শান্তিনিকেতন: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় (Visva Bharati University)-তে চলা পড়ুয়াদের আন্দোলন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। তবে, তিন বছর বহিষ্কারের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাকে লঘু পাপে গুরু দণ্ড বলেছেন বিচারপতি। এদিকে তার পরও বিক্ষোভের আঁচ কমেনি। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী (Bidyut Chakrabarty)-র সঙ্গে দেখা করতে আসতেই রেজিস্টার অশোক মাহাতোর গাড়ি ঘিরে শুরু হল বিক্ষোভ। এমনকি তাঁর যাত্রাভঙ্গ করতে গাড়ির সামনে শুয়ে পড়লেন এক ছাত্র।
এদিন কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বাড়ির সামনে হাজির হন বিশ্বভারতীর রেজিস্টার অশোক মাহাতো সহ বেশ কয়েকজন আধিকারিক। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের জেরে ঢুকতে পারেননি তাঁরা উপাচার্যের বাড়িতে। গাড়ি করে তাঁরা যখন উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশ করেছিলেন, সেই সময় গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আন্দোলন শুরু করেন বেশ কয়েকজন পড়ুয়া। গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন আন্দোলনরত ছাত্র সোমনাথ সৌ। এর পরে বাধ্য হয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা না করেই ফিরে যেতে হয় রেসিস্টার ও অন্যান্য আধিকারিককে।
উল্লেখ্য, এদিনই আদালতের তরফ থেকে ছাত্রদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। মামলার শুনানিতে বিচারপতি রাজশেখর মান্থা বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি যে ছাত্রদের সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা ঠিক হয়নি। কিন্তু এটাও ঠিক হচ্ছে না। আমি ছাত্রদের সাসপেনশন তুলে দিতে বলছি। কিন্তু কোনও বাইরের লোক আসবে না। ছাত্ররা আন্দোলন বন্ধ করবে। কোনও রাজনৈতিক দলের নাক গলানো চলবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত অনেক বেশি শাস্তি।’
তবে বিচারপতি সাফ জানিয়েছেন, ভিতরে বা বাইরে সব আন্দোলন বন্ধ করতে হবে। আদালতের এই শুনানির পরেই এদিন দুপুরে উপাচার্যের বাড়ির সামনে হাজির হন বিশ্বভারতী রেজিস্টার অশোক মাহাতো সহ অন্যান্য আধিকারিক। কিন্তু পড়ুয়াদের বিক্ষোভের জেরে ফিরে যেতে হয় তাঁদের। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবি, গত ২৭ তারিখ থেকে আন্দোলন চললেও এই আধিকারিকদের দেখা মেলেনি এতদিন। আজ আদালতের রায় বেরোতেই তাঁরা হাজির হয়েছেন। সেই কারণেই তাঁদের আটকানো হল।
উল্লেখ্য, এদিন আদালতের রায়ের পর অনশন ভঙ্গ করেন সাসপেন্ড হওয়া অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ও ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী। তাঁদের ফলের রস খাইয়ে অনশন ভাঙান আন্দোলনকারীরা। এদিকে রূপার দাবি, আদালত রায় তাঁদের কাছে নৈতিক জয় বটে। কিন্তু এখনও বহিষ্কৃত পড়ুয়ারা ক্লাস করবার অনুমতি পাননি। তাছাড়া তাঁর তো ফাইনাল পরীক্ষা হয়ে গিয়েছে। এতদিন ক্লাস করতে পারেননি। তাছাড়া উপচার্যের তরফে যে তাঁকে মাওবাদী তকমা দেওয়া হয়েছে এতে তাঁর সামাজিক পরিচিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাঁকে চরম মানসিক অশান্তির শিকার হতে হয়েছে। তার মূল্য কীভাবে চোকানো হবে? এই সব দাবি ও অভিযোগ যতদিন না মানা হচ্ছে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে জানান তাঁরা। একইসঙ্গে উপাচার্যের পদ থেকে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর ইস্তফার দাবিতে অনড় তাঁরা। যদিও এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
আরও পড়ুন: প্রেমিকের সঙ্গে ফন্দি করে ‘পথের কাঁটা’কে সরাল স্ত্রী! কবর থেকে দেহ তুলে শুরু ময়নাতদন্ত