কুমারগঞ্জ : প্রায় বছর খানেক আগে রাস্তা তৈরির জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধুমধাম করে করা হয়েছিল শিলান্যাস। বসানো হয় কাজের ফলক। আসায় বুক বেঁধেছিল গ্রামবাসীরা। এবার হয়তো তাঁদের দুর্দশা কাটবে। কিন্তু, রাস্তার শিলান্যাস করার পর কেটে দীর্ঘ সময়। রাস্তার দাবিতে মাস ছয়েক আগে পথ অবরোধও করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তখনও মিলেছিল আশ্বাস। কিন্তু তারপরও কেটেছে অনেকটা সময়। এখনও তৈরি হয়নি রাস্তা। এলাকায় পড়েনি রাস্তা তৈরির সামগ্রী। তাই পাকা রাস্তার দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকেই দক্ষিণ দিনাজপুর (Dakshin Dinajpur) জেলার কুমারগঞ্জ ব্লকের সাহাপুকুর এলাকার বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। শুক্রবার সকাল থেকেও দফায় দফায় চলে অবরোধ। পথ অবরোধে (Road Blockade) সামিল হয়েছিলেন গ্রামের শতাধিক মানুষ। অবরোধের জেরে ওই এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
অবরুদ্ধ হয়ে যায় বরাহার-ডাঙ্গারহাট রাজ্য সড়ক। এদিকে পথ অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল, বিডিও ছেওয়াং তামাং সহ কুমারগঞ্জ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। এদিকে বিধায়ক এলাকায় আসতেই ক্ষুব্ধ জনতা বিধায়ককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায়। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রায় দেড় দিন পর পুলিশ-প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। শুরু হয় যান চলাচল।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, কুমারগঞ্জের ব্লকের রামকৃষ্ণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহাপুকুর থেকে সুরান্ডাপাড়া পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা কংক্রিটের ঢালাই করার জন্য উদ্যোগ নেয় প্রশাসন। প্রায় ৪০ লক্ষ টাকার কাজ হবে বলে তার ফলকও বসানো হয়। সেইমত রাস্তার কাজের শিলান্যাসও করা হয়। কিন্তু, এরপর কেটে যায় প্রায় সাত মাস। তবুও রাস্তা না পেয়ে সেই সময় অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা। তখনও শুধুই আশ্বাস মিলেছিল। কিন্তু এক বছর পার হলেও রাস্তা হয়নি। যার ফলে অর্ধেক ইটের ও অর্ধেক মাটির রাস্তায় বাড়ছে দুর্ভোগ। প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা।
ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এক বছর আগে ১০০ দিনের কাজের ফাণ্ড থেকে ওই রাস্তার শিলান্যাস করে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু ওই ফাণ্ড বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই রাস্তার কাজও পিছিয়ে যায়। পরবর্তীতে ওই রাস্তাটি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফরের তরফে করার উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। কিন্তু সেই কাজেও ঢিলেমি হচ্ছে বলে অভিযোগ। এদিকে পথশ্রীতে জেলায় বহু রাস্তা হলেও এই গ্রামের রাস্তা হয়নি। তা নিয়েও ক্ষোভ এলাকায়।
এ বিষয়ে গ্রামবাসী স্বপন রবিদাস ও মঞ্জনা বিবি বলেন, শিলান্যাস করেও এক বছরে আমরা রাস্তা পেলাম না। প্রশাসন ও সরকার আমাদের এই ব্যাপারে বঞ্চিত করেছে। রাস্তা না পাওয়ায় আমরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছি। আজকে বিধায়ক দ্রুত রাস্তা করার আশ্বাস দিয়েছে। রাস্তা না পেলে আমরা ফের অবরোধে সামিল হব। প্রয়োজনে ভোট বয়কট করব। এ বিষয়ে কুমারগঞ্জের বিডিও ছেওয়াং তামাং বলেন, “১০০ দিনের প্রকল্পে রাস্তাটির কাজের শিলান্যাস ও ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ১০০ দিনের প্রকল্পের ফান্ড বন্ধ হওয়ায় সেই রাস্তাটি হয়নি। এখন অন্য ফান্ডে রাস্তাটি করার উদ্যোগ নিয়েছি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রাস্তাটি করে দেওয়া হবে।”
অন্যদিকে এ বিষয়ে কুমারগঞ্জের বিধায়ক তোরাফ হোসেন মণ্ডল বলেন, “ওই রাস্তাটি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের ফান্ডে করার জন্য তালিকার প্রথমেই রয়েছে। খুব দ্রুত রাস্তাটি করে দেওয়া হবে। আজকে ওখানে গিয়েছিলাম। সাধারণ মানুষকে বুঝিয়েছি, তারা সবটাই বুঝেছে। কিন্তু বিজেপির উস্কানিতে কেউ কেউ এগুলো ইচ্ছে করেই করছে। কেন্দ্র সরকার টাকা না দেওয়াতেই কাজ দেরিতে হচ্ছে।”