বীরভূম: যত দিন সে অ্যাবসেন্ট থাকছে, বীরভূম জেলা খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে। বড় ঘোষণা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বীরভূমের সরকারি পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে নাম না করে বড় ঘোষণা করলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্য়মন্ত্রী বলেন, “আমার দু-একজন নেতাকে জেলে পুরে রাখলেও, নির্বাচনের সময়ে তো ঘর থেকে বেরোতে দেন না. মানুষ ভোট দেয়। এবার থেকে বীরভূম জেলা, যতদিন সে অ্যাবসেন্ট থাকবেন, আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখব। ” কথাটি যখন বলেন, তখন সভাস্থলে গগনভেদী করতালি। মুখ্য়মন্ত্রী সংযোজন, “ফিরহাদ আমাকে সাহায্য করবে, কোর গ্রুপ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। আগের সিস্টেমেই কাজ করব। যারা ঘেউ ঘেউ করে বেরাচ্ছেন… রাজা যায় বাজার, তো কুরতা ভোকে হাজার…”
অনুব্রত মণ্ডল জেলে যাওয়ার পর থেকেই জেলা তো বটেই, গোটা বাংলার রাজনীতিতে একটা বড় চর্চার ইস্যু হয়ে উঠেছিল বীরভূম জেলা। জেলার সাংগঠনিক দায়িত্ব আদতে কার ওপরে বর্তাছে, তা নিয়েই ছিল তুমুল জল্পনা। এর আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, অনুব্রতকে যখন জেল থেকে বের হবেন, তখন তাঁকে বীরের সম্মান দিয়ে জেলায় ফেরানো হবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফর, আর তা ঘিরে বীরভূম-বোলপুর যখন ফেস্টুন, ব্যানারে সাজল, তখন তৈরি হল অন্য জল্পনা। কোথাও দেখা যায়নি বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের ছবি। নেত্রী, দলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ডের নীচে মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায় চৌধুরীর ছবি ছিল। তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও চর্চা কম হয়নি।
পাঁচ জনের কোর কমিটি তৈরি হয়েছিল জেলা নেতাদের নিয়ে। কিন্তু সংগঠনের দায়িত্ব যে জেল থেকেই পরিচালনা করছেন কেষ্ট, তা খোদ সেখানকার সাংসদ শতাব্দী রায়ের কথাতেই প্রকাশ পেয়ে যায়। জেলার একটি সূত্র থেকেই অবশ্য উঠে আসছিল অন্য কথা। তবে কি কেষ্ট সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে দল? নাকি তাঁর প্রভাবশালী তকমা মুছতে, তাঁর জামিন পাওয়ার পথ মসৃণ করতে, এই নয়া কৌশল?
জল্পনার মাঝেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভা আর তাতে নাম না করে অনুব্রত প্রসঙ্গ। মমতা এদিন কেষ্ট নাম নেন কিনা, তাতে শ্যেন নজর ছিল গোটা জেলা তথা বাংলা। নেত্রী নাম নিলেন না কেষ্টর। কিন্তু বললেন, “যতদিন সে অ্যাবসেন্ট থাকবেন, আমি নিজে দায়িত্ব নিয়ে দেখব। ” অনুব্রত একটা জেলার সভাপতি, আর তাঁর অনুপস্থিতিতে সেই জেলা দেখবেন খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্লেষকদের কথায়, এটা অত্যন্তই রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। মে মাসেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করে রাখলেন নেত্রী, এটা একাংশের মত। উল্লেখ্য, ফিরহাদ হাকিম এই জেলার আগেই পর্যবেক্ষক ছিলেন, এবার তিনি নেত্রীকে সাহায্য করবেন এই জেলা পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে।
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “বীরভূমের দায়িত্ব নিলেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে কোনও কাজ নেই। মুখ্যমন্ত্রীর কাজ কম পড়ে গিয়েছে, তাই অনুব্রতর কাজ নিজের কাঁধে নিলেন।”