বালুরঘাট: প্রত্যন্ত জেলা হিসেবেই পরিচিত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা। এই জেলার সদর হাসপাতালটি রয়েছে বালুরঘাটে। যেখানে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক চিকিৎসক নিয়ে চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে আসছিলেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল থেকে ৮ জন চিকিৎসক বদলি হয়ে গেলেন। জুনিয়র, প্রসূতি ও মেডিসিন মিলিয়ে মোট ৮ জন চিকিৎসক হাসপাতালে থেকে বদলি হয়ে গেলেন। চিকিৎসকদের বেশিরভাগই কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য আবার কেউ বাড়ির কাছে বদলি হয়ে চলে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। যার ফলে মেডিসিন ও প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসকের ফের অভাব হয়ে গেল বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। এদিকে ফের হাসপাতালে চিকিৎসকের অভাব হয়ে যাওয়ায় পরিষেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
জেলা হাসপাতালের তরফে জানা গিয়েছে, কয়েক মাস আগে হাসপাতালের তরফে ১০ জন জুনিয়র চিকিৎসক বা হাউজ় স্টাফ নিয়োগ করা হয়। জেলা ও জেলার বাইরের চিকিৎসকরা বালুরঘাট হাসপাতালে এসে যোগ দেয়। কয়েক মাস যেতে না যেতেই ৫ জন জুনিয়র চিকিৎসক চলে যায়। এদের মধ্যেও বেশিরভাগই উচ্চশিক্ষার জন্য আবার অনেকে বাড়ির কাছে হাসপাতালে সুযোগ পেয়ে চলে গিয়েছে।
অন্যদিকে, আরও হাসপাতালের দু’জন মেডিসিন চিকিৎসক এবং আরও একজন প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ চলে গিয়েছে৷ আরও একজন বদলি হওয়ার মুখে বলে জানা গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, এই তিন জনও মূলত উচ্চশিক্ষা ও কলকাতার আশপাশের হাসপাতালে যোগ দিচ্ছে। যার ফলে হাসপাতালে ফের চিকিৎসকের সংখ্যা কমে গিয়েছে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় মেডিক্যাল কলেজ নেই৷ জেলার প্রায় ১৯ লক্ষ মানুষের চিকিৎসার জন্য ভরসা বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল। কিন্তু হাসপাতালের হাতে রয়েছে মাত্র ৫০ শতাংশ চিকিৎসক। প্রতিটি বিভাগেই দ্বিগুণ চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও অর্ধেক চিকিৎসকদের নিয়েই হাসপাতাল চলছে। এদিকে হাসপাতালের এই পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাস্থ্য ভবন থেকে ১০ জন জুনিয়র চিকিৎসক নিয়োগ করা হয়। কিন্ত কয়েক মাসের মধ্যে একজন করে চিকিৎসক চলে যান৷ সবমিলিয়ে মোট পাঁচ জন জুনিয়র চিকিৎসক চলে গিয়েছেন।
এছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসক মিলিয়ে ৮ চিকিৎসক গত সপ্তাহেই চলে গিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, বাইরে থেকে চিকিৎসক এলেও এই হাসপাতালে থাকতে চায় না৷ কোনওরকম অজুহাত বা কারণ দেখিয়েই অন্যত্র বদলি হয়ে যায় চিকিৎসকরা। যার ফলে চিকিৎসা পরিষেবা দিতে হিমশিম খায় হাসপাতাল।
এবিষয়ে বালুরঘাটের বাসিন্দা অপূর্ব মণ্ডল ও অনুপ রঞ্জন দাস বলেন, দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বহু রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসেন। এখানে মেডিক্যাল কলেজও নেই। তার উপরে অনেক পরিষেবা চালু থাকলেও চিকিৎসক নেই। এদিকে গত এক মাসে ৮ জন চিকিৎসক চলে গিয়েছেন। এই হাসপাতালের উপর ভরসা করে থাকতে হয় সাধারণ মানুষ থেকে নেতা মন্ত্রীদের।
এবিষয়ে বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু বিকাশ বাগ বলেন, “জেলা হাসপাতালে নানা বিভাগে পরিষেবা দিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই। সম্প্রতি বেশ কিছু চিকিৎসক হাসপাতালে থেকে বদলি হয়ে গেছে। তবুও যা চিকিৎসক রয়েছে, তা দিয়েই পরিষেবা মেটাচ্ছি। তবে চিকিৎসকের অভাবের বিষয়টি স্বাস্থ্যভবনে জানিয়েছি।”
অন্যদিকে এই বিষয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মিলন সরকার বলেন, “বালুরঘাট হাসপাতালে চিকিৎসক সঙ্কটের বিষয়টি জানা রয়েছে। দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হতে চলেছে।”