বীরভূম: বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (VBU) উপাচার্য বিদ্যুত্ চক্রবর্তীর ‘বিরুদ্ধ অবস্থানের’ জেরে সাসপেনশনের শিকার হয়েছিলেন তিন পড়ুয়া। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ না করেই বার বার বাড়ানো হচ্ছিল সাসপেনশনের মেয়াদ। এ বার দ্রুত সেই ঘটনার তদন্ত শেষ করে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দিল ইউনিভার্সিটি গ্রান্ট কমিশন তথা ইউজিসি। সম্প্রতি, ইউজিসির তরফে ইমেল পাঠানো হয়েছে বিশ্বভারতীকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের (VBU) সাসপেন্ড হওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে রয়েছেন অর্থনীতি ও রাজনীতি বিভাগের ছাত্র যথাক্রমে ফাল্গুনী পান ও সোমনাথ সৌ। এ ছাড়াও সাসপেনশনের শিকার হন অর্থনীতি ও হিন্দুস্থানী শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিভাগের ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী। চলতি বছরেই গত ১৪ জানুয়ারি এই তিন পড়ুয়াকে সাসপেন্ড করা হয় বলে অভিযোগ। অর্থনীতির অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যের সাসপেনশনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় কর্তৃপক্ষের ‘কঠোর সিদ্ধান্তের’ শিকার হন ওই তিন পড়ুয়া।
সাসপেনশনের সেই সময়সীমা শেষ হতেই ফের সেই মেয়াদ বাড়িয়ে করে দেওয়া হয় জুলাই মাস পর্যন্ত। জুলাইয়ে সাসপেনশনের মেয়াদ ফুরনোর আগেই নতুন করে নোটিস দিয়ে জানানো হয়, সাসপেনশন জারি থাকছে। ওই তিন পড়ুয়া এখনও ক্লাস করতে পারবেন না। এমনকী, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও কাজেই উপস্থিত থাকতে পারবেন না। জুলাই থেকে এই সাসপেনশন বেড়ে জারি থাকবে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এর ফলে, সময়ে পরীক্ষা দেওয়া তো দূর তাঁদের ডিগ্রি অর্জনেও বিস্তর প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়েছে।
তিন পড়ুয়ার উপর থেকে সাসপেনশন প্রত্যাহারের দাবিতে ইউজিসি-কেও ইমেল পাঠিয়েছিল ছাত্র সংঠন এসএফআই। বিশ্বভারতীর অধ্যাপক সংগঠনের তরফ থেকেও একাধিকবার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। বিশ্বভারতীর পাশে দাঁড়িয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্য়ালয়, জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানও। অভিযুক্ত তিন পড়ুয়া ফাল্গুনী পান, সোমনাথ সৌ ও রূপা চক্রবর্তীর সাসপেনশন প্রত্য়াহারের দাবিতে অবস্থান বিক্ষোভ ছাড়াও সরাসরি বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, পরিদর্শক রামনাথ কোবিন্দকে ইমেল করা হয়। তারপরেই বিশ্বভারতীর (VBU) রেজিস্ট্রার-কে ইমেল পাঠালেন ইউজিসি-র আন্ডার সেক্রেটারি। ইমেলে তিন পড়ুয়াকে সাসপেনশনের কারণ ছাড়াও, শতাধিক কর্মীর বদলি, প্রায় ত্রিশ জন অধ্যাপকের বরখাস্তকরণ, বকেয়া বেতন না মেটানো-সহ একাধিক বিষয়ে উল্লেখ করে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল ইউজিসি।
বিশ্বভারতীর এক ছাত্র নেতা জয়দীপ সাহার কথায়, “দিনের পর দিন এভাবে পড়ুয়াদের সাসপেন্ড করে দেওয়া, কোনও কারণ ছাড়াই সাসপেনশনের মেয়াদ বাড়ানো, একাধিক অধ্যাপকদের বরখাস্ত করা-সহ অন্যান্য নানা বিষয়ে উপাচার্যের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আমরা ইউজিসিকে মেইল করেছিলাম। আশা করছি, দ্রুত অবস্থার উন্নতি হবে।” যদিও, বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। আরও পড়ুন: বাড়ছে পড়ুয়াদের সাসপেনশনের মেয়াদ, ‘বিদ্যুৎ বিতর্কে’ বিশ্বভারতী