আরামবাগ: “বলত, ‘তুমি মরে যাও।’ এমনকি তার বাড়িতে গেলে ভয় দেখিয়ে তাড়িয়েও দেয় সে। পাশাপাশি হুমকিও দিয়েছিল যে পুলিশ জানিয়ে লাভ নেই। পুলিশ কিছু করতে পারবে না। পুলিশ যে টাকা দিয়ে দেব।রাস্তা ঘাটে আমাকে ভীষণ ভাবে অপমানিত হতে হত। কতজন কত কথা বলত আমাকে। আমার জীবনটা ও শেষ করে দিল। অপমানিত হতাম। লজ্জায় মুখ দেখাতে পারব না বলে আর বাড়ি থেকেই বের হতাম না। নাসারুলের এই প্রতারণার জন্যই জন্যই আমি বিষ পান করেছি।”
মৃত্যুর আগে এমনই বয়ান ছিল বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করা আয়েষার। তার দাবি ছিল, সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। প্রেমিক কথা দিয়েছিল বিয়ে করবে। কিন্তু কিছুদিন ধরে এড়িয়ে চলছিল সে। বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক বার সহবাস করার পর এখন বেঁকে বসে সে। জানিয়ে দেয় বিয়ে করতে পারবে না। প্রণয়ে প্রত্যাখ্যাত ও প্রতারণার শিকার হয়ে এবং সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন হওয়ার ভয়ে তাই বিষ খেয়েছে সে। রবিবার সেই তরুণীর মৃত্যুর পর তীব্র উত্তেজনা ছড়াল হুগলির গোঘাটের শাওড়া গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। ঘটনার জেরে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্ত প্রেমিকের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি ও গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। যদিও অভিযুক্ত যুবক এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে বলে খবর।
মৃত ওই তরুণীর নাম আয়েষা খাতুন। গত ১৫ আগস্ট বিষ খেয়ে ফেলে সে। বাড়ির লোকজন তড়িঘড়ি হাসপাতালে ভর্তি করে। সবরকম চেষ্টা সত্ত্বেও রবিবার রাতে বর্ধমান মেডিকেল হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার। আর এর পরেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত যুবক মোল্লা নাসারুল হকের বাড়ি গোঘাটের আমডোবা গ্রামে। জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত বিবাহিত। কিন্তু তার পরেও তরুণীকে প্রেমের জালে ফাঁসায় সে। বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তার সঙ্গে একাধিক বার সহবাস করে বলে অভিযোগ। কিন্তু এই যুবকের আসল কীর্তি সব জেনে যাওয়ায় লাগাতার অশান্তি হত আয়েষা ও নাসারুলের। তখন সে আয়েষাকে বার বারই মরে যাওয়ার জন্য প্ররোচনা দিত বলে অভিযোগ। আর তার জেরেই এই আত্মহত্যা।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্তের এক ছেলে ও মেয়ে আছে। কিন্ত সে সব গোপন করে পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা আয়েষার সঙ্গে প্রণয় ঘটিত সম্পর্কে লিপ্ত হয়। আর বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিকবার সহবাসও করে। প্রায় বছর দেড়েক ধরে তাদের এই সম্পর্ক চললেও পরিবারের লোকজন কিছুই জানতে পারেননি। কয়েকদিন আগে মেয়ে নিজেই এসব বলে। আর তার পরেই বিষ খায় সে। এমনকি হাসপাতালে মৃত্যুশয্যাতেও মৃত্যুর আগে আয়েষা জানায়, “নাসারুলের সব ঘটনা জানতে পারার পরেই তাকে মরে যেতে প্ররোচনা দিত। বলত, তুমি মরে যাও।” আরও পড়ুন: ‘বিয়ে করলেই চাকরি!’ ৬ স্ত্রীয়ের টাকায় আয়েশে কাটছিল দিন, শেষ রক্ষা হল না…