হুগলি ও বাঁকুড়া: দুর্যোগের পর দুর্যোগ। প্রথমে বৃষ্টিতে ধান বরবাদ হয়েছে। এখন জমিতেই পচে যাচ্ছে আলুর (Potato) চারা। ফলন না হলে মহাজনের ঋণ শোধ করবেন কী করে ভেবে পাচ্ছেন না হুগলির কৃষকরা। অন্যদিকে, বাঁকুড়ার ছবিটাও পৃথক নয়। সেখানেও ছবিটা একই। মাঠেই পচে গিয়েছে চারা।
হুগলিতে ১০ শতাংশ ধান এখনও জমিতে পড়ে। তার মাঝে বৃষ্টির জেরে মাথায় বাজ পড়েছে ধানচাষিদের। এবছর ধান চাষের শুরু থেকেই নিম্নচাপের জেরে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন চাষিরা। আলু (Potato) চাষের সময়ও দুর্যোগ চলছে। বৃষ্টির জেরে বীজ বপনের কাজ ১৫ দিন পিছিয়ে দিতে হয়েছে।
স্থানীয় এক কৃষকের কথায়, “চাষ কী করব! আগেই তো সব গাছ মরে গিয়েছে। মহাজনের কাছে এত এত ধার! জানি না কীভাবে শোধ দেব। না খেতে পেয়ে মরতে হবে।” অন্য আরেক কৃষক বলেছেন, “চাষ কী করব! বীজের দাম, সারের দাম এত বেশি যে আগুন ছুটছে যেন! তারমধ্যে বৃষ্টি। কোথায় যাব আমরা। ফলন না হলে ধার শোধ হবে না। ”
যেসব জমিতে আলু লাগানো হয়েছিল সেই সব জমিও কাদা হয়ে গিয়েছে তাই নতুন করে বীজ বপন করতে হচ্ছে। তাতে আলুর ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলন কম হলে চাহিদা অনুযায়ী জোগান মিলবে না। এদিকে, বেশিরভাগ কৃষক মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেন। ফলন না হলে ঋণ শোধের টাকাও উঠবে না। এই অবস্থায় কী করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না তাঁরা।
একই ছবি বাঁকুড়ায়। একদিকে দুর্যোগ অন্যদিকে খারাপ মানের আলু বীজ। জোড়া ফলায় ঘোর বিপাকে বাঁকুড়ার জয়পুরের ত্রিবঙ্ক গ্রামের আলুচাষিরা। লক্ষ লক্ষ টাকার চারা গাছ পচে যাওয়ায় মাথায় বাজ পড়েছে কৃষকদের।
পেপসি কোম্পানির আলু বীজের ৫০ কেজি বস্তার বাজার মূল্য ১৮০০ টাকা। প্রতিবছর এই কোম্পানির বীজে খুব ভালো ফলন হয়। দাম বেশি হলেও তাই এবছরও এই বীজের উপরেই ভরসা করেছিলেন বাঁকুড়ার জয়পুরের ত্রিবঙ্ক গ্রামের আলুচাষিরা। কিন্তু এই বছর উল্টো ফল হয়েছে । বেশিরভাগ বীজেই পচন ধরতে শুরু করেছে। খারাপ মানের বীজ হওয়াতেই এই কাণ্ড বলে অভিযোগ কৃষকদের।
এদিকে, মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন বেশিরভাগ কৃষক। ফলন ভালো না হলে ঋণ মেটাবেন কী করে? চিন্তায় ঘুম উড়েছে কৃষকদের। তারউপরে রয়েছে কালোবাজারি। সব মিলিয়ে শিরে সংক্রান্তি চাষিদের। আচমকাই দাম বেড়ে গিয়েছে সারেরও। কৃষকদের অভিযোগ, তাঁদের চাহিদার সুযোগ নিয়ে সারের দাম হঠাত্ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বস্তা সারের দাম ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ।
পরিস্থিতি যেদিকে তাতে আলু চাষ থেকে সরে যাওয়ার আশঙ্কা অর্ধেক চাষির। রাসায়নিক সারের দাম বস্তা পিছু প্রায় ৪০০ টাকা বেড়ে গিয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির প্রিন্ট রয়েছে বস্তার গায়ে। সেই মূল্য দিয়েও সুরাহা হচ্ছে না। আরও বেশি দাম দিয়ে ব্ল্যাকে ৩০০-৪০০ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে রাসায়নিক সার। নাজেহাল চাষিরা তাই সরে যেতে চাইছেন আলু চাষ থেকে।
বলা যায়, কৃষকদের মাথায় কালো মেঘ। তাঁরা জানাচ্ছেন, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে রাসায়নিক সারের দাম। প্রিন্ট প্রাইসে রাসায়নিক সার পাওয়া যাচ্ছে না। দাম যা লেখা থাকে তা থেকে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বেশি মূল্যে রাসায়নিক সার কিনতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। যার ফলে চাষিরা আলু চাষ কমিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন তাঁরা। এখনও মাঠ থেকে কাটা ধান বাড়িতে ওঠেনি। ধান বাড়িতে তুলে আলু বসানোর তোড়জোড় শুরু করেন কৃষকরা। কিন্তু তার মধ্যেই ধাক্কা। কোনও চাষির নিজের জমি রয়েছে, তো কেউ ভাগচাষি। আর এমতাবস্থায় যদি রাসায়নিক সারের দাম বেশি হয় তাহলে তাঁরা আর চাষ করতে পারবেন না বলে জানাচ্ছেন। যার ফলে উৎপাদিত আলুর দাম আরও বাড়তে পারে। কিন্তু, নিম্নচাপের জেরে কেবল হাহুতাশই এখন সঙ্গী চাষিদের।
আরও পড়ুন: Tathagata Roy: বিজেপিতে রয়েছে পিকের মাইনে দেওয়া কর্মী! তাই…, ফের তথাগতর বোমা