কোচবিহার: বাবা ছিলেন দাপুটে ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা এবং রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী। পরিবর্তনের সুপারসাইক্লোনের মধ্যেও সেই বাবার দেখানো পথে বাবার আসনেই সিংহ বিক্রমে লড়ে ২০১১ সালে দিনহাটা ধরে রেখেছিলেন ছেলে। দলের প্রতি সমালোচনায় দীর্ঘকাল সরব থাকার পর ২০১৫ সালে শিবির বদলান সেই ছেলে। যোগ দেন শাসক তৃণমূলে। বর্তমানে সেই তৃণমূল সরকারের মন্ত্রী পদে থাকা ছেলেই নিয়োগ দুর্নীতির দুর্বিপাকে পড়া দলের পাশে থেকে বাবার সময়কার অতীত ‘সত্য’ সামনে আনলেন। রাজ্যের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী কমল গুহের পুত্র তথা রাজ্যের বর্তমান উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ শনিবার বলেন, “বাম আমলে আমার বাবাও চাকরি দিয়েছেন”।
নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এখন ল্যাজে গোবরে অবস্থা তৃণমূলের। এই আবহে বামেদের ৩৪ বছরে নিয়োগ দুর্নীতির ‘ময়নাতদন্ত’ শুরু করেছে তৃণমূল (Trinamool Congress)। নির্দেশ দিয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। শীঘ্রই সামনে আসবে বামেদের দুর্নীতির শ্বেতপত্র, ইতিমধ্যে বলে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর স্ত্রী-র চাকরি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল। বাম আমলে নিজেদের লোককে যে চাকরি পাইয়ে দেওয়া হতো তা ইতিমধ্যে স্বীকার করে নিয়েছেন রাজ্যের আরেক প্রাক্তন বাম মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লাও। এমন আবহে এবার বিস্ফোরক উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহও। বাম আমলেও চাকরি নিয়ে যে দুর্নীতি হত তা কার্যত স্বীকার করলেন এই প্রাক্তন মন্ত্রী-পুত্র। শুধু তাই নয়, তাঁর বাবা তথা মন্ত্রী কমল গুহও যে অনেকের চাকরি করিয়ে দিয়েছেন তাও এদিন স্বীকার করে নিয়েছেন তৃণমূল-মন্ত্রী উদয়ন।
বাম আমলে চাকরি দুর্নীতি প্রসঙ্গে সম্প্রতি টিভি৯ বাংলায় বিস্ফোরক মন্তব্য করেন প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা। তিনি বলেন, “হ্যাঁ, হয়েছিল দুর্নীতি। কোনও ছেলে পার্টির হোলটাইমার হলে তাঁর বউকে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা হতো বাম জমানায়।” সেই সুরে সুর মিলিয়ে শনিবার উদয়ন গুহ বললেন, “সেই সময় আমি ফরওয়ার্ড ব্লক করতাম। তখন চাকরিটা ভাগ হত। সিপিএম-এর লোকজন প্রথমে পেতেন। তারপর ফরওয়ার্ড ব্লক। আর বাকি অংশ আরএসপি-সিপিআই-এর জন্য রাখা হত। সেই কোটা অনুযায়ী যাঁর নাম দেওয়া হত তিনি মাস্টার। শুধু দেখা হত মাধ্যমিক পাশ কি না। প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক হওয়ার জন্য যোগ্যতাই লাগত না।”
এরপরই নিজের বাবা তথা বাম আমলের প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী কমল গুহ প্রসঙ্গে মুখ খোলেন উদয়ন। বলেন, “আমার বাবাও চাকরি দিয়েছেন। দলের স্বার্থেই দুর্নীতি করেছেন কমল গুহ। বাবাকে বাঁচাতে কোনও কথা বলব না।” প্রসঙ্গত, শনিবার তৃণমূলের এই নেতা শুধু তাঁর বাবাকেই দায়ী করেছেন এমনটা নয়। তিনি আজ স্পষ্টত টিভি৯ বাংলার ক্যামেরার সামনে বলেছেন যে তিনিও চাকরির সুপারিশ করেছেন। যাঁদের নাম চাকরি দেওয়ার লিস্টে ছিল তাঁদের চাকরি হয়েছে। ফলে বাবা শুধু নয়, তিনি নিজেও এই দায় নিয়েছেন। বলেছেন, ১৯৭৭ সালের পর থেকে বাম জামানায় যে যে চাকরি হয়েছে তাতে কোটা পদ্ধতি ছিল। বড় শরিক সিপিএম পেত ৬০ শতাংশ। ফরওয়ার্ড ব্লক পেত ৩৫ শতাংশ। বাকি ৫ শতাংশ পেত আরএসপি। ফলে গোটা প্রক্রিয়া যে দলীয় কার্যালয় থেকেই হত তা স্পষ্টত স্বীকার করেন উদয়ন।
বিজেপির বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, “যোগ্য পুত্র উদয়ন গুহ। পিতা চোর এটা অন্য কাউকেই বলতে হবে না। তিনি নিজেই তার পিতা কমল গুহকে চোরের আসনে বসিয়েছেন।”