শিলিগুড়ি: গুরুনানক জয়ন্তীতে দেশবাসীর উদ্দেশে বড় ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। বিতর্কিত তিন কৃষি আইন(Farm Laws) প্রত্য়াহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় কার্যত আনন্দলহরী বয়ে গিয়েছে গোটা দেশে। লাগাতার এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা এই কৃষক আন্দোলনকে আগেই সমর্থন জানিয়েছিল বাম শিবির। এ বার, কৃষকদের জয়ে শুভেচ্ছা বার্তা জানালেন বাম নেতারা।
সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য বলেন, “এ এক ঐতিহাসিক জয়। আমি স্বাধীনতা আন্দোলন দেখিনি। এই আন্দোলন দেখলাম। ধারাবাহিকভাবে এই আন্দোলনের চাপেই আইন প্রত্যাহারে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্র। আমরাও শিখলাম। আন্দোলনের ধারা আগামীতে এমনটাই হবে। আশা করি কৃষি আইন প্রত্যাহারের পাশাপাশি, অন্য সব ক্ষেত্রেও পিছু হটবে সরকার।”
অন্যদিকে, বাম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, “প্রধানমন্ত্রীর দম্ভের অবসান হল। বিগত এক বছর ধরে এই আন্দোলন চলেছে। এই জয় সাধারণ কৃষকের জয়। আন্দোলন করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছে কৃষকদের।”
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “ওই তিনটি বিল গায়ের জোরে পাশ করিয়েছিল কেন্দ্র। জবরদস্তি চালু করবে বলে উঠে পড়ে লেগেছিল। ওই আন্দোলনে ১০০ জনের বেশি কৃষক প্রাণ দিয়েছেন। তাঁদের রক্তের বিনিময় ব্যর্থ হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বুঝতে পারছেন জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে তার ফল কী হবে! যে কৃষকরা তাঁদের মহামূল্য জীবন দিলেন তা কি ফিরিয়ে দিতে পারবেন মিস্টার মোদী? এই জয় কৃষকদের বড় জয়।”
শুধু বাম শিবিরই নয়, কৃষকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাজ্যর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই টুইট করেন মুখ্যমন্ত্রী। টুইটবার্তায় তিনি লেখেন, “প্রত্যেক আন্দোলনকারী কৃষককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি যারা কৃষি আইনের বিরুদ্ধে নিরন্তরভাবে লড়াই চালিয়েছেন এবং বিজেপির নৃশংসতার শিকার হয়েও দমে যাননি। এই জয় আপনাদের। একইসঙ্গে যারা এই যুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।”
টুইট করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee)-ও। তিনি লিখেছেন, “সকলকে কৃষকদের আরও শক্তি! সমস্ত প্রতিকূলতা পেরিয়ে কৃষকরা নিজেদের সিদ্ধান্তে দৃঢ় থেকে যে কঠিন ও সুদীর্ঘ আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন, তা বিজেপিকে নিজের জায়গা দেখিয়ে দিয়েছে। গণতন্ত্রে ভিন্নমতের আসল শক্তি এটাই এবং প্রত্যেক কৃষককে তাদের সাহসিকতার জন্য স্যালুট জানাই।”
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রের তরফে কৃষি আইন আনার পরই অশান্তির আঁচ ছড়িয়েছিল। পঞ্জাব থেকে ধীরে ধীরে বাকি রাজ্যেও কৃষি আইনের বিরোধিতা করে ছড়িয়ে পড়ছিল আন্দোলন। গত বছরের ২৬ নভেম্বর দিল্লির তিন সীমান্ত আটকে আন্দোলন শুরু করে কৃষকরা। পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ সহ একাধিক রাজ্যের কৃষকেরা এই আন্দোলনে যোগ দেয়।
কেন্দ্রের তরফে একাধিকবার কৃষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি। কেন্দ্রের তরফে দেড় বছরের জন্য আইন স্থগিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হলেও কৃষকেরা আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অনড় ছিল। অবশেষে আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষকদের দাবি মেনে সেই তিন আইন প্রত্যাহার করে নিলেন।
শুক্রবার, কৃষকদের কোনও রকম দোষ না দিয়ে, ক্ষমা চেয়েই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “হয়তো আমাদের প্রচেষ্টাতেই কোনও খামতি রয়ে গিয়েছে। সেই কারণেই আমরা কৃষকদের বোঝাতে পারিনি। আমি গোটা দেশকে জানাচ্ছি যে আমরা তিন কৃষি আইন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। চলতি মাসের শেষেই যে সংসদ অধিবেশন শুরু হচ্ছে, তাতে কৃষি আইন প্রত্যাহার করার যাবতীয় কাজ শেষ হবে। আমি আন্দোলনরত কৃষক ভাইদের অনুরোধ করছি, এ বার আপনারা ঘরে ফিরে যান, আপনাদের চাষের জমিতে ফিরে যান। আসুন আমরা সবাই মিলে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করি।”
আরও পড়ুন: Mamata Banerjee: ‘সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের খবর পজিটিভলি করুন…বিজ্ঞাপন নিশ্চই পাবেন’