রামপুরহাট: সিবিআই (CBI) হেফাজতে বগটুই কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের মৃত্যুর (Lalon Sheikh Death) পর থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে পরিস্থিতি। দফায় দফায় চলে অবরোধ। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে। ঘটনায় ইতিমধ্যেই লালন শেখের পরিবারের লোকেরা সিআইডি তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। বেলা গড়াতেই ক্রমেই তপ্ত হয়ে উঠতে থাকে পরিস্থিতি।
নবান্নের নির্দেশে লালন শেখের মৃত্যুর ঘটনার তদন্তভার গ্রহণ করল রাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি। মঙ্গলবার সকাল থেকেই সিআইডি আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন বীরভূমের রামপুরহাটে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরই তদন্তভার গ্রহণ করল সিআইডি। সূত্রের খবর, এদিন রাতেই কাগজপত্র হাতে পাবেন তাঁরা, শুরু হবে তদন্ত। সিআইডি-র হোমিসাইড শাখার ৪ আধিকারিক বীরভূমে যাচ্ছেন বলে জানা গিয়েছে। তদন্তের দায়িত্বে থাকবেন ডিএসপি পদমর্যাদার এক আধিকারিক।
বিস্তারিত পড়ুন: Lalan Sheikh Death: লালন শেখের মৃত্যুর তদন্তভার গ্রহণ করল CID, বাড়ির সিল খুলে দিল CBI
সিবিআই-এর অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর অজয় ভাটনগর এলেন সিজিও কমপ্লেক্সে। বগটুইকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে মৃত্যুর পর যখন তোলপাড় হচ্ছে চারিদিকে, ঠিক সেই সময়ে কলকাতায় সিবিআই কর্তা। মঙ্গলবার সন্ধেয় দিল্লি থেকে কলকাতায় এসে পৌঁছলেন অজয় ভাটনগর। কলকাতা বিমানবন্দরে নেমে সেখান থেকে সোজা সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন তিনি।
সিবিআই হেফাজতে লালন শেখের মৃত্যু নিয়ে এবার প্রশ্ন তুললেন ফিরহাদ হাকিম। বললেন, “সিবিআই যা করল, সেই ব্যাপারে বিজেপিকে উত্তর দিতে হবে। আমরা আদালতের সামনে হাত জোড় করে বলছি, ন্যায় বিচার করুন। সিবিআই যেটা করেছে তার তদন্ত হোক, সিবিআইকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত করায় আজ লালন শেখকে মরতে হল।”
সিবিআই হেফাজতে মৃত লালন শেখের দেহের ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শেষ। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেউ দেহ নিতে আসেননি বলেই জানা গিয়েছে। উল্লেখ্য, লালন শেখের পরিবারের তরফে আগেই দাবি করা হয়েছিল, যতক্ষণ না তাঁরা বিচার পাচ্ছেন, ততক্ষণ তাঁরা দেহ নেবেন না। তবে সূত্রের খবর, পরিবারের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, আগামিকাল তাঁরা দেহ সংগ্রহ করবেন।
সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু হয়েছে বগটুই কাণ্ডের অন্যতম অভিযুক্ত লালন শেখের। আর এই নিয়েই তোলপাড় হচ্ছে গোটা রাজ্য। প্রশ্ন উঠছে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে। আর এমন এক পরিস্থিতির মধ্যেই কলকাতায় আসছেন সিবিআইয়ের অ্যাডিশনাল ডাইরেক্টর অজয় ভাটনগর। কলকাতার অফিসে তাঁর আসা পূর্ব নির্ধারিত থাকলেও সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে তাঁর এই কলকাতায় আসা স্বাভাবিকভাবেই বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বগটুই কাণ্ডে লালন শেখের সিবিআই হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে কারামন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, “লালন শেখের মৃত্যু হয়েছে অসুখে। অনেকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তাঁকে আমরা চিকিৎসা করিয়েছি। তারপরই মারা গেছেন। অনেকেই অসুস্থ অবস্থায় আসেন সংশোধনাগারে। সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করেন চিকিৎসা করার। কারোর জটিল রোগ হলে বাইরেও নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু কেউ মারা গেলে আর কিছু করার নেই।”
রামপুরহাটে সিবিআইয়ের ক্যাম্প অফিস থেকে কনভয় বেরিয়ে যেতেই ফের বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করেন উত্তেজিত জনতা। জাহাঙ্গীর শেখকে নিয়ে আদালতের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন সিবিআই অফিসাররা। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, তারা সেখানে গিয়েও বিক্ষোভ দেখাবেন। সিবিআই কনভয় বেরোনোর সময় কেন্দ্রীয় বাহিনী লাঠিচার্জ করেছে বলেও অভিযোগ তাঁদের।
এসডিপিও-র মধ্যস্থতায় অচলাবস্থা খানিক কাটতেই সিবিআই ক্যাম্প অফিস থেকে গাড়ি বেরিয়ে আসতে থাকে। দুটি গাড়ি বেরিয়ে আসে ক্যাম্প অফিসের ভিতর থেকে। প্রথম গাড়িটিকে ছেড়ে দিলেও দ্বিতীয় গাড়ি বেরোতে গেলেই বিক্ষোভকারীরা ফের ওই গাড়িটিকে আটকানোর চেষ্টা করেন। আর তখনই আসরে নামেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। লাঠি দিয়ে রাস্তা খালি করার চেষ্টা করেন তাঁরা। বিক্ষোভকারী জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতেই সিবিআই কনভয়ের একের পর এক গাড়ি হু হু করে বেরিয়ে যায় ক্যাম্প অফিস থেকে
রামপুরহাটের এসডিপিও ধীমান মিত্রর মধ্যস্থতায় গাড়ি বেরোনোর সুযোগ পায়। বিক্ষোভকারীরা জানায়, জাহাঙ্গীরের সঙ্গে একজন সিবিআই আধিকারিক এবং একজন সিআরপিএফ জওয়ানকে বেরোতে দেবেন তাঁৎা আদালতে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে সিবিআই আধিকারিকদের। এসডিপিও জানান, “আমরা সিবিআইকে জানিয়েছি। এখনও তারা কিছু জানাননি। আমরা ম্যাজিস্ট্রেটকেও জানিয়েছি গোটা বিষয় এবং অনুরোধ করেছি একটু অপেক্ষা করতে।”
রামপুরহাটে সিবিআই ক্যাম্প অফিসের বাইরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকেন উত্তেজিত জনতা। বিক্ষোভের জেরে ক্যাম্প অফিসের ভিতরেই বেশ কিছুক্ষণ ধরে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন সিবিআই অফিসাররা। এদিকে আজই বগটুই মামলায় অপর অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর শেখকে আদালতে পেশ করার দিন। কিন্তু বিক্ষোভের জেরে ক্যাম্প অফিসের বাইরে বেরোতে পারছিলেন না সিবিআই আধিকারিকরা। বিক্ষোভকারী জনতা সিবিআই-এর কোনও গাড়ি ক্যাম্প অফিস থেকে বেরোতে দিচ্ছিলেন না।