দার্জিলিং: বিজেপির পথে কি বিমল গুরুং? জিটিএ নির্বাচন চান না বিমল গুরুং। গায়ের জোরে নির্বাচন হলে, অনশনে বসারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। বুধবার কালিম্পঙের সভা থেকে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, পাহাড়ের সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান করতে হবে। ২ এপ্রিল আলোচনার ডাক দিয়েছেন তিনি। পাহাড়ের সমস্যা সমাধানে কনভেনশনে বিজেপি নেতা, দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই আমন্ত্রণ পেলে, তিনি যেতে রাজি। যে কোনও মূ্ল্যে ভোট রোখাই তাঁর চ্যালেঞ্জ।
সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, “গোর্খাদের সমস্যা সমাধানের জন্য বিমল গুরুং হোন কিংবা অন্য কেউ, এক্ষেত্রে ডাকলেই আমি যাব। গোর্খা সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে হবে। এটাই প্রত্যেকে চান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে বুলডোজার চালিয়ে নির্বাচন জিততে চাইছেন, সেটা মানুষের চিন্তাভাবনার পরিপন্থী। নির্বাচন হলে গোর্খাবাসীদের মতের পরিপন্থী হবে। এটা আমরা হতে দেব না। যে কোনও পর্যায়ে গিয়ে আন্দোলন করতে হলে, আমি করব। কেন্দ্রের কাছেও আমি আবেদন জানাব, যাতে জিটিএ নির্বাচন একদম না করতে দেওয়া হয়।”
গত কয়েকদিন ধরেই পাহাড়ের রাজনীতিতে একটা সমান্তরাল সমীকরণ তৈরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একাধিকবার বলতে শোনা গিয়েছে, তিনি আন্তরিকভাবে পাহাড়ে জিটিএ নির্বাচন করাতে চান। যদিও মোর্চা তার বিরোধিতা করছে। মোর্চার তরফে রোশন গিরি ও তাঁর অনুগামীরা ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। সূত্রের খবর, নিজেদের ঘনিষ্ঠ মহলে রোশন গিরি দাবি করছেন, তাঁরা সর্বোচ্চ স্বায়ত্ত শাসন চান। পাহাড়-সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
২ এপ্রিল কালিম্পঙে একটি কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন তাঁরা। বিমল গুরুংপন্থীদের তরফ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে রাজু বিস্তাকে। উল্লেখ্য, বুধবারই কালিম্পঙে দলীয় সভায় বিমল গুরুং জানিয়েছেন, যদি রাজ্য় সরকার জোর নির্বাচন করানোর চেষ্টা করে, তাহলে তিনি অনশনে বসবেন। অর্থাৎ বিমল গুরুংয়ের এই দুই ‘স্ট্যান্ড পয়েন্ট’ নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে রাজনৈতিক মহলে।
পাহাড়ের রাজনীতিতে কি ঘনাচ্ছে নতুন মেঘ? ফের কি মিলছে রং বদলের ইঙ্গিত? এক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বিষয় ফ্যাক্টর হচ্ছে…
♦ জিটিএ প্রস্তাবিত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ফের বিমল গুরুং এবং বিজেপির কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা।
♦ জিটিএ নির্বাচনের বিরোধিতায় বিজেপিকে পাশে পেতে চাইছেন বিমল গুরুং।
♦ গুরুং এর সঙ্গে তৃণমূল এর বোঝাপড়ায় ইতি পড়তে চলেছে?
♦ বিমল গুরুং রোশন গিরি জুটি ফের পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের দাবি কে উস্কে দিতে চাইছে।
♦ এই দাবিতে সায় আছে দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার।
♦ দার্জিলিং এর বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাকে ২ এপ্রিল বৈঠকে আমন্ত্রণ বিমল গুরুং এর।
♦ গুরুং দের ডাকা বৈঠকে যেতে রাজি বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা।
♦ দার্জিলিং এর বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা জিটিএ নির্বাচনের বিরোধী।
♦ জিটিএ নির্বাচন রুখে দিতে কেন্দ্রের কাছে আবেদন জানাবেন সাংসদ রাজু বিস্তা।
♦ জিটিএ নির্বাচন নিয়ে কেন্দ্রের মনোভাব কি?
♦ কেন্দ্র সায় না দিলে কি জিটিএ নির্বাচন করা সম্ভব?
এক নজরে গুরুংয়ের রাজনৈতিক কেরিয়ার
বিমল গুরুংয়ের রাজনৈতিক-কেরিয়ারের গ্রাফচিত্রটা দেখলে অবশ্য তাঁর অনুসন্ধিৎসা নিয়ে বিশেষ কিছু আঁচ করা যায় না। ২০১৭ সালে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর কার্যত অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন বিমল গুরং। ২০১৯ সালে ফের প্রকাশ্যে আসেন বটে, তবে বদলে গিয়েছিল তাঁর রাজনৈতিক রং। লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সঙ্গে সখ্যতা বেড়েছিল তাঁর। তবে তা টেকেনি বেশিদিন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তাঁর পাহাড়ে প্রত্যাবর্তন। সেসময় মমতাকে মা বলে সম্বোধন করেছেন তিনি। কখনও মমতাকে মা ডেকেছেন, কখনও তাঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। একুশ সালেই গুরুং ডাক দিয়েছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জাতীয় নেত্রী করার। আর সেই গুরুং-ই এবার মমতার সিদ্ধান্তের উল্টো পথে হাঁটছেন।