শিলিগুড়ি: ইদানিং প্রকট হয়ে উঠছে চাকরি প্রার্থীদের হাহাকারের ছবিটা। শহর কলকাতায় প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ-বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। আবার এমনও হয়, গ্রুপ ডি’র কোনও সরকারি চাকরি, সেই চাকরির জন্য আবেদন জানান হাজার হাজার ডিগ্রিধারী। স্নাতক, স্নাতকোত্তররা তো থাকেনই। বিভিন্ন বিষয়ে পিএইচডি করছেন, এমন ছেলে মেয়েকেও সেই চাকরির আবেদন করতে দেখা যায়। এবার সেই ছবি দেখা গেল শিলিগুড়িতেও। পুরনিগমের বিভিন্ন পার্কে মালি পদে লোক চেয়ে বিজ্ঞাপণ দেওয়া হয়েছিল। আবেদনপত্র বাছাই করতে গিয়ে হতবাক কর্তৃপক্ষ। বহু আবেদন এসেছে উচ্চ ডিগ্রিধারীদের।
গত অগস্ট মাসে শিলিগুড়ি পুরনিগমে অস্থায়ী মালি পদে ত্রিশ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞাপণ দিয়েছিল পুরনিগম। বেতন গড়ে পাঁচ হাজার টাকা। চলতি সপ্তাহে সেই আবেদন ঝাড়াই বাছাই শুরু হতেই দেখা যায় প্রায় ১৬০০ আবেদনকারী আবেদন করেছেন। তাদের অধিকাংশের শিক্ষাগত যোগ্যতাই স্নাতক উত্তীর্ণ। কেউ কেউ আবার কম্পিউটারে ডিপ্লোমাও করেছেন।
প্রশাসক বোর্ডের সদস্য স্বপন দাস জানান, পুরনিগমের পার্কে মালি পদে লোক চেয়ে যে বিজ্ঞাপণ দেওয়া হয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল চাকরি প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। কিন্তু আবেদনপত্র জমা পড়তেই দেখা গেল অষ্টম শ্রেণি পাশ করা ছেলেরা যেমন আবেদন করেছেন, পাল্লা দিয়ে চাকরি চেয়েছেন মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এমনকী স্নাতকেরাও। কেউ কেউ এমনও রয়েছেন যাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছেন।
রাজ্যে ঢালাও কর্মসংস্থান হয়েছে বলে দাবি রাজ্য সরকারের। সেক্ষেত্রে বার বার কেন এই ছবি দেখা যাচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা। কেন উচ্চ ডিগ্রিধারীরাও বাগানের মালির কাজ করতে চাইছেন, সেটাই প্রশ্ন বিভিন্ন মহলের। কারণ, প্রতিটি পদে নিয়োগের জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতার কথা নির্ধারিত করে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে যদি কেউ আরও বেশি ডিগ্রির অধিকারী হন এবং আবেদন করেন, তা হলে অন্যদের আবেদন বাতিল হয়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা তো থাকতেই পারে!
এ বিষয়ে অবশ্য স্বপন দাসের দাবি, ডিগ্রিধারীরা অন্যত্র আবেদন করছেন, কাজও পাচ্ছেন। কিন্তু যে তুলনায় প্রতি বছর ছেলেমেয়ে শিক্ষিত হচ্ছেন, তার তুলনায় কর্মসংস্থান কম হচ্ছে। সে কারণেই এই অবস্থা। পাশাপাশি তিনি বলেন, করোনাকালে অনেকে কাজ হারিয়েছেন। সেই কারণেও এমনটা হয়ে থাকতে পারে। তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁরা যোগ্য ও উপযুক্ত, তাঁদেরই নিয়োগপত্র দেওয়া হবে।
প্রশাসক বোর্ডের সদস্য স্বপন দাসের কথায়, “আমাদের মালি পদে নেওয়ার জন্য বিজ্ঞাপণ দেওয়া হয়েছিল। ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্য অষ্টম শ্রেণি পাশ বলা হয়েছিল। ৩০ জন নেওয়া হবে। ১৬৮০ জন আবেদন করেছে। এখনও ১৫০ জনের এন্ট্রি বাকি। এখনও স্নাতকোত্তর পাইনি। তবে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক চাকরি প্রার্থী প্রচুর। যদিও আমরা সকলকে ডাকলেও দেখে নেব যে পদে লোক চাইছি, যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁরা যোগ্য কি না। শারীরিকভাবে এই কাজে সক্ষম কি না সেটাও বিচার্য হবে।”