মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Image Credit source: Facebook
কোচবিহার: পঞ্চায়েত ভোটের (Panchayat Election 2023) নির্বাচনে প্রচারে নেমে পড়েছেন খোদ তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। রবিবার বিকালে কোচবিহারে পা রাখেন তিনি। সোমবার সকাল ১১টা থেকে কোচবিহারের দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রের চান্দামারি প্রাণনাথ হাই স্কুল মাঠে মমতার সভার আয়োজন করে জেলা তৃণমূল। সকাল থেকেই বাড়তে শুরু করে ভিড়। এ বি এন শীল কলেজ মাঠ থেকে হেলিকপ্টারে আসেন চান্দামারির সভামঞ্চে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে এটাই মমতার প্রথম জনসভা। এদিকে এই কোচবিহার জেলাতেই বিএসএফের বিরুদ্ধে পাচারকারী সন্দেহে লাগাতার সাধারণ মানুষকে গুলি করে মেরে ফেলার অভিযোগ তুলেছে তৃণমূল। এদিন সভামঞ্চে উঠেই বিএসফের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা আক্রমণ শানাতে শুরু করেন মমতা। ডেকে নেন স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের।
- এক স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের পাশে নিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা ওদের হয়ে ঈশ্বরের কাছে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। ওরা সন্তান হারিয়েছে। ওরা সব হারিয়েছে। কোচবিহারে গুলি করা মারাটা যেন একটা অধিকারের মধ্যে পড়ে গিয়েছে। এরা করবে দেশ শাসন!”
- “সবথেকে বড় দস্যু-ডাকাত বিজেপির মন্ত্রী খুন করে ঘুরে বেড়ায়। তাঁর বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয় না। পঞ্চায়েতে মানুষ বিএসএফের গুলি খাচ্ছে আর উনি আফ্রিকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন।”
- “আমি সবাইকে খারাপ বলি না। কিন্তু, আমি নিশ্চয় প্রশাসনকে বলব নজর রাখতে। ১৫ কিলোমিটার যেটা ছিল সেটা গায়ের জোরে একতরফাভাবে ৫০ কিলোমিটার করেছে। আমার কাছে খবর আছে নির্বাচনের সময় বর্ডারে বর্ডারে গিয়ে আপনাদের তারা ভয় দেখাবে। বলবে তুলে নেব। সিবিআই লাগাব, ইডি লাগাব। আমি বলি কিছু করতে পারবে না। আইনত আইন-শৃঙ্খলা রাজ্য সরকারের আওতায় পড়ে। কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় পড়ে না।”
- “ভয় দেখালে অভিযোগ জানাবেন। ভয়ে ঘরে বসে থাকবেন না। মনে রাখবেন যে শহিদ পরিবার আজকে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে তার বদলা নিতে পঞ্চায়েতে তৃণমূলকে ভোট দিতে হবে। আপনার পরিবার যাতে কোনওদিন খালি না হয়ে যায় তার জন্য আপনাকেই লক্ষ্য রাখতে হবে।”
- “আমি পুলিশকে বলেছি গুলি যদি কেউ চালায় তাঁর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিন। এফআইআর হবে। সরকার ব্যবস্থা নেবে। কারণ গুলি করে মারবার অধিকার কারও নেই।”
- “আমাদের পক্ষ থেকে আমরা এই পরিবারগুলিকে দেখব। আমরা দেখব যাতে ওরা অসহায় হয়ে না পড়ে। এখন নির্বাচন চলছে তাই আমি মঞ্চে সব বলতে পারছি না। কিন্তু, মনে রাখবেন মানুষ বিপদে পড়লে আমরা সবটাই তাঁর জন্য করি। মানুষ জানে তাঁদের ছেলেমেয়েরা বিপদে পড়লে তাঁদের রক্ষা করার দায় আমাদের। আমি চেষ্টা করি যেখানেই মানুষ বিপদে পড়ে সেখানেই গিয়ে তাঁদের সাহায্য করতে।”
- ফের মমতার মুখে একশোদিনের টাকার প্রসঙ্গ। এদিন মঞ্চ থেকেই বিজেপির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, “পঞ্চায়েত ভোটে জিতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের থেকে এই টাকা আদায় করে ছাড়ব। বাংলার বাড়ির টাকা ওরা বন্ধ করে দিয়েছে। আগামীতে বাংলার টাকা না দিলে আগামীতে বিজেপিকে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত করব। নতুন সরকার ভারতে আসবে। আমরা টাকা নিয়ে আসব। আমরা বাংলার বাড়ি করে দেব। একটু ধৈর্য ধরুন।”
- “ওরা আমেরিকায় গিয়ে সরকারের টাকা নষ্ট করছে। আমেরিকাকে সন্তুষ্ট করছে। মোদীবাবু নেতা হবেন। কখনও রাশিয়ায় যাচ্ছেন। রাশিয়ায় গিয়ে প্লেন কিনছেন। কখনও ফ্রান্সে যাচ্ছেন। ওখানে গিয়ে প্লেন কিনছেন। আর আমার গরিব ঘরের ভাই-বোনেরা একশোদিনের কাজের টাকা পাচ্ছে না। এই হচ্ছে বিজেপির ডাবল ইঞ্জিন সরকার।”
- কিছু কিছু জায়গায় কেউ কেউ চুরিও করবে আবার প্রার্থীও হতে চেয়েছে। এটা আমরা হতে দিচ্ছি না। এবার থেকে পঞ্চায়েত আমরা নিজেরা নিয়ন্ত্রণ করব। যাতে কেউ চুরি করতে না পারে তাই এটা করব। মনে রাখবেন কাউকে এক পয়সাও দেবেন না। জনগণের যত স্কিম আছে এর জন্য সরকার এক পয়সাও আপনার থেকে নেয় না। এটা সরকারের টাকা। যদি কেউ টাকা চায় তাহলে তাঁর ছবি তুলে আমার কাছে পাঠিয়ে দেবেন। তারপর আমি দেখব কার কত বড় ক্ষমতা।
- পঞ্চায়েতে তিনটে ভোট দিতে হবে আপনাদের। একটা দিতে হবে গ্রাম সভায়, একটা পঞ্চায়েত সমিতিতে, একটা জেলা পরিষদে। জোড়া ফুল দেখিয়া ভোট দাও ঠাসিয়া, এক দুই তিন বিজেপিকে বিদায় দিন। এক দুই তিন যারা গুলি চালাচ্ছে তাদের বিদায় দিন।
- আমরা ১১ বছরে যা করেছি আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি গোটা পৃথিবীর কেউ করতে পারেনি। আজকে বাংলা মডেল তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই বিজেপি আমাদের উপর হিংসা করে। ওদের হিংসা করতে দিন। ওরা দেশটাকে বেচে দিতে চায়। ওদের আমরা দেশ বেচতে দেব না। মনে রাখবেন ওদের ডাবল ইঞ্জিন একটা পঞ্চায়েত নির্বাচনে ফুটো হবে আর একটা লোকসভা নির্বাচনে ফুটো হবে। তাই মানুষের সরকারকে ভোট দিন। মানুষের সঙ্গে থাকুন। যদি আমাদের কেউ কোনও দুঃখ দিয়ে থাকে আপনাদের তাহলে আমি তাঁদের হয়ে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইছি। ভুল বুঝবেন না। যদি কেউ দুষ্টুমি করে দুটো চড় মারবেন। এই অধিকার আমি আপনাদের দিয়ে গেলাম।