হুগলি: সবুজ দ্বীপ থেকে লাগাতার চুরি একের পর এক গাছ। কোথায় যাচ্ছে তা অজানা। এবার দ্বীপের গাছ লাগাতার গাছ চুরি নিয়ে সরব হলেন খোদ শাসক দলের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। বলাগড়ের সবুজ দ্বীপে গড়ে উঠেছে ইকো ট্যুরিজম পার্ক। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই পার্ক নিয়ে খুব আশাবাদী। সবুজদ্বীপকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠবে পর্যটন। কিন্তু দেখা গেল পার্ক তৈরির কাজ চলছে আর বড়-বড় গাছ কেটে চুরি হয়ে যাচ্ছে। এক কথায় পার্ক তৈরির নামে সবুজ ধ্বংস হচ্ছে।
শনিবার এই খবর পেয়ে বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী সবুজ দ্বীপে যান পুলিশ ও সরকারি আধিকারিকদের নিয়ে। বিধায়ক বলেন, “বলাগড় সবুজ দ্বীপ মমতা ব্যানার্জীর প্রকল্প। কোটি-কোটি টাকা ব্যায় করেছেন এই দ্বীপের উন্নয়নের জন্য। পর্যটন ব্যবস্থা যাতে উন্নত হয় তার জন্য বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করা হয়েছে। সবুজ দ্বীপে পর্যটনের জন্য ইতিমধ্যেই নির্মাণ কাজ চলছে। সেই সঙ্গে সবুজ দ্বীপের ‘সবুজ’ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দ্বীপের অনেকাংশে গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। চারিদিকে বৃক্ষের শ্মশানে পরিণত হয়েছে। বড় গাছ গুড়ি কয়েকটা মাত্র দাঁড়িয়ে আছে। হাজার হাজার গাছ শুয়ে পড়ে আছে। কত গাছ পাচার হয়ে গেছে তার কোনও গুনতি নেই। এত বড় একটা দ্বীপে কে রক্ষণাবেক্ষণ করেন আমরা বুঝতে পারছি না। বারবার খবর পাচ্ছিলাম দ্বীপে গাছ কাটা হচ্ছে। স্বচক্ষে দেখার জন্য এসেছি। আমার সঙ্গে বলাগর থানা ও বিডিও অফিসের আধিকারিকরা এসেছেন। তারাও এ দৃশ্য দেখেছেন। সবুজ দীপ সবুজ রাখতে দিচ্ছে না। যতদূর দেখা যায় শুধু গাছের মৃতদেহ পড়ে আছে। সেই কারণে মাননীয় বন মন্ত্রীকে এবং পর্যটন মন্ত্রীকে বলছি আপনারা একটু পদক্ষেপ করুন। এই দ্বীপকে বাঁচাতে হলে আপনাদের পদক্ষেপ করতে হবে। এই চোরদের দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের বার করতে হবে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলছি এই অঞ্চলে প্রভাবশালী লোক যুক্ত না থাকলে দিনের পর দিন এইরকম গাছ কাটা হতে পারে না।”
এখানেই শেষ নয়। পাশাপাশি তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের কাছে অনুরোধ জানান, তারা খোঁজ নিন দিদির এই স্বপ্নের দ্বীপটাকে বাঁচান। এখানে হাজার হাজার গাছ ওষুধ দিয়ে মেরে ফেলা হয়েছে ।কঙ্কালসার গাছ দাঁড়িয়ে আছে। যারা বৃক্ষপ্রেমী মানুষ পরিবেশপ্রেমী মানুষ। প্রত্যেকে বুঝতে পারবেন কীভাবে দ্বীপটাকে শ্মশান বানানো হচ্ছে । এগুলো সহ্য করা যাবে না। দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা নাহলে যে কটা গাছ আছে সেগুলো কেউ নষ্ট করে দেওয়া হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছেও আমি আবেদন জানাচ্ছি অত্যন্ত দ্রুত কার্যকরী ব্যবস্থা নিন। পাহাড়ার ব্যবস্থা করুন না হলে এই গাছ রক্ষা করা যাবে না। গত বছরেও সবুজের সমারোহ ছিল ।কিন্তু এবারে পুরো নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে।”
এদিকে, খোদ শাসকদলের বিধায়ক এই ধরনের অভিযোগ করায় স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে দ্বীপের নজরদারি নিয়ে। পুলিশ-প্রশাসন বনদফতর তারা কী করছে এই নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
অন্য়দিকে বিষয়টি দৃষ্টি এড়ায়নি বিরোধীদেরও। কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপি হুগলি সাংগঠনিক জেলার নেতা সুরেশ সাউ বলেন, “বলাগড়ে মাফিয়া রাজ চলছে। মাটি-বালি দিনে দুপুরে চুরি হয়ে যাচ্ছে। আর এখন গাছ চুরির অভিযোগ করছেন খোদ তৃনমূল বিধায়ক। বিধায়কের দলের নেত্রী বলেছিলেন ভাগ করে খেতে সেই ভাগে হয়তো কম পড়েছে। যে টাকা সবুজদ্বীপে পার্ক তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে সেই টাকাও চুরি হচ্ছে। না হলে আগে এক ঠিকাদার কাজ করছিল তাকে সরিয়ে আবার নতুন ঠিকার দেওয়া হল কেন?”
আরও পড়ুন: Bagtui Massacre: টানা আট ঘণ্টা ম্যারাথন জেরা আনারুলকে, সোমবার সিবিআই ক্যাম্পে তলব মিহিলাল শেখকে