কোচবিহার: কোচবিহারের রামভোলা হাইস্কুলের ছাত্র চন্দ্রচূড় সেন। মাধ্যমিকে রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছে সে। ব্যবসায়ী পরিবারের ছেলে চন্দ্রচূড়। মা বরাবরই ঘর সামলেছেন। মেধা তো বটেই, সেই চন্দ্রচূড়ের কথা শুনতে অবাক হতে হয়। এই বয়সে এতটাই পরিণত তার কথা, তার চিন্তাভাবনা, যা তাকে ‘ব্যতিক্রমী’ করে তুলেছে। নিয়োগ দুর্নীতি, তাতে আদালতের রায় ও একসঙ্গে ২৫ হাজারের বেশি শিক্ষকের চাকরি যাওয়া প্রসঙ্গেও চন্দ্রচূড়ের চিন্তাভাবনা তাকে এগিয়ে রাখল বয়সের তুলনায় অনেকটাই।
সে যে ব্যতিক্রমী, তা টের পাওয়া যায়, চন্দ্রচূড়ের বেডরুমে ঢুকলেই। দশ বাই বারো একটি ঘর। তার সঙ্গে অ্যাটাচড বাথরুম। ঝা চকচকে ঘরে একটা দেওয়াল আলমারি। তাতে সারি দিয়ে সাজানোর তার পুরস্কার। সঙ্গে রয়েছে বাবা-মায়ের সঙ্গে চন্দ্রচূড়ের বেশ কিছু ছবি। দেওয়ালের বিভিন্ন জায়গায় লাগানো রয়েছে স্টিকি নোট। সেখানে লেখা কয়েকটা শব্দবন্ধ দেখলেই বোঝা যায় চন্দ্রচূড় তার বয়সের তুলনায় কতটা পরিণত।
দেওয়ালের একটা জায়গায় লেখা, ‘ইউ আর এ মাধ্যমিক স্টুডেন্ট, মাইন্ড ইট…’ কেন? প্রশ্ন করা হয়েছিল চন্দ্রচূড়কে। সে বলে, “সেলফ মোটিভেশনের জন্য। দিনরাত পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক ক্লান্তি চলে আসে। মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। এই ধরনের লেখা লিখে একটা সেল্ফ মোটিভেশন পেতাম।”
ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ে মোবাইলের প্রতি কিছুটা আসক্তি বেড়েছিল চন্দ্রচূড়ের। নিজেই সেকথা জানায়। ইউটউবে ‘ইনফরমেটিভ ভিডিয়ো’ই দেখত সে। কিন্তু তাতে পড়াশোনার সময় নষ্ট হচ্ছিল। তাই আজও চন্দ্রচূড়ের বাথরুমের দরজার পাশে লেখা, ‘ইউ হ্যাভ বুক, সো হোয়াই মোবাইল?’
সাম্প্রতিক কালের বহু চর্চিত নিয়োগ দুর্নীতি, অযোগ্য শিক্ষক প্রসঙ্গেও প্রশ্ন করা হয়েছিল চন্দ্রচূড়কে। সে বলে, “আইন তো সবার জন্যই সমান। শিক্ষকদের যোগ্যতা বিচার করার ক্ষমতা আমার নেই। তবে এক্ষেত্রে দেশের ভাবী নাগরিক হিসাবে যেটুকু আমি বলতে পারি, যাঁরা অসৎ উপায়ে শিক্ষক হয়েছিলেন, তাঁদের জন্য যাঁরা নিষ্ঠার মাধ্যমে পরিশ্রমের মাধ্যমে শিক্ষকতাকে নিজের পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন, তাঁদের ওপর প্রভাব পড়ছে। যদি এই বিষয়টা পুর্নমূল্যায়ন করা হয়, দেখা হয়, যাঁরা বৈধ উপায়ে চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের কীভাবে পুনরায় চাকরি করার সুযোগ করে দেওয়া যায়। কারণ সংসারের অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা তাঁদের ওপর রয়েছে।”
মাধ্যমিকের রেজাল্ট দেখতে ক্লিক করুন: