বীরভূম: দেউচা পাচামিতে কয়লা শিল্প করতে গিয়ে প্রথম থেকেই নানা বাধার মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এই খোলামুখ কয়লাখনি নিয়ে জট কাটাতে ইতিমধ্যেই দফায় দফায় বৈঠক করেছে জেলা প্রশাসন। অবশেষে গত সপ্তাহেই শুরু করা গিয়েছে কয়লার বোরিংয়ের কাজ। কত ফুট নিচে কয়লা রয়েছে মূলত তা জানতেই বোরিং চলছে। এরইমধ্যে সোমবার ফের বৈঠকে জেলা প্রশাসন। পিডিসিএল-এর সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার আধিকারিকও। এদিন বৈঠক শেষে বীরভূমের জেলাশাসক জানান, কাজ এগোচ্ছে। জমিদাতাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমস্ত বাধা কেটে এই প্রকল্প এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি।
সব ঠিকমতো এগোলে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম খোলামুখ কয়লা খনিটি হবে দেউচা পাচামিই। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে গেলে প্রায় ২১ হাজার পরিবারকে সরাতে হবে। এদিকে এই এলাকার সিংহভাগই আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা। প্রথম দিকে এই প্রকল্প নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছিলেন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই প্রকল্প হলে এলাকা আসানসোল কিংবা রানিগঞ্জের মতো শিল্পতালুকের চেহারা নেবে। এর ফলে সমগ্র ভৌগলিক ও সামাজিক চিত্রটাই এখানকার বদলে যাবে।
যদিও সরকার তাঁদের যথাযথ পুনর্বাসন প্যাকেজ দিয়েই জমি অধিগ্রহণের কথা ঘোষণা করে। তবু অস্বস্তি পিছু ছাড়েনি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির ১০ বিধায়ক দেউচা ঘুরে আসেন গত এপ্রিলে। বিরোধিতার সুর চড়ান তিনি। পাল্টা শাসকদল সরব হয়, দেউচা পাচামি নিয়ে মানুষকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই ধীরে ধীরে জট কেটে ইতিবাচক সাড়াও মেলে।
এদিন বোলপুর সার্কিট হাউসে দেউচা পাচামি কয়লা খনি নিয়ে যে বৈঠক হয়, সেখানে ছিলেন পিডিসিএল-এর ডিরেক্টর পিবি সেলিম, রাজ্য গ্রামোন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, রাজ্য পুলিশের ডিআইজি শ্যাম সিং, বীরভূম জেলাশাসক বিধান রায়, পুলিশসুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। বৈঠক শেষে বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, “কোনও সমস্যা নেই। দেউচা-পাচামির মানুষজন আমাদের মা, ভাই, বোন৷ আমাদের পরিবার৷ তাই আলোচনার মাধ্যমেই সমাধানের পথ বেরোচ্ছে৷ আলোচনায় সব সমস্যার সমাধান হয়, এক্ষেত্রেও তাই হবে। আমাদের এই বৈঠক একেবারেই রুটিন বৈঠক ছিল। প্রতি মাসেই আমরা বসি, কত দূর কাজ এগোল তা নিয়ে একটা পর্যালোচনা হয়।”