বীরভূম: মাত্র সাতদিন। মাত্র সাত দিন আগেই রাজ্য সরকারের বহু প্রতীক্ষিত প্রকল্প দুয়ারে সরকার। গত ১৬ অগস্ট থেকে সরকারি নির্দেশ মেনে দুয়ারে সরকারের শিবিরেই চালু হয়েছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প (Laxmi ka Bhandar)। কিন্তু, চালু হওয়ার মাত্র সাতদিনের মধ্যেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়ে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ও বিশৃঙ্খলার ছবি সামনে এসেছে। ফের তেমনই বিশৃঙ্খলার ছবি সামনে এসেছে নানুরে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম বিলি করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে।
নানুরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাড়ি বাড়ি যান পঞ্চায়েতের স্থানীয় তৃণমূল নেতারা। বাড়ির মহিলাদের ডেকে হাতে হাতে ফর্ম দিয়ে আসেন বলে অভিযোগ। মহিলারা সেই ফর্ম নিচ্ছেনও। ফর্ম পাওয়ার পর এক মহিলা বলেন, “সরকারি ক্যাম্পে অনেক লাইন। সেইজন্য বাড়ি বাড়ি এসে ফর্ম দেওয়ায় আমাদের সুবিধাই হচ্ছে। ভিড়ে দাঁড়াতে হচ্ছে না। পঞ্চায়েত নেতারা এসে ফর্ম দিয়ে গিয়েছেন। পঞ্চায়েতেই ফর্ম জমা দিতে বলেছেন।” এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিন্দায় সরব হয়েছে বিজেপি।
খোদ মুখ্য়মন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন, দুয়ারে সরকারের শিবির ছাড়া আর অন্য কোথাও থেকে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের (Laxmi ka Bhandar) ফর্ম নেওয়া যাবে না। এমনকী শিবিরেই ফর্ম পূরণ করে সেখানেই জমা দিতে হবে, সেখানে কী করে এইভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি করা হচ্ছে? ঘটনায়, তৃণমূল পঞ্চায়েত প্রধান শাশ্বতী মণ্ডল বলেন, “আমরা দল দেখে কোনও কাজ করছি না। আমাদের দলের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি করছেন। করোনাকালে যাতে শিবিরে ভিড় এড়ানো যায়, সংক্রমণ কমানো যায়, তাই এই ব্যবস্থা।” কিন্তু, নবান্নের নির্দেশ অনুযায়ী, সরকারি আধিকারিক ছাড়া এই ফর্ম প্রাপ্তি সম্ভব নয়। মূলত, দুর্নীতি ঠেকাতেই রাজ্য় সরকার এই পদক্ষেপ করেছে। তাহলে, সেই নিয়ম অগ্রাহ্য করে কী করে চলছে ফর্ম বিলি? যদিও এ প্রসঙ্গে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি তৃণমূল নেত্রী।
এই ঘটনায় বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূলের ধারা বরাবরই এরকম। সরকারি প্রকল্পকে দলের কর্মসূচি বানিয়ে ফেলে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম বিলি করছে। এর আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্পে বসে মাংসভাত খাইয়েছে। বরাবরই, দলের পাল্লা ভারী করতে দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিয়েছে।” উল্লেখ্য, সোমবারই বোলপুরে ‘দুয়ারে সরকার’ ক্য়াম্পে মাংস-ভাতে এলাহী ভোজের ব্যবস্থা করে বিতর্কে জড়িয়েছিল তৃণমূল। শাসক শিবিরের ‘সাফাই’ ছিল, সরকারি কর্মীরা যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন সেইজন্যেই ভোজের ব্যবস্থা। এ বার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফর্ম দেওয়াকে কেন্দ্র করে ফের বিতর্কে তৃণমূল।
‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্পে ‘দুর্নীতি’ এই প্রথম নয়। সরকারিভাবে প্রকল্প চালু হওয়ার কথা ঘোষণার পর থেকেই ধূপগুড়ি, মালদা-সহ একাধিক এলাকায় এই দুর্নীতির ছবি সামনে এসেছে। এমনকী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম তুলতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়েছেন এই ছবিও ধরা পড়েছে। কোথাও বা প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নাম করে মোটা টাকা নেওয়ার অভিযোগও সামনে এসেছে। সম্প্রতি, বিজেপি রাজ্য় সভাপতি দিলীপ ঘোষ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বলেছেন, “বাংলার মানুষকে ভিখারি বানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। ৫০০ টাকার জন্য মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছে। মারপিট করছে। পদপিষ্ট হচ্ছে।”
লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ফর্ম নিয়ে যাতে কোনওরকম দুর্নীতি না হয় সে প্রসঙ্গে আগে থেকেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কোনভাবেই সেই ফর্ম ফোটোকপি করা যাবে না একথাও জানিয়েছিলেন মমতা। প্রত্য়েক ফর্মে নির্দিষ্টি ইউনিক কোড থাকবে। সেই ইউনিক কোড প্রত্যেক ফর্মের ক্ষেত্রে আলাদা হবে। পাশাপাশি, গ্রাহকদের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও থাকতে হবে তবেই মিলবে ফর্ম এমনই নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। লক্ষ্মীর ভাণ্ডারকে কেন্দ্র করে দুর্নীতির একাধিক ছবি সামনে আসায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। সরকারি কর্মচারি ও সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে মঙ্গলবার বৈঠক করতে পারেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আরও পড়ুন: ‘বিরুদ্ধস্বর হলেই …’, সাসপেন্ড হওয়া ৩ পড়ুয়াকে সরাসরি বরখাস্ত! প্রশ্নের মুখে বিশ্বভারতীর উপাচার্য