কোচবিহার: কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) হলফনামা তলবের মাস দেড়েকের মধ্যেই শীতলকুচি-গুলিকাণ্ডে রিপোর্ট পেশ করল সিআইডি। বৃহস্পতিবার, প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তবের ডিভিশন বেঞ্চে রিপোর্ট জমা দেয় সিআইডি (CID)।
আদালত সূত্রে খবর, নতুন বছরে অর্থাত্, ২০২২-এ ১২ জানুয়ারি, শীতলকুচি মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। গত ১২ এপ্রিল প্রথম শীতলকুচি-কাণ্ডে মামলা দায়ের করা হয়। মামলা করেন আইনজীবী আমিনুদ্দিন খান। সূত্রের খবর, সিআইডির পেশ করা রিপোর্টে লেখা হয়েছে, শীতলকুচি-কাণ্ডের তদন্ত শেষ করেছে সিআইডি। গুলিকাণ্ডের তদন্ত করতে সিআইএসএফ জওয়ানদের সামনাসামনি জেরা করার আবেদনও জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে সিআইএসএফ জওয়ানদের সামনাসামনি জেরা করার আবেদন করেছিল সিআইডি। যদিও, সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তরফে বলা হয়, অনলাইনে ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলতে পারে। সিআইএসএফের সেই আবেদন কার্যত খারিজ করেছে সিআইডি। বৃহস্পতিবার আদালতে পেশ করা রিপোর্টে, সিআইএসএফ জওয়ানদের সামনাসামনি জেরা করতে চেয়ে আবেদন জানিয়েছে সিআইডি।
শীতলকুচি বুথে গুলিকাণ্ডে (Shitalkuchi Firing Case) কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে হলফনামা আগেই তলব করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। কোচবিহারের শীতলকুচিতে বিধানসভা ভোটগ্রহণের দিন অশান্তিতে মৃত্যু হয় ৪ জনের। এই প্রেক্ষিতে কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয় জোড়া জনস্বার্থ মামলা (PIL)। এই মামলার শুনানিতে কেন্দ্র ও রাজ্য, উভয়ের কাছেই হলফনামা চায় আদালত।
জোড়া জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে আদালত জানায়, শীতলকুচির গুলিকাণ্ডে সিআইডি (CID) তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে রিপোর্ট আকারে হলফনামা দিতে হবে রাজ্যকে। অন্যদিকে সিআইএসএফ গুলি কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে চালিয়েছিল, তার কার্যকারণ ইত্যাদি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে এই মর্মে কেন্দ্রের কাছ থেকেও একটি হলফনামা নেবে আদালত। কেন্দ্র ও রাজ্যের কাছে এই পিটিশন তলব করে নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের ডিভিশন বেঞ্চ। নভেম্বর মাসেই এই মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল।
উল্লেখ্য, চতুর্থ দফার ভোটে শীতলকুচির বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে ৪ জন তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়। ভোটের দিন আনন্দ বর্মণ নামে একজন ভোটের লাইনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। ওই মামলায় ইতিমধ্য়েই তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই-এর তদন্তকারী দল। ৪ তৃণমূল নেতা ও কর্মীদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তল্লাশির খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। তবে কাউকেই এ দিন গ্রেফতার করতে পারেনি তদন্তকারী দলের অফিসাররা। এদিকে বিধানসভা নির্বাচনের দিন জোড়পাটকির বুথে সিআইএসএফ গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। যা নিয়ে জোর শোরগোল শুরু হয় রাজ্য রাজনীতিতে। এর পর স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের ভিত্তিতে একটি এফআইআর রুজু হয়। আরও একটি এফআইআর করে সিআইএসএফ।
এদিকে ভোট পরবর্তী হিংসা (Post Poll Violence) মামলায় আরও একটি চার্জশিট (Chargesheet) পেশ করেছে সিবিআই (CBI)। তাতে কোচবিহারের (Coochbihar) শীতলকুচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছিল মানিক মৈত্র (Manik Moitra) নামে এক ব্যক্তির মামলা যুক্ত হয়েছে। সেই মামলায় চার্জশিট পেশকরা হয়েছে। চার্জশিটে মোট ৬ জনের নাম রয়েছে, যার মধ্যে চার তৃণমূল নেতা পলাতক বলে খবর।
শীতলকুচির ছোট শালবাড়িতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় মানিক মৈত্র নামে ওই যুবকের। এলাকারই বাসিন্দা বছর ৩০-এর মানিক মৈত্রের পেটে গুলি লেগেছিল। অভিযোগ, ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই এলাকায় অশান্তি ছড়াতে শুরু করে। বাসিন্দারা অভিযোগ করেছিলেন, এলাকায় বাড়ি ভাঙতে এসেছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। লুঠপাটও চালানো হয়। সংঘর্ষের খবর পেয়েই দেখতে গিয়েছিল মানিক। এরপর গুলি চলে সেখানে। কোনওভাবে গুলি লাগে মানিকের পেটে। তাঁকে দিনহাটা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসক মানিককে মৃত বলে ঘোষণা করেন।