শিলিগুড়ি : পুরভোটের মুখে শিলিগুড়িতে অস্বস্তি বেড়েছে শাসক দলের। স্থানীয় তৃণমূল কর্মীর ছেলেকে অপহরণ করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন দলেরই দুই যুব নেতা। শুধু তাই নয়, ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থীর সঙ্গে ওই দুই নেতার ছবি প্রকাশ্যে আসায় অস্বস্তি বেড়েছে আরও। আর সেই অভিযোগ সামনে আসতেই ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামল তৃণমূল।
পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্ধার হওয়া ওই তরুণের পরিবারের সঙ্গে শুক্রবার সকালেই দেখা করলেন জেলা তৃণমূলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবারই গ্রেফতার করা হয়েছে তপন দাস ও রতন পাল নামে দুই নেতাকে। ঘটনার পরের দিন সকালেই হাজির নেতা- নেত্রীরা।
এ দিন সকালে শিলিগুড়ির ভক্তিনগরে রিতঙ্কর সিংহ নামে ওই তরুণের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ ও যুব সভাপতি কুন্তল রায়। পাপিয়া ঘোষ এ দিন বলেন, ‘যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক বিকাশ সরকার এখন বহিষ্কৃত। সেই বিকাশ সরকার যুব তৃণমূলের জেলা সভাপতি থাকাকালীন জেলা কমিটিতে জায়গা পেয়েছিলেন অপহরণ- কাণ্ডে যুক্ত তপন দাস। এখন বিকাশ সরকার অতীত। তাঁর কমিটির নেতারাও অতীত। দল বড় হচ্ছে। তাই আগাছারাও ভিড় জমাচ্ছে দলের পতাকার অন্দরে। আমরা আরও সতর্ক থাকব।’ ধৃত দুজন দলের কেউ নয় বলেই দাবি করেছেন তিনি। এই ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে যুব সভাপতি কুন্তল রায় বলেন, ‘বিকাশ সরকার যখন যুব সভাপতি ছিলেন সেই কমিটিতে এই লোকেরা ছিল বলেই আমরা দীর্ঘসময় দলে থেকেও ওই কমিটিতে থাকিনি। দলে শুদ্ধিকরণ দরকার। এদের বহিষ্কারের দাবি তুলছি। ভোটের মুখে এরা যে ভাবে দলকে বদনাম করলেন তা মেনে নেওয়া যায় না।’
অন্যদিকে পুলিশের তদন্তে নানা দিক সামনে এসেছে। এলাকায় একাধিক তোলাবাজিসহ নানা অভিযোগে বিদ্ধ তপন দাস ও রতন পাল। পুলিশ জানতে পেরেছে, গত ১৩ জানুয়ারি পার্টি করার নাম করেই ওই তরুণকে ডেকে মদ্যপান করানো হয়। তাতে মেশানো হয় ঘুমের ওষুধ। বেহুঁশ অবস্থায় তাঁর শরীরে মাদক ইঞ্জেকশন দিয়ে গত সাতদিন তালাবন্ধ ফ্ল্যাটে নেশাগ্রস্ত করে আটকে রাখা হয়েছিল রিতঙ্করকে।
তৃণমূল নেতারা দলের অস্বস্তি এড়াতে চাইলেও শিলিগুড়িতে এখন এই ইস্যুতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। বিজেপি বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ এই প্রসঙ্গে বলেন, দায় ঝেড়ে ফেললে হবে না, অপহরণ-কাণ্ডে দলের নেতারা জড়িয়ে পড়ার ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের সংশোধন করুন শাসক দল। শুক্রবার শিলিগুড়িতে ঘটনার প্রতিবাদে মানব বন্ধনে অংশ নিয়ে এই দাবি জানান তিনি।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে তপন দাস নামে ওই তৃণমূল নেতার এলাকায় একটি ক্যাফে রয়েছে। সেই ক্যাফেতে প্রায়ই যেতেন ওই তরুণ। সেখানে দীর্ঘ সময় কাটাতেন তিনি। তাঁর কাছে অনেক টাকা পয়সাও থাকত। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর ওপর নজর রাখার পরই অপহরণের ছক কষা হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ। এরপর তাঁকে মাদক খাইয়ে অপহরণ করা হয়। অপহৃত তরুণের বাবা মানিক কুমার সিংহ জানিয়েছেন তিনিও তৃণমূলেরই কর্মী। এ দিকে, ওই দুই নেতার একাধিক ছবি রয়েছে পুরভোটে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী প্রতুল চক্রবর্তীর সঙ্গে।
আরও পড়ুন : Municipality Election: ভোটারদের সাহস জোগাতে কী কী করবে পুলিশ, তালিকা দিল নির্বাচন কমিশন