বালুরঘাট: দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় আচমকা বন্ধ কেন্দ্রীয় সরকারের এনজিও দ্বারা পরিচালিত শিশু শ্রমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৩০টি বিদ্যালয় ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, গত ৩১ মার্চ ওই স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বন্ধ হওয়া স্কুলগুলির প্রায় ১ হাজার পড়ুয়াকে সর্ব শিক্ষা অভিযানের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এবার স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার জেরে প্রায় ২০০ জন কর্মহীন হয়ে পড়লেন। এদিকে বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও কোনও সুরাহা হয়নি।
সূত্রের খবর, শিশু শ্রমিকদের পঠন-পাঠনের জন্য প্রায় ২৬ বছর আগে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় তৈরি হয় পৃথক বিদ্যালয়। কেন্দ্রীয় সরকারের অধিনস্ত শিশু শ্রমিক এই স্কুলগুলি একটি প্রকল্পর দ্বারা চালায় তিনটি এনজিও। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার থাকা ৩০ শিশু শ্রমিক স্কুলের মধ্যে ১০ টি ভারতীয় রেড ক্রস, ২ টি সেন্ট জন্স ও বাকি ১৮ টি টেগর সােসাইটির অধিনে ছিল। একেকটি স্কুলে শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মী রয়েছেন ৪ জন করে মোট ১২০ জন। এছাড়া আরও ১০ জন কর্মী রয়েছেন ভকেশনাল ইন্সট্রাক্টর হিসেবে। এই ইন্সটাক্টারদের একে একজনের অধীনে তিনটি করে স্কুল রয়েছে। জেলায় এই স্কুলগুলিতে মোট পড়ুয়া রয়েছে এক হাজার।
পেটের দায়ে যে সব শিশুরা কারখানা ও বিভিন্ন দোকানে কাজ করে তাঁদের উদ্ধার করে এই স্কুলগুলিতে নিয়ে গিয়ে শিক্ষাদান করা হয়। মাসিক ৪০০ টাকা করে এই পড়ুয়াদের বৃত্তি প্রদান করে সরকার। যদিও এই টাকাও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দুস্থ- স্কুল পড়ুয়াদের যাতে করে পঠনপাঠনে আগ্রহ থাকে তার জন্যই এই ভাতার ব্যবস্থা।
এক স্কুলে ছয় মাস অন্তর একসঙ্গে বেতন হয় শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের। পড়ুয়াদের ভাতাও আসে ছয় মাস অন্তর। রাজ্যের নজরদারিতে থাকা এই প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ হয় কেন্দ্রীয় সরকার থেকে। কিন্তু গত ৩১ মার্চ ২০২২ শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয় স্কুলগুলি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এতেই দিশেহারা হয়ে পরেন শিক্ষক থেকে অশিক্ষক কর্মীরা। জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের উদ্যোগে এখনও স্কুল চালাছেন। এবং মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করছেন।
এই বিষয়ে সজল দাস, বিশ্বজিৎ দত্ত ও অপূর্ব ভট্টাচার্য্য সহ অন্যান্য শিক্ষক অশিক্ষক কর্মীরা জানান, ‘তাদের একমাত্র কর্মসংস্থান ছিল এইটি। জীবনের মূল সময়ে তাঁরা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। এছাড়া শিশু শ্রমিকদের স্বার্থে এই স্কুলগুলি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ হঠাৎ করে এই স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর ফলে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। কীভাবে এখন সংসার চলবে তা নিয়েই মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। জেলা প্রশাসন থেকে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হয়েছেন তবে লাভ কিছু হয়নি। বিকল্প কাজের ব্যবস্থা না হলে আগামীদিনে আরও বড় আন্দোলনে নামবেন।
অন্য দিকে ঘটনার বিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার জেলা শাসক আয়েশা রানি বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যেই নজরে এসেছে। পুরো বিষয়টি দেখতে হবে। এনজিও গুলোর অডিট হয়েছে কিনা। তাদের বেতনের ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। তাদের কাছে যা অর্ডার এসেছে সেটাই বলেছেন।
আরও পড়ুন: Fake Army Man Balurghat: সেনা কর্মীকে ৫৫ হাজার টাকা দিয়েছিলেন, পরে যা হল…