বালুরঘাট: ফের বনধ স্কুল। পড়ুয়ার অভাবে দক্ষিণ দিনাজপুরে বন্ধ হচ্ছে একের পর এক সরকারি প্রাথমিক স্কুল। এখনও পর্যন্ত দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় ছ’টি স্কুল বন্ধ হয়েছে। যদিও তার মধ্যে একটি বন্ধ স্কুল চালু করতে সক্ষম হয়েছে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ। বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলের শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বালুরঘাট শহরেই দু’টি, শহর লাগোয়া দু’টি এবং হিলিতে একটি স্কুলে বর্তমানে তালা ঝুলছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই স্কুলগুলিতে ছাত্র সংকট দেখা দিয়েছিল। করোনার পরে একেবারে ছাত্র শূন্য হয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি স্কুলগুলি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ।
জানা গিয়েছে, জেলার বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলগুলিতে কয়েক বছর ধরেই শিক্ষার্থীদের অভাব দেখা দিয়েছিল। কোনও স্কুলে দুই তিন জন আবার কোনও স্কুল তো একেবারে ছাত্র শূন্য ছিল। কিন্তু করোনার পরে স্কুল স্বাভাবিক হতেই একসঙ্গে প্রায় ছ’টি স্কুলে একইভাবে ছাত্রের অভাব দেখা যায়। প্রতিটি স্কুলে দুই থেকে তিনজন শিক্ষক থাকলেও প্রথম শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত দুই-এক জন ছাত্র ছিল। আবার কোথাও পড়ুয়া শূন্য ছিল। কোনও-কোনও স্কুলে এই শিক্ষাবর্ষে একেবারেই ছাত্র ভর্তি হয়নি। যার ফলে শিক্ষা দফতর থেকে সেই স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি স্কুলগুলির শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
কী কী স্কুল বন্ধ রয়েছে?
জানা গিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলগুলির মধ্যে রয়েছে বালুরঘাট শহরের চকভৃগু প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহেব কাছারি এলাকার নেতাজি এফপি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বালুরঘাট শহর লাগোয়া এলাকার ময়ামারি এফপি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং পশ্চিম রায়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। এছাড়াও হিলি ব্লকের আপ্তইর প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, বালুরঘাটের জলঘর এলাকায় ত্রিকূল প্রাথমিক বিদ্যালয়ও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি তা পুনরায় চালু করা হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষামহলের একাংশের দাবি, বালুরঘাট শহরের মধ্যেই যত্রতত্র গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি স্কুল। শুধু তাই নয়, অনেক সরকারি স্কুলের পরিকাঠামো একেবারে ভেঙে পড়েছে। কোথাও শিক্ষকের অভাব, স্কুলের বিল্ডিং, ইলেক্ট্রিক সহ নানা সমস্যা রয়েছে। অনেক স্কুল ভগ্ন দশাতেও পরিণত হয়েছে। তার জেরেই সেই সমস্ত স্কুলগুলিতে ছাত্র শূন্য হয়েছে।
এই বিষয়ে বন্ধ হওয়া স্কুল সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা আনন্দ সেন ও শেফালি সরকার জানান, “তাদের বাড়ির পাশে ময়ামারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই স্কুলে ২০১৯ সাল থেকেই পড়ুয়া নেই। চলতি বছরের একদম প্রথমে স্কুলে পড়ুয়া শূন্য হয়ে পড়ে ৷ শেষে একজন শিক্ষিকা থাকলেও তাঁকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয় ৷ শহর সংলগ্ন এই সব এলাকার স্কুলের পরিকাঠামো খুব একটা ভাল না হওয়া ও শিক্ষার মান তেমন না থাকায় অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের নিয়ে বালুরঘাটের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্কুলে পড়াচ্ছেন। তাদের এই সকল স্কুল চালু হোক এটাই দাবি ৷ কারণ গ্রামের প্রত্যেকের সামর্থ্য নেই যে বালুরঘাটের স্কুলে পড়াবেন।”
এবিষয়ে এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক শঙ্কর ঘোষ বলেন, “এমন পরিস্থিতির জন্য প্রশাসনিক উদাসীনতায় মূল কারণ। সঠিক পরিকাঠামো ও নজর থাকলে স্কুল গুলি বন্ধ হত না। জেলায় শিক্ষার্থী অভাবে এমন ৬ টি স্কুল বন্ধ হয়েছে ৷ যদিও তার মধ্যে একটি আদিবাসী স্কুল করে চালু করা হয়েছে। এই সব স্কুল চালুর ব্যাপারে প্রশাসনকে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করবেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গে ১৯ টি স্কুল বন্ধ হয়েছে। এবং রাজ্যে মোট ৫৬ টি স্কুল বন্ধ হয়েছে।”
অন্যদিকে এবিষয়ে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদা বলেন, “দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এই শিক্ষাবর্ষে ছয়টি স্কুল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে একটিতে নতুন করে ছাত্র ভর্তি করিয়ে তা আমরা পুনরায় খুলেছি। এখন পাঁচটি স্কুল বন্ধ রয়েছে। সেখানকার শিক্ষকদের অন্য স্কুলে বদলি করা হয়েছে। মূলত, কাছাকাছি স্কুল বেশি হয়ে যাওয়াতে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষে সেগুলি যাতে চালু করা যায়, তার জন্য আমরা স্কুলের এলাকায় গিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলব।”
আরও পড়ুন: Madhyamik Exam 2022: উত্তর দেখিয়ে না দেওয়ায় পরীক্ষার হল থেকে বেরোতেই ভয়ানক কীর্তি মাধ্যমিক পড়ুয়ার!