দক্ষিণ দিনাজপুর: এবার টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ উঠল এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, প্রাথমিক স্কুলে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক মহিলার কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছেন বালুরঘাট কলেজের এক অধ্যাপক। কিন্তু চাকরি তিনি পাননি। এই ঘটনায় পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন ওই মহিলা। শুধু পুলিশ সুপার নন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডিকেও অভিযোগ জানান বালুরঘাট রঘুনাথপুর এলাকার বাসিন্দা তিলকি কর্মকার। যদিও এই অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই অধ্যাপকের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর পরিবারের দাবি, তাদের ছেলে ফেঁসে গিয়েছে। তার মূল্যও চোকাতে হচ্ছে তাদের। অন্যদিকে অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার রাহুল দে।
অভিযোগ, ২০১৪ সালে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি বের হয়। সেই সময়ই বালুরঘাট কলেজের ইংরেজি বিভাগের এক অধ্যাপক চাকরি দেওয়ার নামে লক্ষ লক্ষ টাকা নেন। একাধিক চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে এই টাকা নেন বলে অভিযোগ। এমনও অভিযোগ, প্রথম দিকে চাকরি প্রার্থীদের সময়সীমা দিতেন। আশ্বাস দিতেন, নিয়োগপত্র আসবে, কাজে যোগদানও করতে পারবেন। কিন্তু সেসব কথার কথাই থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ। তিলকি কর্মকারের কথায়, কখনও নিয়োগপত্র দেওয়া হবে বলে বালুরঘাট ডিপিএসসি, আবার কখনও কলকাতা হাইকোর্টে নিয়ে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসিয়ে রাখতেন ওই অধ্যাপক। দিনের পর দিন এই ঘটনা চলতে থাকায় বালুরঘাট রঘুনাথপুর এলাকার প্রাক্তন সেনাকর্মীর স্ত্রী তিলকি কর্মকারের সন্দেহ হয়। এরপরই তিনি টাকা ফেরত চান।
তিলকি কর্মকারের দাবি, স্থানীয় তুলিকাদেবী প্রাথমিক স্কুলে চাকরির আশ্বাস পেয়ে ১০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন ওই কলেজ অধ্যাপককে। দীর্ঘদিন ধরে টাকার জন্য অধ্যাপকের বাড়িতে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকার পরও কাজ হয়নি। এরপরই তিনি পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তিলকি কর্মকারের কথায়, “প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরির জন্য ২০১৪ সালে ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলাম। ছ’ মাসে তিনবারে এই টাকা দিয়েছিলাম। সেই সময়ে আমাকে ভুয়ো নিয়োগপত্রও দেওয়া হয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টে ইন্টারভিউ দেওয়ার নাম করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপরেই বিষয়টি বুঝতে পারি। কিন্তু তবুও টাকা ফেরত পাইনি। পরে অসুস্থতার কথা জানালে মাত্র ১০ হাজার টাকা ফেরত দেন। বাকি টাকার জন্য বহুবার ওই অধ্যাপকের বাড়িতে গিয়েছিলাম। তাই এখন জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছি। পাশাপাশি ইডি দফতরেও অভিযোগ জানিয়েছি।”
এ বিষয়ে প্রতারিত মহিলার স্বামী তথা প্রাক্তন সেনাকর্মী প্রণব কর্মকার বলেন, “বিষয়টি নিয়ে দীর্ঘদিন চুপ করে ছিলাম। ভেবেছিলাম টাকা ফেরত পাব। কিন্তু চারিদিকে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি প্রকাশ্যে আসছে। তাই সাহস করে অভিযোগ জানাতে বাধ্য হলাম।” অভিযুক্ত অধ্যাপককে ফোনে পাওয়া যায়নি। অধ্যাপকের বাড়িতে গেলেও সে বাড়িতে নেই বলে জানিয়েছে পরিবার। তবে এ বিষয়ে অধ্যাপকের বৃদ্ধা মা বলেন, “আমার ছেলে যত টাকা তুলেছে, একটা টাকাও নিজের কাছে রাখেনি। শুনেছি ওকে নাকি একটা গ্যাং ধরেছিল। সেই সব টাকা তারা নিয়ে নিয়েছে। আমরা এখন আমাদের ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, পেনশনের টাকা দিয়ে লাখ লাখ টাকা শোধ করছি। ওর শ্বশুর বাড়ি থেকেও টাকা শোধ করা হচ্ছে। আমরা এই বিষয়টি নিয়ে খুবই দুঃখে রয়েছি।”
বালুরঘাট কলেজের প্রিন্সিপাল পঙ্কজ কুণ্ডুর বক্তব্য, “আমার কলেজের অধ্যাপক তিনি। তবে আমার কাছে এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি। তবে তিনি কিছুদিন ছুটি নিয়েছিলেন। তাই এই বিষয় নিয়ে সঠিক কিছু জানা নেই।” দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার রাহুল দে বলেন, “এক মহিলা ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। আমি ওই মহিলার কাছে সব শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে বালুরঘাট থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”