দক্ষিণ দিনাজপুর: পর পর তিনদিন এ রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ১ হাজার করে বেড়েছে। কলকাতার পুরভোট, বড়দিনের লাগামছাড়া উদযাপন, বর্ষশেষ বা বর্ষবরণের উন্মাদনা এ বিপদ যে কোথায় নিয়ে গিয়ে দাঁড় করাবে তা নিয়ে ইতিমধ্যেই সংশয় প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সূত্রের খবর, ফের আংশিক লকডাউনের সম্ভাবনা রয়েছে এ রাজ্যে। আর তা হতে পারে ৩ জানুয়ারি অর্থাৎ সোমবার থেকেই। যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, ইতিমধ্যেই অনেকটা দেরী হয়ে গিয়েছে। চোর পালালে যেমন বুদ্ধি বাড়ে কারও কারও, এ রাজ্যের সরকারের অবস্থাটাও তেমন বলেই কটাক্ষ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি।
তৃতীয় ঢেউয়ের সম্ভাবনা নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে শনিবার সন্ধ্যায় বালুরঘাটে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “বাংলায় একটা কথা আছে চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে। আমাদের এই চিন্তাভাবনাগুলি তখনই করা উচিৎ ছিল, যখন ২৫ ডিসেম্বর রাজ্যে একটা বড় উৎসবের পরিবেশ থাকে। বহু জনসমাগম হয়। এবারও জনসমুদ্র দেখলাম পার্ক স্ট্রিটে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানেও বিভিন্ন জায়গায় জনসমুদ্রের মতো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এইসব চিন্তা ভাবনাগুলো আগে করতে হোত। আমার মনে হচ্ছে আমরা অনেকটা দেরি করে ফেলেছি। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর উচিৎ যাঁরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আছেন তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। তবে আমার মনে হয় সঠিক সময়টা পেরিয়ে গিয়েছে।”
বৃহস্পতিবারই গঙ্গাসাগরে দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, প্রয়োজনে আবারও কঠোর হতে পারে রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “১ তারিখ শনিবার, রবিবার ছুটির দিন। এরমধ্যেই আমরা যা যা করার, যেটুকু নেওয়া সম্ভব, যদি আমরা দেখি কিছু জায়গায় বাড়ছে সব পকেট তো একসঙ্গে বন্ধ করে লাভ নেই। এই করে তো গত দু’ বছর ধরে বিজনেস কিছুই নেই। টোটালটাই শূন্য হয়ে গিয়েছে। স্কুল কলেজের কী অবস্থা, ওমিক্রন বাচ্চাদের মধ্যে বাড়ছে কি না আমাকে সব লক্ষ্য রাখতে হয়। এটা নিয়ে রিভিউ করেই সিদ্ধান্ত নেব।”
অনেকের বদ্ধধারণা তৈরি হয়েছে ওমিক্রনের মারণ ক্ষমতা ততটা প্রখর নয়, তাই সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়লেও প্রাণহানি তেমন হবে না। কিন্তু নিছক ধারণার উপর ভিত্তি করে কারও জীবনের ঝুঁকি নেওয়া কখনওই উচিৎ নয় বলেই মনে করেন চিকিৎসকরা। এ প্রসঙ্গে ডাক্তার কুণাল সরকারের বক্তব্য, “আমাদের একটা চেষ্টা করতেই হবে। কারণ আমরা তো নীরব দর্শক হয়ে থাকতে পারি না। সংক্রমণ সমানে বাড়বে আর দেখব। এবার যে সংক্রমণটা হতে চলেছে তার সংক্রামক ক্ষমতা আগের থেকে বেশি। আমরা হয়তো পৃথিবীর চারপাশে দেখে নিজেদের আশ্বস্ত করছি এর সিরিয়াসভাবে আমাদের অসুস্থ করার ক্ষমতা কম। কিন্তু সেটা প্রমাণিত হবে ভবিষ্যতে। কেবল অনুমানের ভিত্তিতে কোনও সরকারেরই সবকিছু ঢিলে দেওয়া উচিৎ নয়। কিছু বিধিনিষেধ দরকার। সরকারি বেসরকারি নিয়েও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষমতাও খানিকটা সীমিত।”
সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে হয়তো আগামী ৩ জানুয়ারি থেকে আংশিক লকডাউন ফিরতে পারে বাংলায়। ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দু’টি কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে দুয়ারে সরকার। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আপাতত সব মামলার ভার্চুয়ালি শুনানির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি। জামিনের মামলা ছাড়া সবই সোমবার থেকে ভার্চুয়ালি শোনা হবে। বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বার, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, স্কুল, কলেজ। কমানো হতে পারে লোকাল ট্রেনের সংখ্যাও।
আরও পড়ুন: Covid Spike: বড় খবর! ফের আংশিক লকডাউনের সম্ভাবনা রাজ্যে, হতে পারে ৩ জানুয়ারি থেকেই