খানাকুল: বন্যায় (Flood) বিপর্যস্ত হুগলি (Hooghly) জেলার বিস্তীর্ণ অংশ। আরামবাগ (Arambagh) বা খানাকুলের (Khanakul) একাধিক জায়গায় এখনও জমে এক গলা জল। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও (Mamata Banerjee) পরিদর্শন করে এসেছেন হুগলির বন্যা পরিস্থিতি। কিন্তু তারপরও কোনও সরকারি সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ বহু বাসিন্দার। খাবার তো দূর অস্ত, মাথার ওপর একটু ত্রিপলও জোটেনি সেখানকার বাসিন্দাদের। স্কুলের ছাদে রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত কাটাচ্ছেন দুর্গতরা। নিজেদের ঘরের চাল বয়ে এনে খাচ্ছেন তাঁরা। স্পিডবোটে খানাকুলের সেই এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে tv9 বাংলা। তবে জনপ্রতিনিধিদের কারোরই দেখা মেলেনি।
খানাকুলের ত্রাণ শিবিরে বানভাসি মানুষজন গোরু-ছাগলের সঙ্গেই দিন গুজরান করছেন। শিবিরে কোনও সরকারি সাহায্য এসে পৌঁছয়নি। নিজেরাই বাড়ি থেকে কিছু শেষ রসদ নিয়ে এসে পৌঁছেছেন স্কুল ঘরে। বন্যার জলের চাপ বাড়তে থাকায় স্কুল ঘরের ভেতরেও জল ঢুকে গিয়েছে। শেষমেষ স্কুলের ছাদেই, খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন তাঁরা।
খানাকুলের রামচন্দ্রপুর, কুশলী সহ একাধিক গ্রামে ১৫ ফুট জলস্তর। রীতিমতো বইছে স্রোত। আর জল ক্রমশ বাড়তে থাকায় এলাকার মানুষজন গরু -ছাগল, সন্তান-সন্ততি নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কুশলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এখানেই প্রতিবারে বন্যায় সরকারি ত্রাণ শিবির করা হয়। তাই অপেক্ষাকৃত উঁচু কুশলী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। ক্রমাগত জল বাড়তে থাকায় বিদ্যালয় ভবনেও জল ঢুকেছে। বাধ্য হয়ে স্কুলের একতলা ছেড়ে ছাদে গিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁদের। বানভাসিদের অভিযোগ, এখনো সরকারের তরফে কেউ খাবার দেননি। পানীয় জলের ব্যবস্থাও নেই। অভিযোগ, খোঁজই নেয়নি প্রশাসন।
ত্রাণ শিবিরে এক মহিলা জানান, এক গলা জল ঠেলে এই স্কুলে এসে পৌঁছেছেন তাঁরা। রবিবার রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। ভিজে যাওয়া ছাদেই সন্তানদের নিয়ে রাত কাটিয়েছেন তাঁরা। চায়না বণিক নামে আর এক মহিলা জানান, তাঁর ঘরে যে শেষ চালটুকু ছিল, সেটা নিয়ে এসেছেন। সেটাই ফুটিয়ে খাওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের তরফ থেকে কেউ এখনও পর্যন্ত কোনও সাহাযয় করেননি বলেই অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও, কেউই এই বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি।
ডিভিসি জল ছাড়ায় খানাকুলের পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। খানাকুলের দুটি ব্লকের ২৪ গ্রাম পঞ্চায়েতের সব কটিই জলমগ্ন। লক্ষাধিক মানুষ জলবন্দি। পানীয় জলের কলগুলিকে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছে না। পানীয় জলেরও সঙ্কট দেখা দিয়েছে। খানাকুলের পানশিউলি, মাড়োখানা, নতিবপুর, খুনিয়াচক, পলাশপাই, মাকড়ি, চিংড়া, ধান্যঘোড়ি, কাকনান, ঘোড়াদহ, বন্দর, রাজিহাটি, শবল সিংহপুর, বালিপুর, উদনা তাঁতিশাল, পোল, পাতুল, হরিশ্চক, রামচন্দ্রপুর, কুশলী-সহ একাধিক এলাকা এখন জলমগ্ন। উল্লেখ্য, গত শনিবার হেলিকপ্টারে খানাকুলের ওপর দিয়েই এলাকা পরিদর্শন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন: Drinking Water: কল খুললেই বেরিয়ে আসছে ঘোলা জল, কলকাতার পর ‘জলাতঙ্ক’ হুগলিতেও