কোচবিহার: তখনও ভোরের আলো সেভাবে ফোটেনি। তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে আর্তনাদ, গোঙানিতে ঘুম ভেঙেছিল প্রতিবেশীদের। লাল রঙা বাড়ি থেকে ভেসে আসছিল ‘বাঁচাও বাঁচাও’ আর্তনাদ। ভীষণরকমভাবে চিৎকার করছিল তৃণমূল নেতার দুই মেয়ে। হামলা যে হয়েছে, তা আঁচ করতে পেরেছিলেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু প্রথমটায় বুঝতে পারছিলেন না, এটা কি আদৌ রাজনৈতিক ইস্যু! তবুও প্রতিবেশীরা ছুটেছিলেন বাঁচাতে। ততক্ষণে ছুরি হাতে এক যুবককে উদভ্রান্তের মতো দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় বাড়ি থেকে। কয়েকজন তার পিছুও নেয়। তৃণমূল নেতা ও তাঁর স্ত্রী তখন ক্ষতবিক্ষত শরীরে কাতরাচ্ছেন, আর দুই মেয়ে পাগলের মতো কেঁদে যাচ্ছে। সাতসকালে শীতলকুচির ভয়ঙ্কর ঘটনার নেপথ্যে কি কেবলই ব্যর্থ প্রেমিকের আক্রোশ? শুক্রবার ভয়ঙ্কর ঘটনার সাক্ষী থাকল শীতলকুচি।
পাশের গ্রামের যুবকের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব, তারপর ঘনিষ্ঠতা। মেয়ের পরিবার জেনে গিয়েছিল সবটা। মেয়ের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি বাবা মা। আর তাতে মেয়ের প্রেমিকের সমস্ত আক্রোশ গিয়ে পড়ে প্রেমিকার বাবা-মায়ের ওপর। আর সেই কারণেই তৃণমূল নেতার বাড়িতে ঢুকে কুপিয়ে খুনের অভিযোগ উঠল মেয়ের প্রেমিকের বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যা ও তাঁর স্বামীর। আহত হন প্রেমিকা ও তাঁর দিদিও। পরে প্রেমিকার দিদিরও মৃত্যু হয়। শীতলকুচির হসপিটাল পাড়া এলাকার ঘটনায় উঠছে একাধিক প্রশ্ন। কেবলই কি ব্যক্তিগত আক্রোশ নাকি রয়েছে কোনও রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও? মৃত নীলিমা বর্মন শীতলকুচি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য। তাঁর স্বামী বিমল চন্দ্র বর্মন তৃণমূলের এসসিএসটি ওবিসি সেলের শীতলকুচি ব্লক সভাপতি। কাকভোরে হাড়হিম হত্যাকাণ্ড কোচবিহারের শীতলকুচিতে।
শুক্রবার ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ এই ঘটনার পরই এলাকায় তুমুল উত্তেজনা ছড়িয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে ওই দম্পতির মেয়ে ইতি বর্মন প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিল পাশের গ্রামের যুবক বিভূতি রায়ের সঙ্গে। যা নিতে তীব্র আপত্তি ছিল তার বাবা-মা দুজনেরই। বেশ কিছুদিন ধরে পরিবারে এই নিয়ে অশান্তিও চলছিল।
অভিযোগ, শুক্রবার কাকভোরে বিভূতি হাতে একটি কাঠারি নিয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। অতর্কিতে হামলা চালাতে শুরু করে সে। প্রেমিকার মাকেই সবার আগে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপায়। এরপর কোপায় বাবাকে। বাধা দিতে গিয়ে আহত হয় প্রেমিকা ও তার দিদিও। একাধিকবার নৃশংসভাবে কোপানো হয়েছে বিমল বর্মন ও তাঁর স্ত্রী নীলিমাকে। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে যতক্ষণে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘরে ঢোকেন, ততক্ষণে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন দুজন। স্থানীয় বাসিন্দারাই গিয়ে অভিযুক্ত যুবককে ধরে ফেলেন। তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ এলাকায় তীব্র উত্তেজনা রয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “হঠাৎ করেই ভীষণ চিৎকার চেঁচামেচি শুনতে পেয়েছিলাম। আমরা প্রথমটায় বুঝতেই পারিনি। যখন দৌড়ে যাই, দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে কাতরাচ্ছেন ওরা। উদ্ধার করে তাড়াতাড়়ি হাসপাতালে নিয়ে যাই। কয়েকজন আবার তাড়া করেছিলেন। ওই যুবককে হাতেনাতে ধরে ফেলে।”