ভদ্রেশ্বর: ২৯৫ বছর হয়ে গিয়েছে। এখনও সেই আগের মতোই মহা ধুমধামের সঙ্গে চলে আসছে ভদ্রেশ্বরের বিঘাটি চক্রবর্তী পরিবারের পুজো। মাতৃ-প্রতিমাকে এখানে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। এর পিছনে কিন্তু রোমহর্ষক ইতিহাস রয়েছে।
একটা সময় এই পরিবারের সকলেই প্রায় তন্ত্র সাধনা করতেন। সেই মতো শাক্তধর্মের সাধকরা মাতৃ আরাধনায় মত্ত থাকতেন। কথিত আছে, আগে পুজো চলাকালীন দুর্গা মূর্তি কাঁপত। তাই পুজোর পাঁচদিন যাতে প্রতিমা পড়ে গিয়ে পুজোয় যাতে কোনও রকম বিঘ্ন না ঘটে সেই কারণে কাঠামোর সঙ্গে শিকল বাঁধা থাকে প্রতিমা। সেই রীতি চলে আসছে আজও।
প্রতিদিন অন্ন ভোগের সঙ্গে তিনদিন বলি প্রথা রয়েছে চক্রবর্তী বাড়ির পুজোয়। তার মধ্যে সন্ধি পুজোয় ছাগ বলিও প্রচলন রয়েছে। এখনও নবমীর দিন সেই ধারা জারি রয়েছে চক্রবর্তী বাড়িতে।
ইতিহাস বলছে, চক্রবর্তীদের প্রথম পুজো শুরু হয় অনুমানিক বাংলার ১১৩৫ সাল নাগাদ। চক্রবর্তীরা তখন পণ্ডিত ছিলেন। পরবর্তীকালে তাঁদের পূর্বপুরুষরা করতেন তন্ত্র সাধনা। আগে মাটির মন্দিরে তালপাতার ছাউনিতে পুজো করা হত। পরে বাঁশ ও টালির ছাউনি দেওয়া হতো মন্দিরে। বর্তমানে নতুন করে পাকা দুর্গা দালান করে সেখানেই মায়ের পুজো হয়।
মাতৃ প্রতিমা এখানে একচালায় অধিষ্ঠান করেন। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, কোনও এক সময় চক্রবর্তীদের পরিবারে আর্থিক সঙ্কট নেমে আসে। এমন অবস্থা হয়ে যায় যে কোন উপায় না পেয়ে পুজো বন্ধ করে দিয়ে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। ফল কেনার মতো অর্থও ছিল না তাঁদের কাছে। সেই সময় মা তাঁদের স্বপ্নাদেশ দেয়,গ্রাম ছেড়ে না যাওয়ার জন্য। সেই মায়ের আদেশমতে প্রতিবেশী সাঁতরা বাড়ির কলা গাছের থোর ও মান্না বাড়ির ঘি দিয়ে নৈবিদ্য দিয়ে আবার পুজো শুরু হয়। তাই নবমীর দিন থোরের নৈবিদ্য দিয়ে পুজো করা হয়।
পুজোর দিন গুলিতে সারা দিন নিষ্ঠা ভরে পুজো হয়ে আসছে। এই পরিবারের বতর্মান প্রজন্মের এখনও একজন পন্ডিত্য করেন।।