পাণ্ডুয়া: প্রতীক্ষার প্রহর গুনছিলেন স্বামী-স্ত্রী। আর কয়েকমাস পর তাঁদের পরিবারে আসবে নতুন অতিথি। প্রথমবার বাবা-মা হওয়ার স্বাদ পাবেন তাঁরা। এই আনন্দে মশগুল ছিলেন। কিন্তু, সব বদলে গেল এক লহমায়। বাবা ডাক শোনা হল না পাণ্ডুয়ার আশিস বাউল দাসের। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ অন্তঃসত্ত্বা অপর্ণা বাউল দাস। কয়েকমাস পর তাঁদের সন্তান পৃথিবীর আলো দেখবে। কিন্তু, বাবার মুখ কোনওদিন দেখতে পাবে না। বারবার সেই কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন।
ঘটনাটি ঘটেছিল গত বৃহস্পতিবার। পাণ্ডুয়ার বছর ছাব্বিশের আশিস বিষহরিতলার মেলা দেখে বাইকে বাড়ি ফিরছিলেন আশিস। তাঁর বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে গমুকপাটি এলাকায় মনসা পুজোর মাইক বাজিয়ে রাস্তায় নাচানাচি করছিল অনেকে। রাস্তা ছাড়ার জন্য বলেছিলেন আশিস। অভিযোগ, আশিসকে বাইক থেকে কলার ধরে টেনে নামিয়ে মারধর করা হয়। রাস্তায় ফেলে বুকে লাথি মারা হয় বলেও অভিযোগ। তিনদিন পর মৃত্যু হয় আশিসের। এই ঘটনায় ২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এভাবে স্বামীকে হারিয়ে শোকে পাথর অপর্ণা। কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। বারবার আগত সন্তানের কথা বলছেন। দোষীদের চরম শাস্তি চাইলেন। কান্না চেপে অপর্ণা বলেন, “আমি চাই আমার স্বামীকে যারা খুন করেছে, তারা যেন শাস্তি পায়। তাদের যেন ফাঁসি হয়। আমার পেটে যে সন্তান রয়েছে, সে তো কোনও অন্যায় করেনি। সে সারাজীবনেও বাবাকে দেখতে পাবে না। আমি কোনও অন্যায় করিনি, আমি আমার স্বামীকে কোনওদিন আর পাব না। আমরা দু’জনে কী অন্যায় করেছি যে আমাদের সঙ্গে এমন হল। আমার স্বামী কোনও ভুল করেনি। শুধু যাওয়ার জন্য রাস্তা থেকে একটু সরতে বলেছিল। এমন মেরেছে যে মুখ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে যায়। পরিবারের লোকজন বলতে গেলে, তাঁদেরও মেরেছে।”
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অপর্ণা
অভিযুক্তরা ছাড়া পেলে কী হবে, সেই ভয়ও তাড়া করছে অপর্ণাকে। তিনি বলেন, “দোষীরা যেন কোনওভাবে ছাড়া না পায়। ছাড়া পেলে অন্য কাউকে আবার মারতে পারে। আমাদেরও ওই রাস্তা দিয়ে যেতে হবে।” সেটা ভেবেই ফের শিউরে উঠলেন তিনি। আশিসের পরিবারের অন্যরাও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।