বালুরঘাট : কলেজের সরস্বতী পুজো (Saraswati Puja 2023) কে করবে তা নিয়ে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা। যার জেরে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়াল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট কলেজে (Balurghat College)। সূত্রের খবর, সরস্বতী পুজো নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই ঠান্ডা লড়াই চলছিল টিএমসিপির দুই গোষ্ঠীর মধ্যে। তবে এদিন ভেঙে যায় সব বাঁধ। সূত্রের খবর, কলেজে পরীক্ষা চলাকালীন অধ্যক্ষের ঘরের সামনেই দুই পক্ষ বচসায় জড়িয়ে পড়ে। তবে শেষ পর্যন্ত অধ্যক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রসঙ্গত, গত বছর ভর্তির নামে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে এই কলেজে। এমনকী কলেজ ইউনিয়ন রুমে মদ্যপানের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে। একে অপরের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের দুই গোষ্ঠী। যা নিয়ে তৃণমূল জেলা নেতৃত্বকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। শুধু তাই নয়, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষেও দুই গোষ্ঠীর গোলমালে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল বালুরঘাট। এবারে নতুন করে সরস্বতী পূজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, এই নিয়ে বিবাদ তৈরি হওয়ায় অস্বস্থিতে জেলা নেতৃত্ব।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘ প্রায় আট বছর ধরে বালুরঘাট কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন হয়নি। বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলির অস্তিত্ব এই কলেজে কার্যত নেই বললেই চলে। রাজত্ব শুধুই টিএমসিপির। তবে সেই ‘রাজত্বে’ ঘুণ ধরাচ্ছে গোষ্ঠী কোন্দল। কোন্দল মেটাতে বারেবারে বৈঠকে বসতে হয়েছে জেলা নেতৃত্বকে। কলেজে তৈরি করা হয় নয়া ইউনিট। সূত্রের খবর, নয়া কমিটির দুই নেতার মধ্যেই ঠান্ড যুদ্ধ চলছে দীর্ঘদিন থেকে। শোনা যাচ্ছে মনি দাস ও সুরজ সাহা, এই দুই ছাত্র নেতার দুই গোষ্ঠীই বর্তমানে সরস্বতী পুজোর নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিতে চাইছে। এদিকে দিন কয়েক আগেই সরস্বতী পুজোর জন্য কলেজের কিছু পড়ুয়াকে নিয়ে একটি প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছে। অধ্যক্ষ নিজেই এই কমিটির সম্পাদক। এই কমিটিতে থাকা ছাত্রছাত্রীরাই সরস্বতী পুজোর আগাম কাজকর্মগুলি করছে বলে খবর। কিন্তু, তারমধ্যেই এবার পুজো নিয়ে একেবারে সরাসরি সংঘাতে জড়াল শাসকদলের দুই ছাত্র নেতা। যা নিয়ে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে গোটা কলেজেই।
এ প্রসঙ্গে বালুরঘাট কলেজের ছাত্র তথা মনি দাস শিবিরের টিএমসিপি কর্মী অভিজিৎ সূত্রধর বলেন, “আমরা কলেজের ছাত্রদের নিয়েই পুজোর আয়োজন করছি। কিন্তু ওই পক্ষ ওদের কিছু বহিরাগতদের এনে পুজোর আয়োজন করতে চাইছে। বিষয়টিতে আমরা বাধা দিলে আমাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই কলেজের ছাত্রদের নিয়েই পুজোর আয়োজন হোক।” অন্যদিকে, পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সুরজ সাহা শিবিরের টিএমসিপি কর্মী দেবজিৎ দে বলেন, “আমরা পুজোর আয়োজন করছিলাম। কিন্তু বাইরে থেকে কিছু ছেলে এসে আমাদের আয়োজনে নানা ত্রুটির ধরে। সেই বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রিন্সিপালকে জানিয়েছি। ওরাই উল্টে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। সরস্বতী পুজোয় বাইরের ছেলেরা যাতে না আসে সেটা দেখা হোক।”
এবিষয়ে তৃণমূল জেলা ছাত্র সভাপতি অতনু রায় বলেন, “সরস্বতী পুজো কলেজের ছাত্রদের নিয়েই করতে হবে। এ কথা আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া বাইরে থেকে কেউ যাতে সরস্বতী পুজোয় হস্তক্ষেপ না করে সেই বিষয়েই ছাত্র নেতাদের বলা হয়েছে। তবুও কেউ যদি কেউ নিয়ম না মানে তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” কলেজের অধ্যক্ষ পঙ্কজ কুন্ডু বলেন, “কলেজের ছাত্ররা আমার কাছে এসেছিল। কলেজে যেহেতু নির্বাচিত সংসদ নেই। তাই সব ছাত্রদের সঙ্গেই কথা বলে একটা কোর কমেটি করে দেওয়া হয়েছে। সেই কমেটি সরস্বতী পুজোর আয়োজন করবে। এক্ষেত্রে কোনরকম গোলমাল হবে না। প্রতিবছর যেমন পুজোর আয়োজন হয়। সেভাবে এবারও আয়োজন হবে বলে আশা করছি।”