আরামবাগ: বিদ্যালয়ের সম্পত্তি রক্ষা করতে এবার আদালতের দ্বারস্থ স্কুল কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ, গোঘাটের বেঙ্গাই হাই স্কুলের সম্পত্তি বিক্রি করে দেওয়ার চক্রান্ত করছেন কয়েকজন দালাল। অসৎ উপায়ে বিদ্যালয়ের সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। রাতের অন্ধকারে ওই সম্পত্তির ওপর খুঁটি পুঁতে দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে দালালেরা, এমনটাই অভিযোগ বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির। আর বিষয়টি নজরে আসতেই আদালতে ছুটলেন স্কুলের কর্তারা।
প্রসঙ্গত, ১৯৩০ সালে ডঃ রাধাকৃষ্ণ পাল এই বিদ্যালয়ে স্থাপন করেন। শুরু থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয়ের সম্পাদক ছিলেন। বিদ্যালয়ের শ্রীবৃদ্ধি কামনায় হুগলির উত্তরপাড়ার জমিদার সত্য রঞ্জন বন্দোপাধ্যায় ১৯৪২ সালে ৪০২ শতক জায়গা উচ্চ বিদ্যালয়কে দান করেন। দলিলে সত্যরঞ্জন বাবু উল্লেখ করেছিলেন বিদ্যালয়ে যদি ভবিষ্যতে আর না থাকে তবে ওই সম্পত্তি তাঁদের কাছে ফেরত যাবে। বাস্তবে স্কুল আজও বর্তমান। শুধু বিদ্যালয়ের নাম বদলেছে। বড় ক্য়াম্পাস তৈরির জন্য পাশের একটি জায়গায় স্কুলের মূল ভবনকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সরকারের প্রটোকল মানার জন্য এটা করা হয়েছে বলে জানাচ্ছেন স্কুলের লোকজন। এমতাবস্থায় প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যক্তি স্কুলের পুরনো সম্পত্তি গোপনে ষড়যন্ত্র করে দখল নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ। সুযোগ নেওয়া হচ্ছে নাম ও জায়গা বদলের।
এ ঘটনা জানার পরেই স্কুল কর্তৃপক্ষ সম্পত্তির রক্ষার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন। সাধারণ মানুষ যাতে ওই সম্পত্তি কিনে প্রতারণার শিকার না হন তার জন্য ইতিমধ্যেই স্কুল কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশ মত এলাকায় প্রচার করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনিক মহলেও জানানো হয়েছে।
তৎকালীন উত্তরপাড়ার জমিদার বেঙ্গাই মধ্য ইংরাজি বিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে প্রতিষ্ঠাতা রাধাকৃষ্ণ পালকে বিদ্যালয়ের জন্য ৪০২ শতক জায়গা বাৎসরিক এক টাকা খাজনায় দেন। পরবর্তীকালে এই বিদ্যালয়টি বেঙ্গাই হাই স্কুল নামে সরকারিভাবে আত্মপ্রকাশ করে। বেঙ্গাই হাই স্কুলের সভাপতি হন তৎকালীন বিধায়ক রাধাকৃষ্ণ পাল। এর রেজলিউশন কপি ও জমিদারের দান করা দলিল বেঙ্গাই স্কুলে আজও বিদ্যমান। জমিদার যে বিদ্যালয়ের উন্নতিকল্পে ওই জমি দিয়েছেন সেই কথা দলিলে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীকালে কামারপুকুর বেঙ্গাই রাজ্য সড়কের পাশের বিদ্যালয়ের মূল্যবান জায়গা কোন এক অজ্ঞাত কারণে গোঘাট ২ নং ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর থেকে বাদ যায়। ফলে তা ছিল না সরকারি রেকর্ডে। আর এই সুযোগে কাজে লাগিয়েই বিদ্যালয়ের জায়গা দখল নেয় শ্যামল দত্ত সহ অন্যান্যরা। স্কুল কর্তৃপক্ষ গোটা বিষয়টি জানিয়েছেন আরামবাগ আদালতে। এমনকি ওই জায়গার ওপর মোবাইল টাওয়ার বসিয়ে ভাড়া দেওয়ার অভিযোগ তুলছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আদালতে মামলার উল্লেখ করে স্কুল থেকে ওই জায়গায় একটি বোর্ড দেওয়া হলেও তা পরবর্তীকালে ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ ও ওঠে। যদিও স্থানীয় বেঙ্গাই গ্রাম পঞ্চায়েত কয়েকদিন আগেই দুই পক্ষকে নিয়ে সালিশি বসায় বলে অভিযোগ।