বোলপুর: আবারও বিস্ফোরক মন্তব্য করে বিতর্কে জড়ালেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। বুধবার বিশেষ উপাসনায় শান্তিনিকেতনের ঐতিহ্যবাহী মন্দিরে ভাষণ দিতে গিয়েছিলেন উপাচার্য। সেখানে কথা প্রসঙ্গে এমন কিছু বলেন, যা রীতিমতো আশ্রমিক, রাবীন্দ্রিক ও প্রাক্তনীদের কর্তব্য জ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন তুলে দেয়। বুধবার মন্দিরে বসে উপাচার্য বলেন, “রাবীন্দ্রিক, আশ্রমিক এবং প্রাক্তনীরা বিশ্বভারতীকে ভোগ করেন। বিশ্বভারতীর প্রতি তাঁদের কর্তব্য পালন করেন না।” উপাচার্য বলেন, “আমি শুনেছিলাম, শান্তিনিকেতনের আশ্রমিকরা বিশ্বভারতীর বিভিন্ন কাজে মতামত দেন, বিশ্বভারতীর কাজে সাহায্য করেন। শুনে খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু, ২০১৯ সালে আমি কাউকে এগিয়ে আসতে দেখিনি।” তাঁর সংযোজন, “২০২০ সালে শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, রাবীন্দ্রিক মনোভাবাপন্ন এবং প্রাক্তনীদের ডেকে অনুরোধ করেছিলাম বিশ্বভারতীর পাশে থাকতে। সে সময় ১০০ জনেরও বেশি ৩০ দফা দাবি নিয়ে আমাকে একটা কাগজ দিয়েছিলেন। সেই কাগজ আমার কাছে এখনও আছে। সেই দাবিতে বলা হয়েছিল, আমাকে এটা ব্যবহার করতে দিতে হবে, আমাদেরকে বিশ্বভারতীর অনুষ্ঠান করতে দিতে হবে ইত্যাদি… অর্থাৎ বিশ্বভারতীতে ভোগ করতে দিতে হবে। কিন্তু আমি যখন তাঁদের অধিকারের জায়গায় কর্তব্য পালন করতে বলি, তখন তাঁদের আর কাউকে দেখা যায় না।” তিনি এও বলেন, এখন কেউ যোগাযোগও করেন না আর।
বিশ্বভারতীর আচার্য তথা দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে কাতরভাবে আবেদন করেন রবীন্দ্রনাথের বংশধর তথা শান্তিনিকেতনের প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর। তাঁর বক্তব্য, বিশ্বভারতীকে বাঁচান, বিশ্বভারতী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, “উনি (উপাচার্য) এই ধরনের কথা প্রায়শই বলে থাকেন। উপাচার্য মনে করেন, এখানকার প্রাক্তনরা অচ্ছুৎ। তিনিই একমাত্র মানুষ যিনি বিশ্বভারতীকে ভালবাসেন। আমি তাঁর কথায় খুব একটা গুরুত্ব দিই না। রবীন্দ্রনাথ নিয়ে আর একটু পড়াশোনা করা দরকার।”
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের জমি বিতর্কের মাঝেই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর এহেন মন্তব্য নতুন করে বিতর্ক তৈরি করেছে। কিছুদিন আগে বোলপুর দিয়ে বিশ্বভারতীর পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। বোলপুরের মাটিতে দাঁড়িয়ে অর্মত্য সেনের পাশে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর সভায় দাঁড়িয়েই মমতা বলেন, রবীন্দ্রনাথের বংশধর সুপ্রিয় ঠাকুর আমার কাছে দুঃখ করছিলেন, তাঁর বাড়ির সামনেও পাঁচিল তুলে দিয়েছেন। বিশ্বভারতীকে গৈরিকীকরণ করতে চান ওঁরা।” সেই সন্ধ্যায় বিশ্বভারতীর তরফেও একটি প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়, “স্তাবকরাই শেষ কথা।” তাতে রাজ্য-বিশ্বভারতী সংঘাত আরও চরমে ওঠে। শাসকদলের তরফে এই প্রেস বিবৃতির তীব্র নিন্দা করা হয়। এরপর আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনোজিৎ মণ্ডলকেও মেইল করে বিতর্ক বাড়ান।