বীরভূম: সমাজের অগ্রগতি যতই দৃষ্টি আকর্ষণ করুক না কেন, পিছনের অন্ধকারটা কি আর লুকিয়ে রাখা যায়! প্রতিদিন কত শিশু স্কুলছুট হচ্ছে, অর্থ আর সচেতনতার অভাবে আজও কত কিশোর-কিশোরী শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেই হিসেব কে রাখে! তাদের কথা ভেবেই শান্তিনিকেতনের জেলায় এক বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন বীরভূমের জেলা শাসক বিধান রায়। এবার জাতীয় স্তরে সম্মানিত হচ্ছে তাঁর সেই উদ্যোগ। স্কচ পুরস্কার পাচ্ছে বীরভূমের ‘আনন্দ পাঠ’। দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বীরভূমের জেলাশাসকের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে।
মূলত পিছিয়ে পড়া পরিবারগুলিকে শিক্ষার আলো দেখাতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। যে সব শিশুরা পড়াশোনার সুযোগ বা সাহায্য পায় না, তাদের নিয়মিত লেখাপড়ার অভ্যাস তৈরি করার একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল ‘আনন্দ পাঠ’-এর মাধ্যমে। এছাড়া বিশেষভাবে সক্ষম শিশুদের সামাজিক ও মানসিক বিকাশও ছিল লক্ষ্য। বিশেষত করোনা কালে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা দূর করতে বীরভূম জেলা প্রশাসন এই মানবিক উদ্যোগ নিয়েছিল।
এই উদ্যোগে পিছিয়ে পড়া গ্রাম বা পাড়ায় গিয়ে প্রাথমিক স্তরের ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে খোলা আকাশের নীচে খেলতে খেলতে, ছড়া বলতে বলতে, লেখাপড়ার অভ্যাস তৈরি করানো হয়। পড়াশোনা সম্পর্কে ভীতি ও উদাসীনতা দূর করার চেষ্টা করা হয়। পড়াশোনার বাইরে অন্যান্য অন্যান্য নান্দনিক বিষয়ের ওপর যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। বাড়িতেও যাতে একটা শিক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়, সেটা সুনিশ্চিত করা হয় এই ‘আনন্দ পাঠ’-এ।
একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিউনিটি শিক্ষক গ্রামে গ্রামে গিয়ে সকাল ৭ থেকে ৯ টা এবং বিকেল ৪ থেকে ৬টা পর্যন্ত পড়ান। বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকেরা এই উদ্যোগে অংশ নিয়েছেন। বিশেষভাবে সক্ষম শিশুরা যাতে শিক্ষার মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে, সেটাও সুনিশ্চিত করা হয়। এখানে কোনও ক্লাস বা শ্রেণিভিত্তিক পড়াশোনা হয় না। মানসিক স্তরের ওপর ভিত্তি করেই ক্লাস নেওয়া হয়। বেস লাইন সার্ভের মাধ্যমে দেখা হয় কোন শিশু কোন স্তরে রয়েছে। জেলাশাসকের সেই উদ্যোগ আজ বিস্তার লাভ করেছে জেলা জুড়ে। এবার সেই উদ্যোগ স্কচ পুরস্কার পাওয়ায় খুশি বীরভূমের মানুষ।