দক্ষিণ দিনাজপুর: স্কুল সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে অভিযোগের পাহাড়। একের পর এক মামলায় সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রোজই হাইকোর্টে বিচারপতির ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হচ্ছে রাজ্যকে। সোমবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। এরই পাল্টা এদিন বালুরঘাটে সরব হলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দলীয় কর্মীদের নিদান দিলেন, যাঁরা চাকরি দেওয়ার নামে টাকা খেয়েছেন, তাঁদের গলায় হাত ঢুকিয়ে সেই টাকা যেন বের করে আনা হয়। এদিন বালুরঘাটের সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, যেসব তৃণমূল নেতারা এসএসসি-সহ অন্যান্য চাকরি দেওয়ার নামে কাটমানি খেয়েছেন, সেই সব তৃণমূল নেতাদের নাম বিজেপির পার্টি অফিসে দিয়ে যান। বিজেপি কর্মী সমর্থকরা সেই তৃণমূল নেতার গলার ভিতরে হাত ঢুকিয়ে জনগণের টাকা জনগণকে ফেরত দেবেন।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে। যে সময়ের নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ, সেই সময় পার্থই শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তাঁর ভূমিকা নিয়ে তদন্তকারীদের মনে প্রশ্ন রয়েছে। অন্যদিকে আবার রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ের চাকরি নিয়েও তুমুল জলঘোলা চলছে। যদিও সোমবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “পার্থদাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র হয়েছিল। সিপিএম-এর কিছু অফিসার নিয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষামন্ত্রীর সম্মতির কাগজে পার্থদার সইয়ের ওপরে ফাঁকা জায়গায় বাড়তি নিয়োগের কথা পরে অনৈতিকভাবে জুড়ে দিয়েছিল বলে আমাদের বিশ্বাস। উপরে টাইপ আর নিচে ছোট করে নতুন নিয়োগের কথা লেখা হয়েছে।”
যদিও এর পাল্টা আবার সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, “১১ বছর ধরে সরকার চালাচ্ছেন। সিপিএমের আমলের বড় অফিসাররা আর রয়েছেন কোথায়? তাঁরা হয় বদলি হয়ে গিয়েছেন, না হলে অবসর নিয়েছেন। নিজেদের অপরাধ ঢাকার জন্য অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছেন।” তবে তৃণমূল-সিপিএমের তরজার মাঝে বিজেপির রাজ্য সভাপতির নিদান নিয়ে নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে জেলার রাজনীতিতে। শুধু এসএসসি কেলেঙ্কারি নয়, পাশাপাশি রাজ্যের স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প নিয়েও শাসকদলকে নিশানা করেন সুকান্ত।
এদিন বালুরঘাটে জেলা মিউজিয়ামের সামনে জনসভা থেকে সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এই সরকারই বাংলায় ‘আয়ুষ্মান ভারত’ চালু করতে দেয়নি। ওরা বলে রাজ্যে নাকি স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প রয়েছে। অথচ প্রথম প্রথম তাও কিছু মানুষ চিকিৎসা পেতেন। এখন আর কোনও পরিষেবাই নেই এই কার্ডের। স্বাস্থ্যসাথী এখন ব্যর্থসাথী। বিভিন্ন হাসপাতালে গেলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নেবে না সরাসরি না বলে, বেড নেই বলে কাটিয়ে দেয়।” যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য, বিজেপির পায়ের মাটি আলগা হতে হতে এখন টলমল। দলের মধ্যেই ওদের নিত্য ঝামেলা। নীচুতলার কর্মীরা দিশাহারা। সেসব থেকে চোখ ঘোরাতেই এসব বলতে হচ্ছে বিজেপির রাজ্য সভাপতিকে।