হুগলি: প্রসব যন্ত্রণা উঠছিল কয়েকদিন ধরেই। দেরি না করে প্রসূতির পরিবার তাঁকে হাসপাতালেও নিয়ে যাচ্ছিল। হাসপাতাল ভর্তি নিলেও, প্রসূতিকে ছেড়ে দিচ্ছিলেন পর মুহূর্তেই। হাসপাতালের চিকিত্সকদের বক্তব্য ছিল, গর্ভস্থ শিশুর নাকি এখনও চোখই ফোটেনি। এরকমই ওই প্রসূতির প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় বুধবারও। তাঁকে ফের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতাল থেকে পরামর্শ দেওয়া হয় তাঁরা যেন তাঁকে কোনও নার্সিংহোমে ভর্তি করান। গোটাটাই দাবি রোগীর পরিবারের। তাঁদের দাবি, হাসপাতাল থেকেই এরকম পরামর্শ শোনার নার্সিংহোমে নিয়ে গিয়েছিলেন প্রসূতিকে। সেখানে চিকিত্সকরা পরীক্ষা করে দেখে বলেন, গর্ভস্থ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন রোগীর পরিবারের সদস্যরা। উত্তেজনা চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে।
ঘটনা সূত্রে জানা গিয়েছে, চুঁচুড়ার সাহাগঞ্জ আর্যপল্লির বাসিন্দা বছর কুড়ির রূপা মণ্ডল প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে বিগত কয়েকদিন ধরেই হাসপাতাল-বাড়ি করছিলেন। চার বার চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলেও ভর্তি করার পর মুহূর্তেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পরিবারের। রোগীর পরিবারকে জানানো হয়েছিল বাচ্চার এখনও চোখ ফোটেনি।
অভিযোগ, মঙ্গলবার ভর্তির পর পরিবারের লোক সিজার করার কথা বললে তাঁদের বাইরে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়। বুধবার মগরার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে চিকিৎসক পরীক্ষা করে বলেন, রূপার গর্ভস্থ সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। তড়িঘড়ি রোগীকে সরকারি হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলা হয়।
এদিন রাতে রোগীকে চুঁচুড়া হাসপাতালে নিয়ে আসার পরই ক্ষোভে ফেটে পড়েন পরিবারের সদস্যরা। ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। লেবার রুমের সামনেই বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন তাঁরা। চুঁচুড়া থানার পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোগীর এক পরিবারের সদস্য বলেন. “আমরা চার দিন ভর্তি করানোর চেষ্টা করেছি। আজকে নিয়ে হল পাঁচ দিন। মেয়েটা যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিল। আজ পেটের মধ্যেই বাচ্চাটা মরে গেল। আমাদের বারবার বলা হয়েছে, বাচ্চটা বড় হয়নি, চোখ ফোটেনি। গত পরশু এসেছিলাম, সেদিনও একই কথা বললেন লেডি ডাক্তার। আমরা বলেছিলাম, সিজার করে দিন।”
রোগীর আরেক আত্মীয়ের কথায়, “মেয়েটা আমাদের বারবার বলছিল, যন্ত্রণা হচ্ছে। ডাক্তারকে বলেছিলাম সেকথা। শুনল না। বেশি বলার পর নার্সিংহোমে নিয়ে যেতে বললেন। আমরা টাকা জোগাড় করে নার্সিংহোমে নিয়ে গেছিলাম। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। এখানে ভর্তি করিয়ে চিকিত্সা চললে সন্তানটা বেঁচে যেত হয়তো। ”
যদিও এ বিষয়ে হাসপাতালের দাবি ‘ডেলিভারির’ সময় না হওয়াতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। আর যে দুটো রিপোর্ট পরিবার দাবি করছে, দুটোই বাইরে থেকে করানো হয়েছে। হাসপাতালের কোন ভূমিকা নেই। নার্সিংহোমের রিপোর্ট দেখতে চায়নি বলে অভিযোগ।