচ্ছে, সিবিআই ধরাচ্ছে আর টিকটিকিও আপনার ঘরে ঢোকে, তাহলে এনআইএ ঢুকে যাচ্ছে। তাদের কাজ কী, দেশের সিকিওরিটি রক্ষা করা। সত্যিকারের চোর ডাকাতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই, কিন্তু কাল সারা দেশ জুড়ে রেড হয়েছে…কেন? পকেটমারি করতে হবে? কেন্দ্রীয় ভান্ডারে টাকা নেই। ৮ শতাংশের নামে ৬ শতাংশে নামবে। শুধু বক্তৃতা, চিঠি পাঠানো।
- কেন বাংলা থেকে টাকা তুলে নিয়ে যায় কেন্দ্র? এখন জিএসটির মাধ্যমে চলে যায়। অথচ আমাদের টাকা আমাদের দেওয়া হচ্ছে না। আইসিডিএস এ আগে কেন্দ্রের দেওয়ার কথা ছিল ৯০ শতাংশ, রাজ্য দেবে ১০ শতাংশ। এখন তুলে দেওয়ার জন্য ৬০-৪০ করে দিয়েছে।
- আশার মেয়েরা দেড় হাজার টাকা করে পেত, হঠাৎ সব বন্ধ। কিন্তু আমরা টাকা দিই। লক্ষ্মীর ভান্ডারটা কেড়ে নিয়েছে বিজেপি, তাই আমরা এই ভান্ডার দিয়েছি। বাংলায় এখনও বিনা পয়সায় চিকিৎসা হয়, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড রয়েছে।
- আজ আরও একটা বড় কেলেঙ্কারি করে ফেলেছে কেন্দ্র। ফুড সাবসিডি কমিয়ে দিয়েছে। তার মানে আগামী দিনে গরিব যাতে রেশন না পায়, ওখান থেকেও টাকাটা মেরে দেবে। আমরা বিনা পয়সায় রেশন দিই। আমরা যে রেশন দিই, সেই টাকাও বন্ধ।
- যে যে রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। দক্ষিণের কিছু রাজ্য রয়েছে, তাদের আয়টা অন্যভাবে হয়। সেটা আমরা করতে পারছি না।
- দেউচা পাচামি বিশ্বের বৃহত্তম কয়লা নগরি হবে। বিদ্যুতের দাম কমে যাবে। ১০০ বছর বাংলার বিদ্যুতের কোনও সমস্যা থাকবে না। বাইরে থেকে লোক নিয়ে এসে মিথ্যা কথা বলেন। মনে রাখবেন, আমি কিন্তু ফোর্সফুলি কোনও জমি নিই না। আমরা নেগোসিয়েট করি, আমরা কম্পেনসেট করি। চাকরি দিই। অনেকেই চাকরি পেয়েছেন। আমরা ১০ হাজার টাকা করে সহায়ক ভাতা দিই।
- আমার দু-একজন নেতাকে জেলে পুরে রাখলেও, নির্বাচনের সময়ে তো ঘর থেকে বেরোতে দেন না. মানুষ ভোট দেয়। এবার থেকে বীরভূম জেলা, যতদিন সে অ্যাবসেন্ট থাকবেন, আমার দুএকজন নেতা, আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখব। ফিরহাদ আমাকে সাহায্য করবে, কোর গ্রুপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আগের সিস্টেমেই কাজ করব। যারা ঘেউ ঘেউ করে বেরাচ্ছেন… রাজা যায় বাজার, তো কুরতা ভোকে হাজার…
- গ্রামের অনেক সাংবাদিক খেতে পান না। আর কয়েকজন সাংবাদিক, কত যে তাদের গচ্ছিত আছে কেউ জানে না, অফিসে যায় নাম ভাঙায়, আর কাগজ নিয়ে এসে দেখায় এই দেখো…
- আমরা যখন লক্ষ লক্ষ চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করছি, রোজ আদালতে গিয়ে একটা করে কেস করে বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। আমি আদালতকে দোষ দিই না। দোষ দিই সেই রাজনৈতিক নেতাদের… লজ্জা করে না? তোমার ঘরে খাবার অভাব নেই, তাই অন্য বেকারদের সমস্যা বুঝবে কেন? আমি দেব, যেভাবেই হোক দেব।
- একটা লোক দুর্ঘটনায় মরে গেলে, আমি কীভাবে টাকা দেব, তোমরা ঠিক করবে? ওটা দেওয়া আমার দায়িত্ব। কেউ কেউ সরকারে থেকে সবচেয়ে বেশি চুরি করেছে, গদ্দারি করেছে। ওদের বিশ্বাস করবেন না।
- বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকারা কাঁদছেন। শান্তিনিকেতনের কী অবস্থা। কাউকে সাসপেন্ড করেছে, কারোর চাকরি দিয়েছে। আমি কিন্তু ছেড়ে কথা বলার জন্য ওদের সঙ্গে কথা বলিনি। যারা পড়তে চান, তাদের ব্যবস্থা করে দেওয়ার ক্ষমতা আমি রাখি। আদালতের রায় ওরা মানেনি। ওদের কথা আগে শুনব, তারপর আমাদেরটা জানাব। আমরা অল রেডি প্ল্যান করে নিয়েছি, চিন্তা করার কারণ নেই। রবীন্দ্রনাথের শেষ বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর আমার কাছে দুঃখ করছিলেন, তাঁর বাড়ির সামনেও পাঁচিল তুলে দিয়েছেন। বিশ্বভারতীকে গৈরিকীকরণ করবেন।
- কেউ যদি বলেন, কেন এই চাকরিটা হচ্ছে? আরে ভুল তো সবাই করে। রোজ মায়েরা রান্না করেন, একদিন তো নুন বেশি হতেই পারে। মনে রাখবেন, যে কাজ করে, তারই ভুল হয়। ভুল করলে সংশোধন করার সুযোগ দাও। চাকরি বন্ধ করতে পারো না। বিজেপি তুমি চাকরি বন্ধ করতে পারো না।
- আমরা বাজেট করি, ট্যাক্স বাড়াই না।