হুগলি: প্রায় দেড় বছর হল বন্ধ স্কুল। কোভিড বিধি মেনে অবশেষে যখন বা স্কুলের ঘণ্টা বাজলই, তখন, বাদ সাধল অন্য জিনিস! তা হল স্কুল ইউনিফর্ম। দেড় বছর ধরে স্কুল যাওয়া নেই। ফলে, ইউনিফর্মের প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। স্কুলের জুতো-মোজায় জমেছে ধুলো। আলমারির এককোণেই পড়েছিল স্কুল ইউনিফর্ম। দেড় বছর পরে সেই জামা আর গায়ে আঁটছে না পড়ুয়াদের। ফলে স্কুল যাওয়ার প্রথম দিনেই সমস্যায় পড়েছে তারা।
দেড়বছর মানে প্রায় একটা ক্লাস পেরিয়ে আরেকটা ক্লাসে যাওয়া। সাধারণত বাড়ন্ত বাচ্চাদের বছর বছরই নতুন ইউনিফর্ম লাগে। কারণ, শারীরিক বৃদ্ধি। বিশেষ করে ৫-১২ বছর পর্যন্ত যেকোনও শিশুরই সর্বাধিক শারীরিকবৃদ্ধি হয় ও তা দ্রুত গতিতে হয়। তারপরে যে বৃদ্ধি ঘটে তা ধীরলয়ের। কিন্তু, এই সাতবছর, যেকোনও শিশুই চোখের পলকে হু হু করে যেন বড় হয়ে যায়।
এদিকে, মহামারীর জেরে, স্কুল যাওয়া বন্ধ ছিল পড়ুয়াদের। ফলে, তাদের বৃদ্ধি হলেও স্কুল ইউনিফর্মের বৃদ্ধি হয়নি। কেনা হয়নি নতুন ইউনিফর্মও। আর এতেই হয়েছে সমস্যা। কখনও গায়ে আঁটছে না শার্ট। কখনও বা পায়ে হচ্ছে না জুতো। ফলে, ভাল ইউনিফর্মও বাতিল করে দিতে হচ্ছে। এদিকে, স্কুল বন্ধ থাকায় ইউনিফর্মের জোগানও ঠিকঠাক পড়ুয়াদের দেওয়া সম্ভব হয়নি। অভিভাবকদের হাতে প্রচুর অর্থও নেই যে তাঁরা আচমকাই নতুন এক সেট ইউনিফর্ম কিনে ছেলেমেয়েদের হাতে তুলে দেবেন। এমনকী, টাকা দিলেও যে স্কুল ড্রেস সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যাবে এমন কোনও নিশ্চয়তাও নেই, অন্তত এমনটাই দাবি অভিভাবকদের। ফলে সমস্যায় পড়ছে ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোই। স্কুলে যাওয়ার আনন্দেই ছোট্ট মুখগুলোয় নেমে এসেছে, মনখারাপ।
ক্লাস নাইনের ছাত্র সুমন রুইদাসের কথায়, “আমাদের অনলাইন ক্লাস ছিল। বুঝতে পারিনি জামাকাপড় ছোট হয়ে গিয়েছে। আজ পরতে গিয়ে দেখি গায়ে হচ্ছে না। এখন স্কুল যদি কিছু সাহায্য করে তবেই আমাদের সুবিধা। নয়ত, আর স্কুল যেতে পারব না।” অন্য আরেক পড়ুয়া বলছে, “টিউশন গিয়েছি। খেলাধুলো করেছি। অনলাইনে ক্লাস করেছি। স্কুল ড্রেসের কথা ভাবিনি। অন্য আরেক সেট জামাও নেই, যে স্কুলে পরে যাব। এখন গায়ে দিতে গিয়ে দেখছি জামা ছোট। সমস্যা তো হচ্ছেই।”
বাচ্চাদের ইউনিফর্মের সমস্যায় মাথায় হাত পড়েছে অভিভাবকদেরও। এক পড়ুয়ার বাবার কথায়, “আমার ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে। দুই বছর ধরে ছেলে স্কুলে যায়নি। এতদিন পর স্কুল খুলছে। সে খুবই আনন্দের ব্যাপার। কিন্তু, স্কুলের ইউনিফর্ম ওর গায়ে হচ্ছে না। সরকারের কাছে অনুরোধ আপনারা কোনও পদক্ষেপ করুন। ইউনিফর্ম দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।”
কিন্তু, সত্যিই কি স্কুলে স্কুলে এভাবে ইউনিফর্ম দেওয়া সম্ভব, তাও প্রত্যেক পড়ুয়াকে? কালীদাসী মিত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত রায় চৌধুরীর কথায়, “বাচ্চাদের আগে একবার স্কুল থেকেই বিনামূল্যে জুতো ও ইউনিফর্ম দেওয়া হয়েছে। সবটাই সরকারি টাকায়। কিন্তু সে তো অনেক আগে। কোভিডকালে এমন কোনও কিছুই নির্দেশ আমাদের দেওয়া হয়নি। এটা ঠিকই যে বাচ্চাদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্যই ইউনিফর্মের সমস্যা। অনেক বাচ্চার পরিবারই স্কুল ইউনিফর্ম কিনে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে না। তাদের জন্য অন্তত অবশ্যই সরকারিভাবে চিন্তা করা উচিত। এই সমস্যার আশু সমাধানও করা উচিত।”
প্রসঙ্গত, করোনার বিষয়ে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের সতর্ক করার দায়িত্বও স্কুল-কলেজগুলিকেই দিয়েছে রাজ্য। করোনা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। কী করা যাবে এবং কী করা যাবে না সে বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। ‘ডু অ্যান্ড ডোন্টস’-এরও একটি তালিকা রয়েছে বিকাশ ভবনের স্কুল রিওপেন বুকলেটে। সেখানে বলা হয়েছে, জ্বর হলে কোনও অভিভাবক যেন পড়ুয়াকে স্কুলে না পাঠান, কলেজ পড়ুয়ারাও যেন কলেজে না যান। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্তে খুশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা। তবে অতিমারির কোপ থেকে কী ভাবে পড়ুয়াদের দূরে রাখা যাবে সে বিষয়টিও তাঁদের নজরে রয়েছে।
আরও পড়ুন: College Reopening: অধ্যক্ষের ড্রয়ারে ‘শোভা’ পাচ্ছে থার্মাল গান, কলেজে চলছে ঝাড়পোছ, বাইরে পড়ুয়ারা!