বালুরঘাট: বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ তুলেছিলেন দলেরই নেতা কর্মীরা। পৌরসভার কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে নিজস্ব সম্পত্তি বাড়ানোর অভিযোগ উঠেছিল বালুরঘাট পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল নেতা রাজেন শীলের বিরুদ্ধে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ করতে সাংবাদিক বৈঠক করলেন রাজেনবাবু। আরটিআই-র তথ্য হাতে করে তাঁর কটাক্ষ, ‘প্রমাণ হল তো আমি দুর্নীতিতে যুক্ত নই।’
রাজেনবাবু পুরসভার চেয়ারম্যান থাকার সময় যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল তা নিয়ে কিছুদিন আগেই আরটিআই করেছিলেন তাঁর ভাইপো। তাঁর সময়কালের পুরসভার যে কাজ হয়েছে সেই প্রকল্প এবং বরাদ্দ অর্থের খতিয়ান জানতে চেয়ে আরটিআই করা হয়েছিল। ইতিমধ্যেই আরটিআই-এর সেই তথ্য হাতে হাতে এসে পৌঁছেছে রাজেনবাবুর কাছে। যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন তিনি। আর এনিয়ে সোমবার দুপুরে বালুরঘাট পুরসভার ডানলপ মোড় এলাকায় অবস্থিত ১৮ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূল কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজেন শীল। সেখানে আরটিআইয়ের তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন রাজেনবাবু।
তাঁর কথায়, “উপস্থিত আছেন যাঁরা তাদের বলছি, বালুরঘাট ‘১৬ থেকে ‘১৮ সাল আমি চেয়ারপার্সন ছিলাম। মনপ্রাণ দিয়ে কাজ করেছি। আমি ৫ কোটি টাকা রেখে গিয়েছিলাম। চেয়ারম্যান থাকাকালীন আমার সম্বন্ধে অনেক অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ এও বলেছেন আমি দুর্নীতিগ্রস্ত। হোটেল করেছে। সে সময় প্রতিবাদ করতে পারতাম। কিন্তু আমি অপেক্ষা করছিলাম। বালুরঘাটবাসীর জানা দরকার, সত্য কী আর মিথ্যা কী…” এর পরে তিনি আরও বলেন, ‘প্রমাণ হল তো আমি দুর্নীতিতে জড়িত না।’
প্রসঙ্গত, তৃণমূল পরিচালিত তথা নির্বাচিত বিগত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন বিরোধীরা। আবার দলেরও কেউ কেউ সরব ছিলেন রাজেনবাবুর বিরুদ্ধে। প্রায় তিন বছরের মাথায় তৎকালীন পুরবোর্ডের কাজকর্ম প্রসঙ্গে আরটিআই রিপোর্ট দেখিয়ে নিজেকে স্বচ্ছ বলে দাবি করলেন বালুরঘাট পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান রাজেন শীল। এদিন বালুরঘাটে দলীয় কার্যালয়ে এব্যাপারে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে আরটিআই রিপোর্ট প্রকাশ করেন তিনি। সেই সঙ্গে তিনি দাবি করেন যে, বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারম্যান থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের করা অনিয়ম ও আর্থিক তছরূপের সমস্ত অভিযোগই মিথ্যা। তাঁর আমলে (২০১৩-২০১৮) পুরসভা এলাকায় বহু গ্রিনসিটি, রাস্তাঘাট নির্মাণ-সহ ২৯ টি উন্নয়নমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ স্বচ্চতার সঙ্গেই সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি তিনি এই দাবিও করেন যে, তাঁর সময়ে পাঁচ কোটিরও বেশি অর্থ বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০১৩ সালের নির্বাচনে বামেদের হারিয়ে বালুরঘাট পুরসভার দখল করে তৃণমূল। তৃণমূলের সেই বোর্ডে প্রথম চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহার মৃত্যুর পর পুরপ্রধানের দায়িত্বে বসেন রাজেন শীল। সেই সময় বিরোধীদের তরফ থেকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়। যা নিয়ে পরবর্তীতে দল ও দলের বাইরে নানান ক্ষেত্রে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজেন শীলকে। এলাকারই সমীর শীল নামের এক বাসিন্দা এবিষয়ে সঠিক তথ্য জানতে চেয়ে আরটিআই আবেদন করেন। পুরসভা কর্তৃক সেই আরটিআই-র রিপোর্ট সামনে এনে রাজেন শীল এদিন দাবি করেন যে তার বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ ভিত্তিহীন। আরটিআই রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে, ২০১৩ থেকে ২০১৮ মেয়াদকালে তৃণমূল পরিচালিত বালুরঘাট পৌরসভার নিজস্ব তহবিল উল্টে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৯৭ হাজার ২৭২ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছিল।
এদিকে আরটিআই রিপোর্ট দেখিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজেকে স্বচ্ছ প্রমাণ করা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। এনিয়ে বালুরঘাট পুরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলর তথা আরএসপি নেতা প্রলয় ঘোষ ফের তৎকালীন পৌরবোর্ডের আর্থিক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে তদন্তের দাবি করেছেন।
যদিও এই নিয়ে বালুরঘাট পৌরসভার বর্তমান পৌর প্রশাসক মণ্ডলীর চেয়ারপার্সন শেখর দাশগুপ্ত সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তিনি এনিয়ে কোনও অনিয়ম দেখেননি। এমন অভিযোগ তোলা হলে পরে সেই সময় বিরোধী দলের সদস্যরা ছিল তাঁরা কেন এই নিয়ে তদন্তের দাবি তোলেননি, প্রশ্ন তাঁর। আরও পড়ুন: কমরেডরা অপরাধ করেছেন, বিরক্ত বিমান বসু