বালুরঘাট : মদ্যপ অবস্থায় স্ত্রীকে এসে মারধর করছিল নাতি। বিষয়টি জানতে পেরে আটকাতে যান ঠাকুমা। সেই সময় ঠাকুমার মাথায় ত্রিশূল দিয়ে আঘাত করে নাতি। এমনকী মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধরও করা হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি নজরে আসতেই স্থানীয় বাসিন্দারা গুরুতর জখম অবস্থায় ওই বৃদ্ধাকে ভর্তি করে বালুরঘাট (Balurghat) জেলা হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার মৃত্যু হয় ওই মহিলার। মৃতার নাম সুশীলা বর্মন(৫১)। বাড়ি দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট ব্লকের চিঙ্গিশপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের শোবরা শ্যামপুর এলাকায়। এদিকে ঠাকুমার মৃত্যুর খবর পেতেই নাতিও কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। যদিও পরিবারের অভিযোগ খুনের অভিযোগের হাত থেকে বাঁচতেই এমন অভিনয় করছে সে। বর্তমানে নাতি নয়ন বর্মনকে বালুরঘাট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ পেলে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বালুরঘাট থানার পুলিশ।
জানা গিয়েছে, নয়ন বর্মনের মা বাবা কেউ নেই। বাবা অনেক দিন আগেই গত হয়েছেন। এরপর মা বাড়ি ছেড়েছেন অন্য পুরুষের সঙ্গে। বাবা-মা হারা নয়নকে ছোট থেকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন তাঁর ঠাকুমা সুশীলা বর্মন। অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই মদ্যপ অবস্থায় নয়ন তার ঠাকুমা এবং নিজের স্ত্রীকে মারধর করে। কিছুদিন আগে নয়নের মারে ঠাকুমার মাথাও ফেটেছিল। মাথায় ১৮টি সেলাইও পড়ে। সুস্থ হতে বেশ কিছুদিন সময়ও লাগে। তারপরও থামেনি নয়নের দাপট। বৃহস্পতিবার রাতেও মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফেরে নয়ন। অভিযোগ, বাড়ি ফিরেই রুদ্রমূর্তি ধরে অকারণে নিজের স্ত্রীকে মারধর করতে থাকে। ত্রিশূল দিয়েও মারে। চিৎকার শুনে ছুটে আসে ঠাকুমা। বাধা দেয় নয়নকে। তখন হাতের কাছে পেয়ে ঠাকুমার উপরেও চড়াও হয় নয়ন।
হাতে থাকা ত্রিশূল দিয়েই ঠাকুমার মাথায় সজোরে আঘাত করে নয়ন। সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঠাকুমা। এরপরও মেলেনি রেহাই। চড়, কিল, ঘুষি মারতে থাকে নয়ন। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে স্থানীয় বাসিন্দারা। নয়নের হাত থেকে উদ্ধার করে সুশীলাদেবীকে চিকিৎসার জন্য বালুরঘাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এদিন সকাল নয়টা মৃত্যু হয় বৃদ্ধার।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরেই এদিন দুপুরে অভিযুক্ত নয়ন বর্মন কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। বিষয়টি নজর আসতেই সঙ্গে সঙ্গে তাকে চিকিৎসার জন্য বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। যদিও মৃতার আত্মীয়দের অভিযোগ নয়ন নাটক করছে। খুনের হাত থেকে বাঁচতে এমনটা অভিনয় করছে। তবে বর্তমানে নয়নের অবস্থা স্থিতিশীল।
এ বিষয়ে মৃতার আত্মীয় রিনা বর্মন ও রেনুবালা বর্মন বলেন, “মা ফেলে চলে গিয়েছিল। ঠাকুমাই ওই ছেলেকে কোলেপিঠে মানুষ করেছিল। তার পরিণাম আজ পেল। একটাই আক্ষেপ সুশীলার স্বামী বিশেষ ভাবে সক্ষম। তার যে কী হবে!” অন্যদিকে এবিষয়ে বালুরঘাট থানার আইসি শান্তিনাথ পাঁজা বলেন, এনিয়ে অভিযোগ পেলে পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হবে।