দক্ষিণ দিনাজপুর: পরীক্ষা শেষ হওয়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই খাতা জমা নিয়ে নেন শিক্ষক। অভিযোগ, সে কারণে ১২ নম্বরের উত্তর লিখতে পারেনি এক পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে সে। মুখ ভার করেই বাড়ি ফেরে। এরপরই ঘর থেকে উদ্ধার হয় তার ঝুলন্ত দেহ। পরিবারের অভিযোগ, শিক্ষক আগেভাগে পরীক্ষার খাতা জমা নিয়ে নেওয়ায় অভিমানে এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে। যদিও ওই শিক্ষক জানিয়েছেন, তিনি সময়মতোই প্রশ্নপত্র দিয়েছিলেন। নির্ধারিত সময়েই খাতা জমা নেন। বংশীহারির এই ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে ওই ছাত্রীর পরিবার। তারা জীবন ঘোষ নামে ওই শিক্ষকের শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বংশীহারী থানার বুনিয়াদপুর স্টেশন সংলগ্ন হাটপুকুর এলাকা। সেখানকারই বাসিন্দা ছিলেন দেবস্মিতা সরকার(১৪)। নবম শ্রেণির ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় বৃহস্পতিবার। স্থানীয় বংশীহারী হাইস্কুলের ছাত্রী দেবস্মিতা। বুধবার তার পরীক্ষা ছিল। দেবস্মিতাদের ঘরে পরীক্ষক হিসাবে ছিলেন স্কুলের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক জীবন ঘোষ। অভিযোগ, পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল বেলা ১২টা ৪৫-এ। কিন্তু পরীক্ষা শেষের ১৫ মিনিট আগে দেবস্মিতাদের ঘরে সকলের পরীক্ষার খাতা কেড়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। বহুবার কাকুতি মিনতি করেও ছাড় দেওয়া হয়নি। ভাল ফল না হওয়ার আশঙ্কায় এই ঘটনা ঘটায় সে বলে দাবি পরিবারের।
দেবস্মিতার এক বান্ধবীর মা জানান, “মাস্টারমশাই ঘণ্টা পড়ার আগেই খাতা নিয়ে নেন। স্কুলে কিন্তু মাইকিং করে বলা হয়েছিল নাইনের খাতা নেওয়া হবে ১২টা ৪৫-এ। কিন্তু ওদের খাতা সাড়ে ১২টায় নিয়ে নেন জীবন স্যর। ওই রুমে সকলের খাতা নিয়ে নেন। পরীক্ষা দিয়ে বেরোনোর সময় খুব কাঁদছিল আমার মেয়ে আর ওর দুই বন্ধু। আমি জানতে চাই কী হয়েছে। বলে আগে খাতা নিয়ে নেওয়ায় লিখতে পারিনি। ৭ নম্বরের উত্তর দিতে পারেনি আমার মেয়ে। এদিকে দেবস্মিতা ১২ নম্বর লিখতে পারেনি। বারবার বলছিল। আমি আবার বোঝালাম এরকম করিস না। তাহলে তো পরের পরীক্ষাগুলোও খারাপ হবে। বললাম, চল তাহলে হেড স্যরকে বলবি। বলল, তাহলে জীবন স্যর ফেল করিয়ে দেবেন।”
যদিও অভিযুক্ত শিক্ষক জীবন ঘোষ বলেন, “আমি ১৫ মিনিট আগে খাতা নিয়েছি কে বলল জানি না। আমি তো যখন খাতা নেওয়ার তখনই নিয়েছি। তবে আমি সঠিক সময়ে প্রশ্ন দিয়েছি, খাতাও নিয়েছি। পরীক্ষার শুরু হয় ১১টা থেকে। দেড় ঘণ্টার পরীক্ষা। সাড়ে ১২টায় পরীক্ষা শেষ। আমি ১১টার আগেই ওদের প্রশ্ন দিয়ে দিয়েছিলাম। যে সমস্ত ঘরে পরীক্ষা শুরু হতে দেরী হয় সেখানে ৫ মিনিট অতিরিক্ত সময় দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল বলে শুনেছিলাম। আমি ওদের বলেছিলাম, যেখানে দেরীতে পরীক্ষা শুরু, ৫ মিনিট বেশি পাবে। এখানে আমি আমার তো কোনও ভুল দেখছি না।”