হিলি: তাঁর উচ্চতা মাত্র ২ ফুট। শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে সঙ্গী করেই হিলির চুমকি ঘোষ লড়ছেন পঞ্চায়েত ভোটে। তাঁকে নিয়েই এখন জোর চর্চা দক্ষিণ দিনাজপুরে। চুমকিই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছেন জ্যোতি কিসঙ্গে আমজের কথা। বিশ্বের সবথেকে খাটো নারী হিসাবে ইতিমধ্যেই তিনি নাম তুলে ফেলেছেন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে (Guinness World Records)। চিকিৎসকরা বলছেন আখোড্রিপ্লাসিয়া নামক জেনেটিক ডিসর্ডারে ভুগছেন জ্যোতি। সে কারণেই তাঁর উচ্চতা বাড়েনি। ২০০৯ সালে ‘বডি শক’ নামের একটি তথ্যচিত্রেও দেখা গিয়েছে তাঁকে। কিন্তু, বাংলাতেও রয়েছে জ্যোতিরই সমকক্ষ চুমকি। দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি ব্লকের ধলপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চকমোহন আসন থেকে তৃণমূলের (Trinamool Congress) হয়ে ভোটে দাঁড়িয়েছেন ২৩ বছরের চুমকি। তৃণমূলের এই প্রয়াসকে সাধুবাদ জানিয়েছে বিজেপিও।
এখনও পড়াশোনা করছেন চুমকি। বর্তমানে হিলি গভর্নমেন্ট কলেজের অন্তিম বর্ষের পড়ুয়া তিনি। বাবা চঞ্চল ঘোষ হাটের ছোট ব্যবসায়ী। মা চিত্রা ঘোষ গৃহবধূ। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন ছোট থেকেই পড়াশোনায় বেশ ভাল চুমকি। রয়েছে রাজনৈতিক বোধও। অন্যদিকে ভোটের ময়দানে জয়ের ব্যাপারে একশো শতাংশ আশাবাদী চুমকি।
তিনি বলছেন, “অনেক দিন থেকেই ভোটে দাঁড়ানোর ইচ্ছা ছিল। সেই ইচ্ছা পূরণ করেছে তৃণমূল। সব জায়গায় প্রচার নেমেছি। দিদির উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরছি।” শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ঘুরছেন এলাকার নানা প্রান্তে। দলীয় কর্মীদের নিয়ে জোরকদমে চলছে প্রচার। প্রতিদিন সকাল হতেই রুটিন করে দলীয় কর্মীদের নিয়ে ভোট প্রচারে বেরিয়ে পড়ছেন তিনি। দুপুরে খানিক বিশ্রাম। তারপর ফের বিকালে চলছে প্রচার।
চুমকি বলছেন, “শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ভোট প্রচারের কোনও বাধাই নয়। আগামী দিনে মানুষের পাশে থাকতে চাই। মানুষের জন্য কিছু করতে চাই।” এটাই আমার উদ্দেশ্য। এদিকে ভোটের কাজের জন্য বেশ খানিকটা প্রভাব পড়ছে পড়াশোনায়। যদিও সবদিক সামলে সময় করে পড়তেও বসছেন ওই কলেজ পড়ুয়া। চুমকির পাশে রয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরাও। মেয়ের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী তাঁর মাও।
কী বলছেন চুমকির মা?
চুমকির মা বলছেন, “মেয়ের সবসময়ই ইচ্ছে ছিল ভোটে দাঁড়ানোর। আমি বলতাম তোকে কে দাঁড় করাবে। সেই সুযোগ এবারে হয়েছে। ও খুব খুশি। মেয়ের জন্য আমরাও লড়ছি। রোজ দিন প্রচারে যাচ্ছি। ও জিতবেই।”
একই কথা বলছেন তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি প্রেম সরকার। তিনি বলছেন, “যাঁরা বিশেষভাবে সক্ষম তাঁদেরও তো অধিকার রয়েছে ভোটে লড়ার। পার্টি থেকে আলোচনা করেই ওকে প্রার্থী করা হয়েছে। ও যোগ্য তাই প্রার্থী হতে পেরেছে। আমরা আশা করছি ও এখানে বিপুল ভোটে জিতবে। দলের তরফ থেকে ওকে সবরকম ভাবে সাহায্য করছি। ওর হয়ে জোর প্রচারও চালাচ্ছি।”
বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলছেন, “সমাজের সব শ্রেণির মানুষের ভোটে লড়ার অধিকার রয়েছে। এরকম একজন মহিলাকে তৃণমূল যে ভোটে দাঁড় করিয়েছে তার জন্য আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।” যদিও তৃণমূলকে খোঁচা দিয়ে চুমকির উদ্দেশে তাঁর সাবধানবাণী, “মনে রাখতে হবে উনি আসলে চোরেদের দল থেকে দাঁড়িয়েছেন। এটা দুর্ভাগ্যের বিষয়। তৃণমূলে যত ভাল মানুষই যাক দলটা এমনই যে সকলকে চোর হয়ে যেতে হয়। আসলে এটাই তৃণমূলের ধর্ম। তাই উনি তৃণমূলের প্রার্থী না হয়ে অন্য দলের প্রার্থী হলে ভাল হতো। তাহলে ওনার সম্মানটা থেকে যেত।”
চুমকি জিতলে এলাকার উন্নতি হবে বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। প্রতিবেশী সুপ্রভা ঘোষ বলছেন, “এরকম তো খুব একটা দেখা যায় না। আমাদের সমর্থন থাকবে ওর প্রতি। আশা করছি ও জিতবে।”