Panchayat Election 2023: চড়াম-চড়াম, গুড় বাতাসা আর শোনা যাচ্ছে না, ভোটের সময় কেমন আছেন কেষ্টর অনুগামীরা

হিমাদ্রী মণ্ডল | Edited By: Soumya Saha

Jun 15, 2023 | 2:55 PM

Birbhum TMC: ২০১৮ সালের ভোটে 'গুড়-বাতাসা' আর 'উন্নয়নের' ঠেলায় বীরভূমের জেলা পরিষদে দাঁত ফোটানোর সুযোগ পায়নি বিরোধীরা। জেলা পরিষদে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল।

Panchayat Election 2023: চড়াম-চড়াম, গুড় বাতাসা আর শোনা যাচ্ছে না, ভোটের সময় কেমন আছেন কেষ্টর অনুগামীরা
অনুব্রত মণ্ডল

Follow Us

সিউড়ি: রাস্তায় রাস্তায় ‘উন্নয়ন’ দাঁড়িয়ে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে (Panchayat Election) এই একটা লাইনেই সুপারহিট কেষ্ট মণ্ডল (Anubrata Mondal)। সেই ‘উন্নয়ন’-এর নমুনা অবশ্য মনোনয়ন পর্বের সময় থেকেই টের পেয়েছিল বীরভূমবাসী। মনোনয়ন জমা দিতে বিরোধীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ, ভোটারদের ভয় দেখানোর অভিযোগ, মুহুর্মুহু বোমাবাজি… এমন ঘটনা গত পঞ্চায়েতে আকছার ঘটেছে বীরভূমে। বিরোধীদের জন্য ‘গুড়-বাতাসা’ তৈরি রাখার কথাও শোনা গিয়েছিল অনুব্রতর মুখে। সেই ‘গুড়-বাতাসা’ আর ‘উন্নয়নের’ ঠেলায় বীরভূমের জেলা পরিষদে দাঁত ফোটানোর সুযোগ পায়নি বিরোধীরা। জেলা পরিষদে কার্যত বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল তৃণমূল।

পাঁচ বছর পেরিয়ে রাজ্যে আবার একটা পঞ্চায়েত ভোট। কিন্তু আগের বারের তুলনায় এবারে অনেকটাই ফারাক। এবার ভোটের মুখে বীরভূম কেষ্টহীন। আর কেউ গুড়-বাতাসার কথা বলছেন না। আর কেউ ‘চড়াম চড়াম’ নিদান দিচ্ছেন না। আর এদিকে কেষ্ট-ভূমে পায়ের তলার মাটি শক্ত করতে শুরু করেছে বিরোধীরা। ভোটের মুখে এসব নিয়ে কি চিন্তায় কেষ্ট-অনুগামীরা? তৃণমূলের কোমা অঞ্চল সভাপতি বলরাম বাগদি জানিয়েছেন, ‘উনি থাকলে নির্বাচনের সময় আমাদের যেভাবে গাইড করতেন, সেটাতে একটু সমস্যা হচ্ছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ আবার কেষ্ট মণ্ডলের অনুপস্থিতি নিয়ে কিছুটা হলেও চিন্তায় রয়েছেন। কেষ্টর এক ছায়াসঙ্গী বলছেন, ‘দাদা থাকলে মনে ভরসা পেতাম। ভোট কীভাবে করাতে হয়, দাদার নখদর্পনে।’ পঞ্চায়েতের মুখে অনুব্রত তিহাড়ে বন্দি থাকায় বিষণ্ণ মনে এক অনুগামী বললেন, ‘দাদা থাকলে আরও বেশি উজ্জীবিত থাকতে পারতাম। দাদার ডায়লগ আমাদের ভরসা জোগায়।’

কেষ্ট মণ্ডলের দাপটে যে বীরভূমে এককালে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খেত, এমন নমুনাও রয়েছে। যেমন ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের সময় সিউড়ি-১ ব্লকে মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় ব্লক অফিসের সামনেই ‘খুন’ হয়েছিলেন দিলদার খান। সন্তান-হারা বাবা সিউড়ি সদর হাসপাতালে দাঁড়িয়ে সেদিন দাবি করেছিলেন, তাঁর ছেলে বিজেপির হয়ে মনোনয়ন জমা করতে যাচ্ছিল। কিন্তু তার এক ঘণ্টার মধ্যেই কেষ্ট মণ্ডলের পাশে বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল পুত্রশোকে বিহ্বল বাবাকে। বদলে গিয়েছিল বয়ানও। বলেছিলেন, বিজেপি নয়, তৃণমূলের হয়েই মনোনয়ন জমা করতে যাচ্ছিলেন।

কিন্তু ২০১৮ সালের সঙ্গে ২০২৩ সালের অনেকটা ফারাক দেখা যাচ্ছে। এবার আর গুড়-বাতাসার কথা শোনা যাচ্ছে না। ‘উন্নয়ন’ রাস্তায় কতটা দাঁড়িয়ে থাকবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, ভোটের মুখে কেষ্ট-গড় পরপর ভাঙনের মুখে তৃণমূল। কখনও তৃণমূল ছেড়ে বামে, আবার কখনও ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মে। এমন দৃশ্যও উঠে আসছে। যে বীরভূম এককালে ভোটের মুখে সবথেকে বেশি তপ্ত থাকত, যে বীরভূমে আকছার বোমাবাজির অভিযোগ তুলত বিরোধীরা… সেই বীরভূমকে ছাপিয়ে গিয়ে এখন সংবাদ শিরোনামে উঠে আসছে ভাঙড়, খড়গ্রামের মতো জায়গাগুলি।

২০১৮ থেকে ২০২৩। পাঁচ বছরে বদলে গিয়েছে বীরভূমের রাজনৈতিক সমীকরণ। যাঁকে ঘিরে বীরভূমের রাজনীতি আবর্তিত হত, সেই ‘বীরভূমের বাঘ’ কেষ্ট মণ্ডল এখন জেলে। তাও আবার বাংলার ত্রিসীমানার থেকে অনেক দূরে। তিহাড়ে জেলবন্দি। কেষ্ট-গড় বীরভূমে দলীয় কোন্দলের অভিযোগও মাঝে মধ্যেই উঠে আসছে। এমন অবস্থায় কি পঞ্চায়েতের মুখে আগের মতো জোশ পাচ্ছে বীরভূমের তৃণমূল নেতৃত্ব? যদিও তৃণমূলের বীরভূম জেলা সহ-সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, অনুব্রত বীরভূমে না থাকলেও পঞ্চায়েত ভোট করাতে কিংবা দলের সংগঠন অটুট রাখতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না শাসক শিবিরের। কেষ্টকে ছাড়াই তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্যরা মিলে ঝড়-ঝাপটা সামলে নিচ্ছেন।

তৃণমূলের সিউড়ি-২ ব্লকের সভাপতি নুরুল ইসলাম জেলার রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। ভোটের সময়ে কেষ্ট বীরভূমে না থাকার আক্ষেপ রয়েছে তাঁর মনে। কিন্তু সংগঠনের কাজে নির্বিঘ্নে চলছে বলে দাবি তাঁরও। বলছেন, ‘কেষ্টদা নেই, সেটাতে আমাদের মন খারাপ। কিন্তু দাদা নেই বলে সংগঠনের কোনও অসুবিধা হচ্ছে, এমন নয়। তাঁর শেখানো পথেই আমরা চলছি। দাদাকে ছাড়াই এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পার করতে পারব বলে আশা করি।’

তবে শাসক শিবির যাই বলুক না কেন, কেষ্টহীন বীরভূমে কিন্তু ঝোপ বুঝে কোপ মারতে শুরু করে দিয়েছে বিরোধীরা। যেমন যে গ্রামে ২০১৮ সালের ভোটের আগে ‘খুন’ হয়েছিলেন দিলদার, সেই গ্রাম থেকেই সম্প্রতি প্রায় ১০০ পরিবার তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে। তৃণমূলের নীচুতলায় দলবদলের এমন চোরাস্রোত, জেলার বিভিন্ন জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে বিগত দিনগুলিতে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি কেষ্টহীন বীরভূমে আলগা হচ্ছে শাসকের রাশ? ২০১৮ সালের পঞ্চায়েতের ‘ভয়ঙ্কর’ স্মৃতি বিরোধীদের মনে দাগ কাটলেও, এ বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই স্মৃতি আর ফিরে আসবে না বলেই মনে করছেন বিরোধীরা।

আর যদি এবার সেই ধরনের কোনও বাধা মুখে পড়তে হয় বিরোধীদের, তাহলে যে তারাও চুপচাপ বসে থাকবে না, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছে বিজেপি। পদ্ম শিবিরের বীরভূম জেলা সভাপতি ধ্রুব সাহা যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনের মতো এবার ভোট করতে এলে (কপালে) কষ্ট আছে। ইট ছুড়লে পাথর খেতে হবে। ইটের জবাব দেওয়া হবে পাথর ছুড়ে।’

Next Article