বালুরঘাট: মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর দায়ে চলছিল বিভাগীয় তদন্ত, মাথায় বড় ঋণের বোঝা। এরইমধ্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী পুলিশকর্মী। মৃতের নাম অগস্টাইন বাস্কে (৫৮)। বাড়ি মালদহের যগশ্বরে। বর্তমানে তিনি বালুরঘাট পুরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের মহন্ত পাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন পরিবারের সঙ্গে। বাড়িতে রয়েছে স্ত্রী, মেয়ে। পরিবারের সদস্যদের দাবি, মানসিক অবসাদ থেকেই ওই পুলিশকর্মী এই কাজ করেছেন। পরিবারের সদস্যদের দাবি, সাত আট মাস ধরে কাজে যাচ্ছিলেন না ওই পুলিশকর্মী।
জানা গিয়েছে, গত ১৩ বছর থেকে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় কর্মরত অগস্টাইন বাস্কে। পুলিশের গাড়ি চালাতেন তিনি। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার একাধিক থানায় কাজ করেছেন৷ বর্তমানে পুলিশ লাইনে কর্মরত ছিলেন। বালুরঘাট শহরের একাধিক জায়গায় তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতেন। একমাত্র মেয়ে ক্লাস সেভেনে পড়াশোনা করে। কয়েক বছর আগে একটি গাড়ি কিনেছিলেন তিনি। কিছু দিন পর সেটি বিক্রিও করে দেন৷ কিন্তু তার ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি৷ এদিকে তারপরও একাধিক জায়গা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি। সূত্রের খবর, বর্তমানে মাসে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেতন থেকে ঋণ বাবদ কেটে নিত।
সূত্রের খবর, গত সাত আট মাস আগে বালুরঘাট বিজেপি মোড়ে অগস্টাইনের গাড়ির দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। মদ্যপ অবস্থায় থাকার জন্য ঘটে দুর্ঘটনা। ঘটনায় একজন আহত হয়৷ সেই ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত চলছিল। তারপর থেকে দীর্ঘদিন ধরে ঘরে বসে ছিলেন। এদিকে ঋণ পরিশোধ করতেও হিমশিম খাচ্ছিলেন। এদিন বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন তিনি। পরে বাড়ি ফিরতেই স্বামীর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পান স্ত্রী মীনা মার্ডি। এদিকে বিষয়টি জানাজানি হতেই চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। খবর পেয়ে মালদহ থেকে আসে পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। আসে বালুরঘাট থানার পুলিশ। তদন্তে নামে বালুরঘাট থানার পুলিশ৷
স্ত্রী মীনা মার্ডি বলেন, ওর অনেক ঋণ ছিল। সেগুলো পরিশোধ করতেই বেতনের টাকা বেশির ভাগ কেটে নিত৷ তারপর এক অ্যাক্সিডেন্টের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সাসপেন্ড হয়ে আছেন। কোন ডিউটি দেওয়া হত না স্বামীকে৷ এই সব কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন৷ এরমধ্যেই একটা ঋণের টাকা দেওয়ার কথা ছিল। সেই টাকা কোথা থেকে দেবেন তা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। আমি বলেছিলাম প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে টাকা তুলে তা মিটিয়ে দেওয়ার জন্য। এমনটা করবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি।
এ বিষয়ে মৃতের আত্মীয় টিটাস মুর্মু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় পুলিশের ড্রাইভার পদে নিযুক্ত ছিলেন। আজ হঠাৎ বাড়িতে আত্মহত্যা করেছে। আর কী কারণ রয়েছে তা কিছুই বুঝতে পারছি না।
অন্যদিকে এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তাল বলেন, ওই পুলিশকর্মী গাড়ি চালাতেন। একটি অ্যাক্সিডেন্টের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চলছিল। তবে তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়নি। আজ আত্মহত্যার বিষয়টি জানতে পেরেছি। পুরো ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।