কুমারগঞ্জ: প্রত্যন্ত এলাকায় আজও আশায় বুক বাঁধে এলাকার একজন মাত্র মেধাবী ছাত্রকে ঘিরেই। ঠিক যেমন দক্ষিণ দিনাজপুরের এক ছোট গ্রামের আট থেকে আশি সকলের কাছে মেধাবী ছাত্র বললেই যেন চোখের সামনে ভেসে উঠত দেলওয়ার সাইদি মিয়াঁর ছবিটাই। তাই সেই ছেলে ডাক্তার হয়ে ভাগ্য ফেরাবে নিজের গ্রামের বা নাম উজ্জ্বল করবে তাদের এলাকার। আকছার এহেন স্বপ্নই দেখতেন গ্রামের সেই মানুষগুলো। কিন্তু এমন আচমকা ঝড়ে ওলটপালট হয়ে গেল আশা-ভরসার জায়গাটা, তা কে জানত? বোনের জামা ইস্ত্রি করতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল দেলওয়ারের। স্বাভাবিকভাবেই তার মৃত্যুতে গোটা এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের ভোঁওর গ্রাম পঞ্চায়েতের সীতাহার সেই প্রত্যন্ত এলাকা। এই গ্রামেরই এক দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে দেলওয়ার সাইদি মিঞা। ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী এবং তুখোড় পড়াশোনায়। মাধ্যমিকের চোখ ধাঁধানো ৯২ শতাংশ নম্বর। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই উচ্চমাধ্যমিকে ৮৪ শতাংশ। আমজনতার স্বপ্ন দেখার শুরু সেই থেকেই। কারণ মেধাবী দেলওয়ারের ইচ্ছা ছিল ডাক্তার হবে সে। সেইমতো বসেছিল জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাতেও। আগামী মাসের ৭ তারিখ সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ।
চিকিৎসক হওয়ার সমস্ত রকম প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছিল ওই দরিদ্র পরিবারে। কিন্তু তার আগেই ঘটে গেল সেই দুর্ঘটনা। সোমবার দুপুরে বোনের জন্য জামা ইস্ত্রি করছিল সে। সেই কাজের মাঝখানেই হঠাৎই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। প্রথমবার মাটিতে পড়ে যাওয়ার পরেও ফের উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ওই যুবক। কিন্তু আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। অচৈতন্য হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে দেলওয়ার। আওয়াজ শুনে ছুটে আসেন পরিবারের সদস্য ও পরিজনরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বালুরঘাট জেলা হাসপাতালে। কিছু কর্তব্যরত চিকিৎসকরা সেখানে থেকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
দেলওয়ারের অকাল মৃত্যুর খবর চাউল হতেই শোকের ছায়া নেমে আসে কুমারগঞ্জ ব্লকের ছোট্ট গ্রামটিতে। স্বজন হারানোর বেদনায় মুষড়ে পড়েছে গোটা গ্রামটিই। এ দিকে, গোটা ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে কুমারগঞ্জ থানার পুলিশ। একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করা হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। মৃতদেহটি পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।