বালুরঘাট: দক্ষিণ দিনাজপুর (South Dinajpur) জেলায় এখন এক নতুন আতঙ্ক। ছেলেধরা আতঙ্ক। আর এই আতঙ্কই গ্রাস করেছে জেলায় একের পর এক গ্রামকে। তার জেরে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের স্বাভাবিক পঠন পাঠন। জেলার একাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, বিশেষ করে গ্রামের দিকের স্কুলগুলিতে হঠাৎ করেই কমে গিয়েছে পড়ুয়াদের দৈনিক গড় উপস্থিতি। এই নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন স্কুলগুলির শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগী জেলা প্রশাসনও। বিশেষ করে গুজব বন্ধ করে উদ্যোগী হচ্ছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। নজর রাখছে পুলিশও। পুলিশের তরফে কড়া ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যারা এমন গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলার বিভিন্ন থানাগুলির তরফে ইতিমধ্যেই সচেতনতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, কিছুদিন আগেই দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জ ব্লকের দিওরে এক অজ্ঞাত পরিচয় হিন্দিভাষী ব্যক্তিকে পাকড়াও করেছিলেন গ্রামবাসীরা। গ্রামবাসীদের সন্দেহ ছিল, ওই ব্যক্তি ছেলেধরা। আর তাতেই বেধড়ক মারধর করা হয়েছিল ওই ব্যক্তিকে। পরে পুলিশ গিয়ে জনরোষের মুখ থেকে উদ্ধার করেন ওই ব্যক্তিকে। এরপর থেকেই তপন, বালুরঘাট, পতিরাম, কুমারগঞ্জ সহ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকার বেশ কিছু গ্রামে ছেলেধরা ঘুরে বেরাচ্ছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও গুজব ছড়ায়। দাবানলের মতো সেই গুজব এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্ক ছড়ায় অভিভাবকদের মনেও। ভয়ে তাঁরা ছেলেমেয়েদের বাইরে একা বেরোতে দিচ্ছেন না। এমনকী সন্তানদের স্কুলে পর্যন্ত পাঠাতে চাইছেন না।
এদিকে এমন পরিস্থিতিতে চিন্তায় জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদও। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন স্কুল ঘুরে দেখেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর ডিপিএসসি-র চেয়ারম্যান সন্তোষ হাঁসদা। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের সচেতন করা হচ্ছে। পাশাপাশি কেউ যাতে গুজবে কান না দেন, তা নিশ্চিত করতে এগিয়ে এসেছে পুলিশও। প্রতিটি থানাতেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, পুরসভা কর্তৃপক্ষ ও ব্লক প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে বিশেষ সচেতনতা মূলক বৈঠক করা হয়। এমন খবর পেলে স্থানীয় থানায় যোগাযোগ করার কথা বলা হয়।
এবিষয়ে ডিএসপি হেডকোয়ার্টার সোমনাথ ঝাঁ বলেন, ‘ছেলেধরা গুজব চারিদিকে ছড়িয়েছে। এই গুজবের শিকার হচ্ছেন মূলত মানসিক ভারসাম্যহীনরা। বিভিন্ন জায়গায় ছেলেধরা সন্দেহে মারধর করা হচ্ছে। এই নিয়ে বিভিন্ন থানায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করা হচ্ছে। প্রত্যেকটি থানায় এলাকায় যতগুলি ঘটনা ঘটেছে তার কোনটাই এখনও পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি। সবটাই গুজব। পাশাপাশি যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের উপর বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’