কোন্ননগর: লকআপের মধ্যে বান্ধবীকে টেনে সপাটে চড় মারেন শান্তা। আর তা থেকেই তদন্তকারীরা মনে করছেন, সন্তান খুনে অভিযুক্ত মা শান্তার কোনওভাবে বিরক্তি জন্মেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী-প্রেমিকা ইফফাত পারভিনের ওপর। সেটা হতে পারে সন্তানকে খুনের নৃশংসতা দেখে। কোন্নগরে শিশু খুনে অভিযুক্ত মা ও বান্ধবীর ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিল শ্রীরামপুর আদালত। ন’দিনের পুলিশ হেফাজত শেষে আজ শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হয় শিশুর মা ও তাঁর বান্ধবীকে।
শিশুর মা শান্তা শর্মা দাবি করেন, তিনি কিছু জানেন না। বান্ধবী তাঁর সন্তানকে খুন করেছে কিনা সে প্রশ্নেও নিরব থাকেন। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, থানা লকআপে বান্ধবী ইফফাত পারভিনকে সপাটে চড় মারেন শান্তা শর্মা। কোন্নগর কানাইপুরে একটি দু কাঠা জমি কিনেছিলেন শান্তা। সেই জমি বিক্রি করে ফ্ল্যাট কিনে দুজনে থাকার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের।
স্বামী পঙ্কজের মাথার টাক পছন্দ ছিল না শান্তার। বান্ধবী ইফফাতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে বাধা হচ্ছিল সন্তান। স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোককে শিক্ষা দিতে সন্তানকে খুনের পরিকল্পনা করে মা, এমনই মনে করছে তদন্তকারীরা। আর বান্ধবী ইফফাতকে দিয়ে সেই পরিকল্পনার রূপ দেন। তবে শিশু খুনে যে নৃশংসতা দেখা গিয়েছে, তাতেই হয়ত প্রিয় বান্ধবীর প্রতি বিরক্ত শান্তা। লকআপে তার আচরণে তেমনই মনে হয়েছে তদন্তকারীদের।
কোন্নগর আদর্শ নগরের পঙ্কজ ও শান্তা শর্মার আট বছরের শ্রেয়াংশুকে নৃশংসভাবে খুন করা হয় গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। সেদিন সন্ধায় বাড়িতে কেউ ছিল না। টিভি দেখছিল শ্রেয়াংশু। মাথায় থান ইট দিয়ে আঘাত করে মূর্তি দিয়ে মেরে ছুরি দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। ঘটনার চার দিন পর গ্রেফতায় হয় শিশুর মা ও বান্ধবী।
অভিযুক্তদের আইনজীবী সৈকত মন্ডল বলেন, যেহেতু ৩০২ ধারায় খুনের মামলা। তাই শ্রীরামপুর আদালত জামিন দেয়নি। আইনজীবীর দাবি,অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ দাখিল করতে পারেনি পুলিশ। ফোন আর সিসিটিভি দেখিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে যে অভিযুক্তরাই দোষী।
সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী অরুণ আগরওয়াল বলেন, “তদন্তকারী অফিসার সঠিক তদন্ত করছেন। মামলাটার জন্য প্রচুর খেটে তথ্য প্রমাণ জোগাড় করেছেন।দু বছর আগের কল রেকর্ড,পিসির সময় একটা রক্তমাখা রুমাল পেয়েছেন।আরও অনেক কিছু সিজ করেছেন।সঠিক দিশায় আছে এই তদন্ত।”
মামলার সরকারি আইনজীবী সুদীপ সরকার জানান, অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন একটি রক্তমাখা রুমাল পাওয়া গিয়েছে ঘটনাস্থলের কাছে। ইফফাত পারভিনের দেখানো জায়গা থেকে। এছাড়া বেশ কিছু জিনিস বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।সিআইডি ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করেছিল আদালতে অভিযুক্তদের আঙুলের ছাপ নিয়ে তা মিলিয়ে দেখা হবে। সিসিটিভি তে ইফফাত পারভিনকে হেঁটে যেতে দেখা গিয়েছে।সেটাও দেখা হবে। ওই দিন কোন্নগরে এসেছিলেন ইফফাত। তদন্ত এখনো চলছে।